নতুন বছরের আগমনেও জমেনি ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও কার্ড ব্যবসা
আর্থিক সংকটের সঙ্গে দাম বেড়ে যাওয়ায় নববর্ষের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও কার্ড বিক্রি গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন কাগজের দাম গত এক বছরে বেড়েছে দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে ডলার সংকটে আমদানি কম হওয়ায় ভালো মানের পর্যাপ্ত কাগজের সংকট রয়েছে।
নতুন বছরকে বরণ করে নিতে অনেকে বছরের প্রথম দিনে শুভাকাঙ্ক্ষীদের হাতে ক্যালেন্ডার-ডায়েরি পৌঁছে দেন। ব্যাংকসহ বিভিন্ন সেবাধর্মী ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে নতুন বছর উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের ক্যালেন্ডার উপহার দেওয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকেই।
তবে এবার বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, বিভিন্ন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করার প্রভাব এই খাতের ব্যবসায় পড়েছে।
অনেকে একই পৃষ্ঠায় দুটি তারিখ দিয়ে ছোট ডায়েরি বানাচ্ছে। আবার উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট দিয়ে ক্যালেন্ডার বানাচ্ছে ৩ পাতার।
শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকার আজাদ প্রডাক্টস, আইডিয়াল প্রডাক্টস, স্কাই প্রডাক্টস, নিউ কার্টুন প্রডাক্টস, এবি কার্ড সেন্টারসহ আরও বেশ কয়েকটি ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি তৈরির প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে । তারা বলছে তাদের বিক্রি অর্ধেক কমেছে।
মান ভেদে ক্যালেন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ১০০ টাকায়। আর ডায়েরি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায়
স্কাই প্রডাক্টসের বিক্রয় কর্মী মো. ইসমাইল বলেন, গত বছর একটি প্রতিষ্ঠান ৬ পাতার ২২ হাজার ক্যালেন্ডার নিয়েছিল। এবার তারা ৩ পাতার ১০ হাজার ক্যালেন্ডার নিয়েছে।
প্লাজমা রিসার্চ সেন্টারের মার্কেটিং অফিসার সঞ্জয় মন্ডল এসেছেন অর্ডার দেওয়া ক্যালেন্ডার নিতে। পল্টন এলাকার নিউ কার্টন প্রডাক্টস থেকে ২০০ ক্যালেন্ডার ছাপিয়ে নিয়েছেন তারা। সঞ্জয় মন্ডল বলেন, গত বছর ক্যালেন্ডারের সঙ্গে তারা ডায়েরিও ছাপিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তারা ডায়েরি তৈরি করেননি।
আইডিয়াল প্রডাক্টসের সিইও মো. নুরুজ্জামান বলেন, গত বছর ৩ থেকে ৪ লাখ ক্যালেন্ডার বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হয়েছে দুই লাখ। আর গত বছর ডায়েরি বিক্রি হয়েছিল চার লাখ ৯৫ হাজার। এবার এ পর্যন্ত ২০ হাজার ডায়েরি বিক্রি হয়েছে।
আজাদ প্রডাক্টসের জিএম মোস্তফা কামাল বলেন, ছয় পাতার ক্যালেন্ডারের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা। অনেকে ব্যয় কমানোর জন্য এখন ছয় পৃষ্ঠার ক্যালেন্ডার না করিয়ে তিন পাতার ক্যালেন্ডার করছে।
তিনি বলেন, 'ডায়েরি সাধারণত দেশি হোয়াইট প্রিন্ট কাগজ দিয়ে বানানো হয়। দেশি হোয়াইট প্রিন্ট কাগজের দাম গত বছর ছিল ৯৫ হাজার টাকা। এখন সেটা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। তবে আমরা সেই তুলনায় ডায়েরির দাম বাড়াইনি। আমাদের লাভ কম হচ্ছে এখন। তিনি বলেন, প্রতিটি ডায়েরির দাম এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরেল ইসলাম বলেন, 'দেশে ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও নোটবুক , বিয়ের কার্ডসহ বিভিন্ন কার্ডের বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এই ব্যবসায় বাজারে ক্যালেন্ডারের ভাগ ৩০ শতাংশ ও ডায়েরি ৩০ শতাংশ। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের বিক্রি অর্ধেক কম। একদিকে কাগজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ, অন্যদিকে বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকে। আমরা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছি।'
তিনি বলেন, সাধারণত ব্যাংকগুলো ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড দিত এক সময়। সেটাও এখন কমে গেছে। ডিজিটাল সুবিধা থাকায় ম্যাসেজের মাধ্যমেই নতুন বছরের শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছে। তাই নতুন বছরে কার্ড বিক্রি একেবারেরই কমে গেছে। তিনি আরও জানান, ডলার সংকটের কারণে কাগজসহ আর্ট পেপারের আমদানি কমে গেছে। আর তাই এ খাতে সংকট তৈরি হয়েছে।