আদানি বনাম হিন্ডেনবার্গের লড়াই: সহজ পাঠ
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক-ভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের সঙ্গে আদানি গ্রুপের দ্বন্দ্ব এই মুহূর্তে এশিয়ার পুঁজিবাজারের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর খবর। আদানি গ্রুপের শেয়ারমূল্যে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ এনেছে হিন্ডেনবার্গ তাদের প্রতিবেদনে। অন্যদিকে অভিযোগ খণ্ডনে বিশাল ব্যাখ্যা দিয়েছে আদানি গ্রুপ। এ দুই নথির কলেবরই বিশাল, যা ৫০ হাজার শব্দেরও বেশি। তবে সুদীর্ঘ এসব নথিকে এবং সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহকেই আরো সরলভাবে বলার প্রচেষ্টা এ প্রতিবেদন। ফিনশটস ইন অবলম্বনে।
শর্ট পজিশন কী, শর্ট সেলিং ব্যবসার ধরনই বা কী
বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি কোম্পানি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, আর তাদের ব্যবসা হলো 'শর্ট সেল'। এখন পুঁজিবাজারের ভাষায় শর্ট সেলিং হলো একটি কোম্পানির শেয়ারের বিরুদ্ধে বাজি লাগানোরই কৌশল।
যেমন ধরুন আপনি নিজ এলাকার স্টক ব্রোকার এজেন্সির থেকে একটি কোম্পানির শেয়ার কিনলেন, এরপর সেগুলো বিক্রি করলেন বর্তমান বাজারমুল্যেই, বা ১০০টাকায়। অর্থাৎ, যে দামে কিনেছেন সে দামেই বিক্রি করলেন। কিন্তু, ভবিষ্যতে যদি শেয়ারের দাম কমে ৮০ টাকা হয়, তাহলে সরাসরি পুঁজিবাজার থেকে সেটা কিনে বিক্রি করে দিলেন এলাকার ওই ব্রোকারের কাছে। এতে আপনার সাকুল্যে লাভ হলো শেয়ারপ্রতি ২০ টাকা করে।
হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের শেয়ারের শর্ট পজিশন প্রকাশ করেই সাম্প্রতিক ঘটনার সূত্রপাত করেছে। পুঁজিবাজারে শর্ট পজিশন হলো- স্বল্পমেয়াদে কোনো কোম্পানির শেয়ার কতখানি কমবে তা নির্ধারণের কৌশল। সাধারণত আগামী কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের জন্য এটা নিরূপণ করা হয়।
এর আওতায় বিনিয়োগকারী আগে থেকেই অনুমান করে ফেলেন যেকোনো নির্দিষ্ট স্টকের দাম কমবে। আর সেটা কাজে লাগিয়েই মুনাফা করেন। বিশ্লেষণ কাজে লাগিয়ে এই ধরনের বিনিয়োগকারীরা আন্দাজ করেন; বুঝে যান যে আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যেই সেই শেয়ারের দামে পতনের সম্ভাবনা রয়েছে।
হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের শেয়ারে বাজি ধরার পাশাপাশি এনিয়ে বিস্তৃত প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। যেখানে কেন তারা এই শেয়ার 'শর্ট সেল' করছে তুলে ধরেছে তার ব্যাখ্যা। উদ্দেশ্য, যাতে অন্য বিনিয়োগকারীরাও তাদের সাথে যোগ দেয় এবং আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্যে আরো ধস নামে।
অতীতে, যুক্তরাষ্ট্রে নিকোলা নামের ওই বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিরুদ্ধেও একই অবস্থান নিয়েছিল হিন্ডেনবার্গ। ২০২০ সালে নিকোলার রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই সংস্থার আসল ছবি উঠে আসে। কার্যত বিনা ব্যবসাতেই হাজার হাজার কোটি টাকার শেয়ার দর দাঁড় করিয়েছিল নিকোলা। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে তা জানাজানি হতেই বিপুল পতন হয় নিকোলার শেয়ারে।
২০১৯ সালের জুনে ইরোস ইন্টারন্যাশনাল নামক বলিউডের একটি বৃহৎ প্রোডাকশন হাউজের বিরুদ্ধেও তারা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে হিন্ডেনবার্গের প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসনের বিরুদ্ধে মামলা করে ইরোস। নাথান তাতে দমে যাননি, উল্টো ভাড়া করেন বেসরকারি তদন্তকারীদের। তদন্তে উঠে আসে আরো অনিয়ম, যেমন ইরোসের প্রধান নির্বাহীর এক আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠানকে ১৫৩ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘটনা। এরপর থেকে কোম্পানির বাজারমূল্য আরো ৯০ শতাংশ কমেছে। এক কথায়, এই শর্ট পজিশনের কৌশলে সিদ্ধহস্ত হিন্ডেনবার্গ এবং তারা প্রমাণ ছাড়া এধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, অতীতে এমন নজির নেই।
হিন্ডেনবার্গ তাদের সাম্প্রতিক টার্গেট আদানি গ্রুপের বিষয়ে যে বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে হিসাবরক্ষণ ও স্টক ম্যানিপুলেশনের বেশকিছু অভিযোগ সবিস্তারে তুলে ধরেছে তারা।
