অ্যামাজনে চাকরি, নিউইয়র্কের স্টকে বিনিয়োগের সুযোগ: যেভাবে অনলাইন প্রতারকেরা সব দিতে পারে!
৪৩ বছর বয়সী রেজাউল করিম জানেন না তার ফিচার ফোনের গ্রামীণফোন নাম্বার ব্যবহার করে কেউ একজন হোয়াটসঅ্যাপে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে। আর সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মানুষকে অনলাইনে ভুয়া স্কিমে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত করার চেষ্টা করছে প্রতারকেরা।
এসব স্কিমে প্রলুব্ধ হয়ে যুক্ত হওয়া কাউকে আগে অর্থ জমা দিতে বলে প্রতারকেরা। এরপর ওই ব্যক্তি সহজেই জমা দেওয়া অর্থের চেয়ে বেশি অর্থ তুলতে পারবেন বলে লোভ দেখানো হয়। এভাবে ভুক্তভোগী থেকে যথেষ্ট অর্থ আদায়ের পর প্রতারকেরা উধাও হয়ে যায়।
আর্থিক বাজারে ট্রেডিং ও অ্যাফিলিয়েটেড মার্কেটিং অথবা লোভনীয় যেকোনো কিছুর ছদ্মবেশে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন এবং পঞ্জি স্কিমের মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও চ্যাটবট ব্যবহার করছে প্রতারকেরা। আর দেশে এ ধরনের স্ক্যাম ক্রমশ বাড়ছে।
যেমন, অ্যামাজনের জন্য দিনে অনলাইনে দুই থেকে চার ঘণ্টা কাজ করে দৈনিক ১৬ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন — এমন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে অনলাইন প্রতারক।
পড়ালেখা বা কাজের অভিজ্ঞতা; কিছুর দরকার নেই। কেবল একটি স্মার্টফোন থাকলে এবং প্রতিদিন সেটিতে কয়েক ঘণ্টা সময় দিলেই এমন মোটা অংকের পারিশ্রমিক আপনার কাছে চলে আসবে — বিজ্ঞাপনগুলোতে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এগুলো এড়িয়ে যাওয়াও অনেক সময় কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
এ প্রতিবেদনের একজন প্রতিবেদক এ ধরনের একটি চাকরির বিজ্ঞাপনের 'কন্টাক্ট আস' (যোগাযোগের লিংক)-এর ওপর ক্লিক করার পর তার সামনে একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট আসে। এ অ্যাকাউন্টটিই রেজাউল করিমের ফোন নাম্বার দিয়ে খোলা।
এরপর লুইস নামক কেউ একজন তার অবস্থান ঢাকায় জানিয়ে নিজেকে গ্রাহকসেবা ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি প্রতিবেদককে জানান, তারা ওয়ালমার্ট, ডব্লিউপিপি, ফ্লিপকার্ট, ইন্ডিয়ামার্ট, স্ন্যাপডিল ও পেমল ইত্যাদির মতো বড় বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন কর্মী নিয়োগে সহায়তা করেন।
'দৈনিক বেতন প্রায় ১,৮০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা; এটি একটি অনলাইন চাকরি, আপনি সহজেই বাড়িতে বসে এ কাজ শেষ করতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। আমাদের কাজ হলো ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্যবিক্রয় সম্পূর্ণ করতে এবং ভালো রিভিউ তৈরি করতে সহায়তা করা। আপনি যখন কাজটি শেষ করবেন, তখন ব্যবসায়ীরা আপনাকে একটি কমিশন দেবে।
কাজটি অনলাইন শপিংয়ের মতোই, তবে এটি আসল অনলাইন শপিং নয়। এটি ভার্চুয়াল শপিং। এর উদ্দেশ্য হলো মল ব্যবসায়ীদের জনপ্রিয়তা এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করা।'
কাজটা কিন্তু সহজ।
'আপনাকে কেবল অর্ডারটি ধরতে এবং অর্ডারটি সম্পূর্ণ করতে সিস্টেমকে সাহায্য করতে হবে। এটি শেষ করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে, এবং আপনি একটি কাজ (টাস্ক) শেষ করার পরে ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। আপনি যত বেশি টাস্ক শেষ করবেন, তত মূল্য বাড়বে আর আপনি তত বেশি পুরস্কার পাবেন।'
এসব কথা বলার পর প্রতিবেদককে তারপর রেজিস্ট্রেশনের জন্য amznol.com-এর লিংক দেওয়া হয়।
