যে কারণে দুই প্রান্তিকের আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেনি সোনালী পেপার
অর্থবছর শেষ হতে সপ্তাহখানেকেরও কম সময় বাকি থাকলেও শেয়ারহোল্ডারদের কাছে চলতি অর্থবছরের দুই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস। কেবল প্রথম তিন মাস, অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনই প্রকাশ করতে পেরেছে কোম্পানিটি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর তথ্য অনুসারে, ইউনুস গ্রুপের মালিকানাধীন সোনালী পেপার গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত, গত ছয় মাসে তাদের কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
কোম্পানির গত দুই প্রান্তিকের আর্থিক তথ্য প্রকাশ না করার এই বিষয়টি সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন। এ ধরনের অ-সম্মতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর ফলে কোম্পানিটিকে জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
কোম্পানির কর্মকর্তাদের মতে, আয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায়, বিশেষ করে স্টক মার্কেট বিনিয়োগ থেকে আশানুরূপ লাভ না হওয়ায় আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ। আশানুরূপ আয় না হওয়ার জন্য তারা দেশের শেয়ারবাজারের অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন।
তারা বলছেন, অন্যান্য আয় কোম্পানির মোট মুনাফায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। মূলত, অন্যান্য আয় কোম্পানির অপারেশনাল আয় বা মূল ব্যবসায়িক আয়কেও অনেক সময় ছাড়িয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তারা জানান, নিট মুনাফা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। সোনালী পেপারের বোর্ড মিটিংয়ে দেরি করা এবং সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর্থিক তথ্য প্রকাশ না করার পিছনে এটিও একটি কারণ হতে পারে।
সূত্র জানায়, স্টক মার্কেটে সোনালি পেপারের বড় বিনিয়োগ থাকায় মোট লাভের প্রায় ৬০ শতাংশই অন্যান্য আয় হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং বাকি আয় এসেছে অপারেশন বা মূল ব্যবসা থেকে এসেছে।
তালিকাভুক্তির নিয়ম কি বলে?
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তালিকাভুক্তির নিয়ম অনুসারে, বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষ হওয়ার পর ৪৫ দিনের মধ্যে কোনো কোম্পানিকে তার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হয়। একইভাবে, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য প্রকাশের জন্য কোম্পানিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৩০ দিন করে সময় দেওয়া হয়।
যদি কোনো কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আর্থিক তথ্য প্রকাশ না করা পর্যন্ত এই অ-সম্মতির জন্য কোম্পানিকে প্রতিদিন ৫,০০০ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে।
তাই নিয়ম অনুযায়ী, অ-সম্মতির জন্য সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসও এই জরিমানার মুখোমুখি হতে চলেছে।
কোম্পানির একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) অসুস্থতার কারণে দেশের বাইরে থাকায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক তথ্য প্রকাশে বোর্ড সভার আয়োজন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর কাছ থেকে এক মাস অতিরিক্ত সময় পেয়েছে কোম্পানি।"
"এরই মধ্যে, দ্বিতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন ডিউ (বকেয়া) হয়ে যায়। সুতরাং, দুই প্রান্তিকের আর্থিক তথ্য প্রকাশ এখন বাকি রয়েছে। যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানি তার আর্থিক তথ্য প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে, তাই অ-সম্মতির জন্য কোম্পানিকে জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে," যোগ করেন তিনি।
রাইট শেয়ার ইস্যু
ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন যন্ত্রপাতি সংগ্রহের জন্য গত বছরের এপ্রিলে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে রাইট শেয়ার ইস্যু করার অনুমতি পায় সোনালী পেপার। এ সময় কোম্পানিটির পণ্যের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
রাইট শেয়ারের সাবস্ক্রিপশন গত বছরের জুনে শেষ হয়। সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ইস্যুকৃত রাইট শেয়ার থেকে তহবিল পাওয়ার পর, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস নন-কমপ্লায়েন্ট (অ-সম্মতি) হয়ে ওঠে এবং এখন পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়েছে।
নতুন মেশিন সংগ্রহ ও স্থাপনের জন্য রাইট শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানি ১০.৯৮ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
বিদ্যমান দুটি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ১০ টাকায় একটি রাইট শেয়ার ইস্যু করে এই টাকা সংগ্রহ করেছে কোম্পানি।
জুলাই-মার্চ, ২০২২ এর আর্থিক তথ্য
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির রাজস্ব বেড়েছে ১৭ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানির নিট মুনাফা ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এছাড়া, কোম্পানির অপারেশনাল আয় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৮২ কোটি টাকা হয়েছে; অন্যান্য আয় ১১২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৫.৫ কোটি টাকা।
কর পরিশোধ এবং ওয়ারকার্স প্রোফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডের পর কোম্পানির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৩.১৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২.১৮ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে, কোম্পানির লাভ হয়েছিল ১৩.২৪ কোটি টাকা; সে বছর কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
১৯৮৫ সালে কোম্পানিটি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হলেও, ২০২০ সালে এসে শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত হয়।
মিডিয়া লাইনার, সিমপ্লেক্স, ডুপ্লেক্স পেপার বোর্ড এবং লেখার কাগজ তৈরি ও বিপণনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে কোম্পানিটি।
তবে ক্রমাগত লোকসানের কারণে, ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রাখে পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা।
এরপর মোহাম্মদ ইউনুস ও তার পরিবার ২০০৭ সালে কোম্পানিটির পুরো শেয়ার কিনে নেয় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে কোম্পানি আবারও করে চালু করে।