এদিকে আদানি গ্রুপ হিন্ডেনবার্গের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
গৌতম আদানি তার শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদনকে সার্বিকঅর্থে ভারতের অর্থনীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ বলেছেন। তিনি বলেন, 'এটা নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা নয়, এটা ভারতের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মান, অর্থনৈতিক বিকাশের ধারা ও উচ্চকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত আক্রমণ'।
এই প্রেক্ষাপটে জেনে নেওয়া যাক আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে আনীত প্রধান অভিযোগগুলো এবং তার কী পাল্টা যুক্তি দিয়েছে শিল্পগোষ্ঠীটি-
অভিযোগ ১: হিন্ডেনবার্গ বলেছে, গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের কয়েকজন অতীতে আইনি ঝামেলায় জড়ালেও, তাদের পরিচালনা পর্ষদে রাখা হয়েছে। এজন্য কয়েকটি উদাহরণও দেয় তারা। যেমন ভারতের রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের (ডিআরই) একটি তদন্তের কথা তারা উল্লেখ করেছে। ঐ তদন্তে আদানির শ্যালক সমির ভোরা হিরে বাণিজ্যের এক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিলেন বলে জানানো হয়।
আদানি এসব অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, ডিআরআই এর নির্দেশ উচ্চতর কর্তৃপক্ষ- সিইএসটিএটি গ্রহণ করেনি। এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করা হলে- আদালত সেটিও খারিজ করে দেন। আদানি গোষ্ঠীর অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনা হিন্ডেনবার্গের অভিযোগগুলো ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও আদালত একইভাবে খারিজ করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগ ২: পরের অভিযোগটিও গৌতম আদানির কাছের মানুষদের নিয়েই। হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ, গৌতমের ভাই বিনোদ আদানির মালিকানাধীন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের শেয়ার লেনদেন করেছে, কিন্তু তারা এসব লেনদেনের বৈশিষ্ট্য গোপন রাখে। উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের বিধিমালা অনুসারে, নিবন্ধিত কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ লেনদেন করলে তা বাজারকে জানানোর আইনি বাধ্যকতা রয়েছে।
সুতরাং, এ ধরনের অভিযোগ বেশ গুরুতরই বলতে হয়। হিন্ডেনবার্গ আরো বলেছে যে,
১. বিনোদ আদানি এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে কৃত্রিমভাবে এগুলোর বাজারমূল্য বাড়িয়ে দেন;
২. তিনি বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির টাকা অফশোর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে স্থানান্তর করেছেন, যাতে সাময়িকভাবে তাদের আর্থিক অবস্থান জোরালো থাকে।
হিন্ডেনবার্গের প্রতিবেদন বলছে, এতকিছু যিনি করেছেন, সেই বিনোদ আদানির মালিকানার অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কোনো কার্যক্রম নেই। নেই কর্মী, পৃথক ঠিকানা বা ফোন নাম্বার। অনলাইন উপস্থিতিও একেবারে ন্যূনতম। অর্থাৎ, এগুলোকে জাল বা শেল কোম্পানি বলছে তারা, যা শুধু কর্পোরেট জালিয়াতির জন্যই তৈরি করা হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে, 'আদানি গ্রুপের বাজার নিবন্ধিত কোনো কোম্পানিতে বা তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক পদ নেই বিনোদ আদানির। তাদের কোম্পানিগুলোর দৈনন্দিন পরিচালনাতে তার কোনো ভূমিকা নেই। ফলে আদানি গ্রুপের পোর্টফলিওর সাথে এ অভিযোগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এজন্য বিনোদ আদানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও লেনদেন নিয়ে আপনাদের এই অভিযোগের বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারব না'।
এক কথায়, আদানি গ্রুপ স্বীকার করেছে, বিনোদ আদানি গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কেউ নন। এবং সেকারণে তার লেনদেন সম্পর্কে জানানোর কোনো আইনি বাধ্যকতাও নেই তাদের।
আদানি গ্রুপ জোর দিয়ে বলেছে, 'আদানি গ্রুপের পোর্টফলিও'র অধীন, কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে সকল লেনদেন ভারতীয় আইন মেনে প্রকাশ করে'।