amznol.com-এ অ্যাকাউন্ট খোলার পরে প্রতিবেদক 'স্বাগত বোনাস' হিসাবে ওয়েবসাইটের 'ভার্চুয়াল ওয়ালেটে' ১০০ টাকা পান। এরপর তার 'অ্যাকাউন্ট সচল' করার জন্য শীর্ষ দুটি মোবাইল আর্থিক পরিষেবার যেকোনো একটির মাধ্যমে ২০০ টাকা জমা দিতে বলা হয়। ওই টাকা জমা দিলেই তিনি চাকরির কাজটি শুরু করতে পারবেন।
প্রতিবেদক একটি বিকাশ নম্বর ব্যবহার করে ২০০ টাকা জমা দেন। এরপর লুইস তাকে আলিয়া নামক একজন 'টাস্ক মেন্টর'-এর কাছে স্থানান্তরিত করেন। আলিয়া একটি টেলিগ্রাম নম্বরের মাধ্যমে প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যে নম্বরটি দিয়ে আলিয়ার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়েছে, সেটির শুরু হংকংয়ের ডায়ালিং কোড দিয়ে।
আলিয়া প্রতিবেদককে সিমুলেশন প্রক্রিয়ায় একটি পণ্য অর্ডার করতে ওয়েবসাইটের একটি বোতামে ক্লিক করতে বলেন। আর তা করার পর এক মিনিটের মধ্যেই প্রতিবেদকের ভার্চুয়াল ওয়ালেটের মূল্য দাঁড়ায় ৩৯০ টাকায়।
পরবর্তী কাজটির জন্য আলিয়া তাকে টাকা উত্তোলনের অনুরোধ জানানোর নির্দেশনা দেন। প্রতিবেদক ৩৫০ টাকা উত্তোলনের অনুরোধের বিপরীতে এক ঘণ্টার মধ্যে ৩৩২ টাকা পান। অর্থাৎ তার লাভ হয় ১৩২ টাকা। আর এভাবে এগিয়ে গেলে সামনে হয়তো আরও বেশি লাভ করা যেতে পারে।
এরপর প্রতিবেদক দ্বিতীয় কাজের জন্য জিজ্ঞাসা করেন। তখন আলিয়া পরবর্তী ডিপোজিটের জন্য তাকে ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ৫০০ টাকা টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে বলেন। আলিয়া জানান, এ অর্থ 'পরবর্তী ভার্চুয়াল অনলাইন অর্ডারসমূহের' জন্য ব্যবহার করা হবে এবং ওসব অর্ডারের মাধ্যমে আরও বেশি নগদ টাকা পাওয়া যাবে।
আলিয়া জানান, ৫০০ টাকা ডিপোজিটের বিনিময়ে প্রায় এক হাজার ১০৮ টাকা আয় করা যাবে এবং এ অর্থ পুরোটা একত্রে উত্তোলন করা যাবে।
প্রতিবেদক ৫০০ টাকা জমা দেন। কিন্তু এবার তিনি কেবল দুটি পণ্য অর্ডার করতে পারলেন। ওই দুই পণ্য থেকে কমিশন পাওযা গেল ১০১ টাকা। এবার আলিয়া প্রতিবেদককে আরও অর্থ ডিপোজিটের জন্য বলেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই স্তরের জন্য মোট পাঁচটি অর্ডারের প্রয়োজন এবং প্রতিবেদকের অবশিষ্ট ব্যালেন্স টাস্কটি সম্পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
প্রতিবেদক আর কোনো টাকা জমা দেননি। কিন্তু আলিয়া প্রতিদিন তাকে আরও টাকা জমা দেওয়ার জন্য বার্তা পাঠাতে থাকেন।
তথাকথিত গ্রাহকসেবা ব্যবস্থাপক লুইসের ভাষ্যে, বাংলাদেশের অনেকেসহ লাখ লাখ মানুষ এ 'চাকরি' করছেন। বাংলাদেশিদের এ চাকরি করার সংখ্যাটাও ক্রমশ বাড়ছে বলে জানান লুইস।
হেড ব্লকস-এর সিইও ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ আসিফ আতিক বলেন, 'আসলে লুইস একটা বট যেটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর নির্ভর করে কথোপকথন চালিয়ে যায়।'
গত রাতে পরীক্ষা করার পর দেখা যায় amznol.com ওয়েবসাইটটিতে তখনও প্রবেশ করা যাচ্ছে।
কিন্তু amzn8a.com নামক অনুরূপ আরেকটি স্ক্যাম সাইট বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমবর্ধমান টার্নওভারের পর এ সপ্তাহে অফলাইনে চলে যায়। এ সাইটটিতেও বাংলাদেশি একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছিল।
ই-কমার্স, মুভি প্রচার, অনলাইন বেটিং বা ক্রিপ্টোকারেন্সি বাণিজ্য, ফরেক্স পেয়ার, কমোডিটি, স্টক ইত্যাদির নামে তৈরি হওয়া এ ধরনের শত শত প্রতারণামূলক ওয়েবসাইট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গজিয়ে উঠেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা প্রায় প্রতিদিনই সাইবার কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত প্রতারণার ঘটনা পাই। বেশিরভাগ অভিযোগই উচ্চ বেতন, লোভনীয় সুবিধা বা রিটার্নসহ চাকরির প্রস্তাব সংক্রান্ত।'
'কেউ কোনো অভিযোগ করলে আমরা প্রতারকদের ধরার চেষ্টা করি,' তিনি যোগ করেন।
