আবারও টাকার মান কমলো
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৩ টাকা করেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১৪ বার ডলারের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে সর্বশেষ ৮ বারই ১ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
সোমবার নতুন দামে ৭০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বর্তমানে দেশের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। অবশ্য মহামারি বিধ্বস্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম আমদানি এবং উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের মধ্যে ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কেনে।
এর আগে সর্বশেষ গত ১ মার্চ ডলারের রেট ১ টাকা বাড়িয়ে ১০২ টাকা করা হয়েছিল। এছাড়া ফেব্রুয়ারি, জানুয়ারি ও গতবছরের ডিসেম্বরেও ১ টাকা বেড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের দাম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির এই রেটটিকে বলছে 'বাংলাদেশ ব্যাংকের সেলিং রেট'। যে ১ টাকা বাড়ানো হয়েছে সেটিকে বলা হচ্ছে বাজারের সঙ্গে 'এডজাস্টমেন্ট'। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেলিং রেট বাড়লে সেটিকে 'টাকার অবমূল্যায়ন' বলে ধরা হতো।
ডলারের দাম বাড়ালেও রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির পরিমাণ আগের তুলনায় কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ ডলার চাইছি, তারা আমাদের সে পরিমাণ ডলার দিচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় ডলারের জন্য আমাদের প্রচলিত বাজারের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা চাইছি ডলার বিক্রির রেটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে গ্যাপ কমিয়ে নিয়ে আসতে, এর অংশ হিসেবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেট বাড়িয়েছে।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো গত ২ এপ্রিল নিজেদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা রেটে ডলার কেনাবেচা করেছে।
এর আগে বেশ কয়েক দফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাজার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের দামের পার্থক্য কমিয়ে নিয়ে আসা হবে বলে মন্তব্য করেছেন। সর্বশেষ গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, "আমরা ইতিমধ্যে সিঙ্গেল রেট বাস্তবায়নের কাছাকাছি চলে এসেছি। সিঙ্গেল রেট মানে কিন্তু একটা রেট না, যে কয়টা রেট থাকবে সেগুলো ২% ব্যান্ডের মধ্যে থাকবে। রেমিট্যান্স, এক্সপোর্ট প্রসিডসহ ডলারের বাকি রেটগুলো প্রায় ২% ব্যান্ডের মধ্যে চলে আসলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার সেলিং রেটটা এখনো কম আছে, আমরা সেটি ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করবো।।"
সে বাজারভিত্তিক করার অংশ হিসেবেই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক খাতের নীতিনির্ধারণী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির দাম আরো কিছুটা বাড়তে পারে।
বর্তমানে বাজারে ডলারের বেশ কয়েকটি রেটের প্রচলন আছে। এর মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক্সপোর্ট প্রসিডে ১০৫ এবং রেমিট্যান্সের ১০৭ টাকা রেট দিচ্ছে ব্যাংক। তবে ২০টির মতো ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের এই রেট মানছে না, তারা ১১৪ টাকা পর্যন্ত রেট দিচ্ছে। এছাড়া সোমবার ইমপোর্ট সেটেলমেন্টে গড়ে ১০৬.৭৩ টাকা রেট ধরেছে ব্যাংকগুলো। যদিও আমদানিকারকরা দাবি করেছেন, ব্যাংকগুলো তাদের কাছে ১১৫ টাকা পর্যন্ত রেট নিচ্ছে।