অভিযোগ ৩: গৌতম আদানির এক বন্ধুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আদিকর্প এন্টারপ্রাইজেস। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর নির্দিষ্ট এক লেনদেনকে চিহ্নিত করেছে হিন্ডেনবার্গ। এই প্রতিষ্ঠানের মুনাফা মাত্র ৯৭ হাজার ডলার হলেও, আদানি গ্রুপের চার কোম্পানি আদিকর্পকে ৮৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়। কোম্পানির মুনাফার বিবেচনায় এই বিপুল ঋণকে খুবই সন্দেহজনক বলেছে হিন্ডেনবার্গ। এর সাথে তারা আরো জানায়, এই ঋণের ৯৮ শতাংশ অর্থই আবার আদানি পাওয়ার কোম্পানিকে দিয়েছে আদিকর্প। এটাও একটা রহস্যজনক ঘটনা। হিন্ডেনবার্গের ধারণা, আদানি গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আদানি পাওয়ারে তহবিল যোগাতেই মাঝখানে আদিকর্পকে ব্যবহার করা হয়েছে।
এবিষয়ে আদানি গ্রুপের বক্তব্যকে এক বাক্যেই তুলে ধরা যায়। তারা বলেছে, 'আদিকর্প আমাদের সংশ্লিষ্ট পক্ষ নয়, তারা নিজেদের অংশীদারদের কাছে লেনদেনের বিস্তারিত জানাতেও বাধ্য নয়'। কিন্তু, কেন এই ঋণ দেওয়া হয়েছিল সেবিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি আদানি গ্রুপ।
অভিযোগ ৪: হিন্ডেনবার্গ 'সন্দেহজনক' আরো কিছু লেনদেন তালিকাভুক্ত করে তার ব্যাখ্যা চেয়েছে ভারতের শিল্পগোষ্ঠীটির কাছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো- একজন রৌপ্য ব্যবসায়ীর আদানি ইনফ্রা কোম্পানিকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার ঋণ এবং মরিশাস ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের থেকে একই কোম্পানিকে দেওয়া ৬০ কোটি ডলারের আরেক ঋণ। ঋণদাতা দুটি প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রণ করেন আদানি গ্রুপের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বা আগে কাজ করেছেন এমন ব্যক্তিরা।
তাদের প্রশ্নমালা অংশে, বিনিয়োগ গবেষণা কোম্পানিটি এসব তহবিলের উৎস জিজ্ঞেস করেছে আদানি গ্রুপকে। এর মাধ্যমে তারা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে যে, (ঋণদাতা) এসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মধ্যে তহবিল স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে।
এক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সংশ্লিষ্ট পক্ষ নয় বলে জবাব দিয়েছে আদানি গ্রুপ। ফলে তাদের হয়ে তহবিলের উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা তারা দিতে পারবে না বলেও জানায়।
অভিযোগ ৫: হিন্ডেনবার্গের মতে, সুবিধেমতো নিজস্ব কোম্পানিগুলোতে টাকা এনেছে, আবার প্রয়োজনে তা অন্য কোম্পানিতে সরিয়েছে আদানি গ্রুপ। এর মাধ্যমে তারা বাড়তি সম্পদ দেখিয়ে বাজারমূল্য বাড়ায়। আর প্রকৃতপক্ষে যা দাম কম হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি দামে শেয়ার কিনে ঠকেন শেয়ারহোল্ডাররা। এতে তাদের সম্পদমূল্য কমেছে।
এর একটি উদাহরণও দেয় তারা। যেমন বেসরকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পিএমসি'কে দেওয়া আদানি কোম্পানির কিছু পেমেন্টের কথা উল্লেখ করা হয়। ১২ বছর ধরে সর্বমোট তারা ৭৮৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ, পিএমসি প্রকল্প ছিল আদানি গ্রুপেরই একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। এই তথ্যও তারা ভারতের রাজস্ব গোয়েন্দা বিভাগের আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে দিয়েছে।
এবিষয়ে আদানি গ্রুপ সংশ্লিষ্ট উচ্চতর কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশের কথা উল্লেখ করে। এতে আদানি গ্রুপ থেকে পিএমসিকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রায় দেওয়া হয়। ওই আদেশের ভিত্তিতে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ নাকচ করেছে তারা।
#অভিযোগ ৬: আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের যারা সমালোচক, তাদের বিরুদ্ধে গ্রুপটির নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে হিন্ডেনবার্গ। তাদের মতে, গৌতম আদানি দাবি করেন, তিনি সমালোচনাকে স্বাগত জানান, অথচ আদানি গ্রুপ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা ও অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। এজন্য হিন্ডেনবার্গের প্রশ্ন- আপনারা যদি ভিন্ন মতের প্রতি উদারই হন, তাহলে কেন এমনটা করছেন?