প্রতিবেদকের স্মার্টফোনে তথাকথিত 'অ্যামাজন চাকরির অফার' দেখে একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বলেন, 'তারা মানুষকে প্রলুব্ধ করে ঠকানোর জন্য বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।'
তিনি আরও বলেন, কেলেঙ্কারির পেছনে থাকা ব্যক্তিরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অথবা বিদেশে অবস্থান করতে পারে। 'স্ক্যামারেরা কেবল মানুষকে প্রতারণা করে না, কখনও কখনও তারা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের ওপরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং পরে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে,' বলেন তিনি।
সাইবার এবং বিশেষ অপরাধ বিভাগ এ বছরের মে পর্যন্ত ৪০৬টি সাইবার-সম্পর্কিত মামলা রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে ৯৮টি মামলাই অনলাইন স্ক্যামিং বা লোভনীয় অফার সম্পর্কিত।
এমটিএফই ট্রেডিং অ্যাপ: এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় স্ক্যাম
ক্রিপ্টো, বৈদেশিক মুদ্রা, কমোডিটি এবং এমনকি বিদেশি স্টক নিজের ছায়া প্ল্যাটফর্মে ট্রেড করার সুযোগ দিয়ে একটি অ্যাপ সম্প্রতি অবিশ্বাস্যরকম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ট্রেডিং থেকে উপার্জন এবং অর্থ পরিশোধের কথা বলে এ অ্যাপটি ব্যবহারকারীদেরকে অবিশ্বাস্য সহজপথে অর্থ আয়ের আমন্ত্রণ জানায়।
গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যায় এমটিএফই অ্যাপটি। ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যন্ত মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এটি। গ্রাহকদের সিমুলেশন প্ল্যাটফর্মে ট্রেডিং অনুশীলন করতে বলে অ্যাপটি। ট্রেডিংয়ের এ চর্চার সময় লাভ-ক্ষতি যা-ই হোক, তার মালিকানা থাকে ব্যবহারকারীর কাছে।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এমটিএফই অ্যাপে কমপক্ষে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে বিনিয়োগকারীদের একজন জানান। এ ব্যক্তি ২৬ ডলারের বিনিয়োগের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় আধ ডলার আয় করতে পারেন।
সিস্টেমটিকে এই তথাকথিত ট্রেডিং চালাতে দিতে তাকে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা তার ফোনে অ্যাপটি খোলা রাখতে হয়। একটি ট্রেডিংয়ে জিতলে তিনি আধা ডলার উপার্জন করেন। হারলে জরিমানার পরিমাণও একই।
তবে এক্ষেত্রে সমস্যাটা হলো, নতুন কেউ তার রেফারেন্সসহ অ্যাপটিতে যোগ দিলে তিনি দুই ডলারের বেশি আয় করেন — কোনো পঞ্জি স্কিম পদ্ধতির চিরায়ত নিয়ম যেটি।
বাংলাদেশে বিদেশি সম্পদে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। এ কারণেই এমটিএফই ব্যবহারকারীদেরকে প্রথমে গ্রে মার্কেটে ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে হয়। তারপর তারা প্ল্যাটফর্মটিকে অর্থ প্রদান করেন।
আবার অ্যাপটি থেকে ব্যবহারকারীদেরকেও ক্রিপ্টো মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করা হয়। ওই ক্রিপ্টো বাংলাদেশি এমটিএফই ব্যবহারকারীরা প্রথমে ডলারে এবং তারপর স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করেন।
রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং অবশ্যই ঢাকার যেসব ব্যবহারকারীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকদ্বয় কথা বলেছেন, তাদের প্রায় সবাই বেশ ভালোভাবে জানেন যে হুট করেই যেকোনো একদিন অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বরিশালে এমন একজন ব্যবহারকারী অ্যাপটির মাধ্যমে দুই কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন।
জেলার বানারীপাড়ায় এমটিএফই ব্যবহারকারীরা প্রায়ই তাদের 'সাফল্য' উদযাপন করতে মিলিত হন। এমটিএফই ব্যবহারকারীদের একটি ফেসবুক পেজে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য রয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর বড় কিছু স্ক্যাম
