মালদ্বীপে এক্সচেঞ্জ হাউজ খুলতে যাচ্ছে সোনালী ব্যাংক
মালদ্বীপে ১.৮০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধার্থে দেশটির রাজধানী মালেতে একটি এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোনালী ব্যাংক।
এরইমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলার অনুমতি পেতে আবেদন করেছে ব্যাংকটি। অনুমোদন পেলে দ্রুত এক্সচেঞ্জ হাউজ খুলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে চায় সোনালী ব্যাংক।
এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলার বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে সেটি অনুমোদিত হয়। এক্সচেঞ্জ হাউজ খোলা হলে সেটি অর্থনৈতিকভাবে কার্যকরী হবে কিনা তা যাচাই করতে ব্যাংক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মালদ্বীপে পাঠানো হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়।
প্রতিনিধি দল দেশে ফিরে সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও আফজাল করিমের কাছে রিপোর্ট উপস্থাপন করবে- এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সভায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক চিঠিতে সোনালী ব্যাংক লিখেছে, গত ৩ অর্থবছর ধরে রেমিট্যান্স পাঠানো দেশগুলোর তালিকায় মালদ্বীপ ২৬তম অবস্থানে থাকলেও রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক কম। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ কম থাকায় হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স আসে।
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার কারণ উল্লেখ করে সেখানে বলা হয়, মালদ্বীপে ডলারের সংকট থাকায় সেখানকার এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো মালদ্বীপের স্থানীয় মুদ্রা নেয় না।
বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স পাঠাতে হলে কার্ব মার্কেট থেকে অন্তত ১৫% বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনে জমা দিতে হয়। এতে খরচ অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন প্রবাসীরা।
এছাড়া দেশটির প্রায় ১২০০ দ্বীপে প্রবাসীরা ছড়িয়ে থাকায় এক্সচেঞ্জ হাউজে গিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাতে সমস্যায় পড়তে হয়।
সোনালী ব্যাংক প্রবাসী অধ্যুষিত দ্বীপগুলোতে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, এক্সচেঞ্জ হাউজে অ্যাসিস্টেন্ট জেনারেল ম্যানেজার বা সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদমর্যাদার একজন হোম বেইজড প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে।
সেইসঙ্গে সহকারী হিসেবে একজন লোকাল বেইজড কর্মকর্তা অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাবে। কর্মকর্তারা বিভিন্ন দ্বীপে নিয়োগ দেওয়া এজেন্টদের সমন্বয় করবেন।
সবমিলিয়ে এক্সচেঞ্জ হাউজটি পরিচালনায় বছরে এক থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হতে পারে।
সোনালী ব্যাংকের ফরেইন রেমিট্যান্স ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন (এফআরএমডি) এর কো-অর্ডিনেটর ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মুন্সী জাহিদুর রশীদ টিবিএসকে বলেন, "আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে এক্সচেঞ্জ হাউজ অর্থনৈতিকভাবে কার্যকরী কিনা তা চেক করতে আগামী মাসে প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা করেছি। তাদের দেওয়া রিপোর্ট দেখা হবে।"
"এছাড়া সংশ্লিষ্ট দেশ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনও প্রয়োজন। যত দ্রুত সম্ভব এক্সচেঞ্জ হাউজ চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, নতুন এক্সচেঞ্জ হাউজ করা হলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমবে এবং দেশটি থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা বাড়বে," যোগ করেন তিনি।
মালদ্বীপে এনবিএল মালদিভস নামে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের এক্সচেঞ্জ হাউজটি ২০১১ সাল থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এটিই দ্বীপ দেশটিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউজ। এছাড়া প্রবাসীরা বিভিন্ন বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠান।
সোনালী ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মালদ্বীপ থেকে ৪৬.০৩ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, এরমধ্যে ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২.০১ মিলিয়ন।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২১.৫৯ মিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।