এর জবাবে আদানি গ্রুপ বলেছে, 'অন্যান্য মতামতের দৃষ্টিভঙ্গি ও বোঝাপড়ের ক্ষেত্রে আমরা উদার, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমরা নিজেদের, নিজেদের ব্যবসা ও কর্মীদের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় রক্ষার অধিকার ত্যাগ করেছি। এবিষয়ে আমরা দেশের প্রচলিত বিচার সাথে সঙ্গতি রেখে নিজেদের আইনি অধিকার চর্চা করেছি'।
আদানির এই প্রতিক্রিয়ার পর আরেকটি বিবৃতি দেয় হিন্ডেনবার্গ। এতে তারা নিজেদের গবেষণার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বলেছে–
'স্পর্শকাতর বিষয় থেকে মনোযোগ অন্যত্র সরাতে জাতীয়তাবাদী ব্যাখ্যাকে হাজির করছে আদানি গ্রুপ। আমাদের প্রতিবেদনকে বলা হচ্ছে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণ। এক কথায়, নিজেদের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির শীর্ষ ধনী হিসেবে উত্থানকে ভারতের সাফল্য হিসেবে হাজির করার চেষ্টা করেছে আদানি গ্রুপ। কিন্তু, আমরা এর সাথে একমত নই। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা মনে করি ভারত একটি প্রাণতন্ত গণতান্ত্রিক দেশ এবং উদীয়মান এক পরাশক্তি, যার সামনে অপেক্ষা করছে অমিত সম্ভাবনার এক ভবিষ্যৎ। কিন্তু, আমরা এটাও বিশ্বাস করি, ভারতের এই উত্থানের পথে বাধা হয়ে রয়েছে আদানি গ্রুপ। তারা নিজেদের আপাদমস্তক ভারতীয় পতাকায় জড়িয়ে দেশকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে লুটেপুটে চলেছে'।
'আমরা আরো মনে করি, জালিয়াতি হলো জালিয়াতি, এমনকী সেটা বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিও যদি করেন। আমাদের গবেষণায় করা অভিযোগ খণ্ডনে আদানি গ্রুপ যে ৪১৩ পাতার ব্যাখ্যা দিয়েছে, তাতে হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র ৩০ পাতায়। ৩৩০ পাতা আদালতের বিভিন্ন রেকর্ডে ভরা, আর ৫৩ পাতায় ছিল শুধু উচ্চ পর্যায়ের আর্থিক তথ্য, সাধারণ তথ্যসহ প্রাসঙ্গিক নয় এমন ব্যবসায়িক উদ্যোগের কথা। এমনকী তারা কীভাবে নারী উদ্যোগকে উৎসাহ দিচ্ছে বা সবজির নিরাপদ উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছে' এমন অবান্তর বিষয় রয়েছে।
শানিত এই আক্রমণের পর বল এখন আবারো আদানির কোর্টে। কীভাবে এর সঠিক ব্যাখ্যা দেবেন গৌতম আদানি- সেটা দেখতে এখন অপেক্ষাই করতে হবে সবাইকে।