২০২১ সালে বগুড়ার কয়েক ডজন গ্রামবাসী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন, তারা জনৈক রুহুল আমিনের পরিচয় করিয়ে দেওয়া 'এনজেড রোবো ট্রেড' নামক একটি বিটকয়েন ট্রেডিং অ্যাপে ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন।
রুহুল আমিন প্রথমে তাদেরকে ৯০ হাজার টাকা বিনিয়োগের বিনিময়ে মাসে ১৫ হাজার টাকা মুনাফা দিতেন। এভাবে তিনি মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা তুলে একদিন চম্পট দেন। তার উধাওর সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপটিও কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
রাজধানীতে মুদি দোকানের মালিক ২৬ বছর বয়সী রবিন মিয়া ২০২১ সালের জুলাই–আগস্ট মাসে টলিক নামক একটি অ্যাপে ১৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।
তিনি প্রতিদিন প্রায় ৯০ হাজার টাকা আয় করতে শুরু করেন। এরপর আট–নয়জন বন্ধু তার সঙ্গে ১০–২০ লাখ টাকা নিয়ে যোগ দেওয়ার পর লাভের অংক আরও মোটা হয়। ২৫ দিনে তার ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টের মূল্য ৩০ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। তারপর হঠাৎ করে একদিন অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়।
এর জন্য দায়ী করার মতো কাউকেই পাননি এ ভুক্তভোগীরা।
বিডিলাইকঅ্যাপস, গোল্ডরাশ, ও গোল্ডেনলাইন-এর মতো কয়েক ডজন অ্যাপ-ভিত্তিক স্ক্যাম দুই লাখেরও বেশি মানুষের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল বলে সেই সময় বেশকিছু ভুক্তভোগী দাবি করেছিলেন।
একজন অনাবাসী বাংলাদেশির প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত রিংআইডি ২০২১ সালে বন্ধ হওয়ার আগে মানুষের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছিল।
চলতি বছরের শুরুর দিকে রাজশাহী নগরীতে প্রায় ৩০ জন ব্যক্তি পুলিশে অভিযোগ করেন, আল্টিমা ওয়ালেট নামক একটি অ্যাপ তাদের এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তারা জনৈক মোনায়েমকে এর জন্য দায়ী করেন — এ ব্যক্তিই তাদেরকে অ্যাপটিতে অর্থ ঢালতে রাজি করিয়েছিল।
হাজার হাজার তরুণ শিক্ষার্থীকে অকূল পাথারে ফেলে মার্চ মাসে ইএমমুভি নামক আরেকটি অ্যাপ এভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
কেন বারবার ফিরে আসে এ স্ক্যামগুলো?
ইউএস অ্যাসোসিয়েশন অভ সার্টিফাইড ফ্রড এক্সামিনার্স-এর ফেলো মেজর (অব.) মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে ডেসটিনি, অ্যানালগ যুগের যুবক, ইভালি এবং অন্যান্য প্রতারণামূলক ই-কমার্স স্কিমের মতো পঞ্জি স্কিমগুলোর অসংখ্য নেতিবাচক, বেশ আলোচিত দেশব্যাপী উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও ডিজিটাল যুগে মানুষ এখনও নানা পঞ্জি স্কিমের শিকার হচ্ছেন।
এখন এ স্ক্যামগুলো ভিন্নরূপ নিয়েছে। এআই ব্যবহার করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরিচালন করা হচ্ছে এ স্কিমগুলো, যেখানে স্কিমের পেছনে থাকা প্রতারকের অনেক সময় কোনো নাগালই পাওয়া যায় না।
বেকারত্বের উচ্চ হার, দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্য মুনাফার লোভ, আর্থিক সাক্ষরতার অভাব এবং প্রতারকদের দ্বারা ব্যবহৃত প্ররোচনামূলক কৌশল ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এসব পঞ্জি স্কিমের কার্যক্রম সফল ও ধারাবাহিকভাবে চলছে বলে মনে করেন মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিজয় বসাক টিবিএসকে বলেন, আদালতের আদেশ অনুসারে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে এ ধরনের স্ক্যাম বন্ধ করতে জনসচেতনতা অপরিহার্য।