চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২১.৭৭ %
২০২৩ সালের প্রথম আট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২১.৭৭ শতাংশ হ্রাস পেয়ছে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের এই মূল বাজারে চাহিদা কম থাকায় রপ্তানির পরিমাণ কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সেস অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা)-এর তথ্য অনুসারে, এ বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৫.১৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে; যার পরিমাণ গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬.৬২ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ও ৪৮.৮ শতাংশ কমে ৫১১.৬৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে; যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯৯৯.৭৭ মিলিয়ন ডলার।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে সামগ্রিক পোশাকের চাহিদা কমেছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
তবে তারা বলছেন, অন্যান্য পোশাক বাজারের তুলনায় এখন পর্যন্ত মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির অবস্থা ভালো। বছরের শেষ নাগাদ পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে বলে আশা করছেন তারা।
ওটেক্সার তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম ৮ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানি ৬৯.২১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫৩.৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা ২২.৭৭ শতাংশ কম।
পরিমাণের দিক বিবেচনায়, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির পরিমাণ ২২.৫৩ বিলিয়ন ইউনিট থেকে কমে ১৬.৪৯ বিলিয়ন ইউনিটে এসে দাঁড়িয়েছে, যা ২৬.৮০ শতাংশ কম।
এদিকে, চলতি বছরে কেবল জানুয়ারি এবং জুলাই মাসেই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি ৭৫১ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৮৬৬ মিলিয়ন ডলার হয় এবং জুলাইয়ে ৬৯৪ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৭৪৬ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়।
পরিমাণের দিক থেকে, আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯.১০ শতাংশ বা ১.৫৮ বিলিয়ন ইউনিট; যা গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে ২.২৩ বিলিয়ন ইউনিট ছিল।
ওটেক্সার তথ্যমতে, আলোচ্য ৮ মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীনের পোশাক রপ্তানি ২৯.৪৭ শতাংশ কমে ১০.৯৮ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকে।
এছাড়া বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক ভিয়েতনামের রপ্তানিও ২৪.৫৭ শতাংশ কমে ৯.০৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পোশাক রপ্তানি ২১.৬ শতাংশ কমে ৩.২৬ বিলিয়ন ডলার এবং ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ২৬.১০ শতাংশ কমে ২.৮৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মূল্যস্ফীতির কারণে আমেরিকার ক্রেতারা বর্তমানে উচ্চ সুদহারের মুখোমুখি; তাদের ক্রয় ক্ষমতা ক্রমবর্ধমান মর্টগেজ রেট দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "কিছু চ্যালেঞ্জের কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে; তবে বছরের শেষ নাগাদ অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ এখন দেশে কিছু হাই-ভ্যালু আইটেম উৎপাদিত হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখাতে সাহায্য করবে।"
এছাড়া, সামনের দিনে মার্কিন বাজারে রপ্তানি আরও বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ফারুক হাসান। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতারা ইতোমধ্যেই তাদের স্টোর খালি করেছেন, ফলে আগামী দিনে তাদের কাছ থেকে নতুন অর্ডার আসতে পারে।
রেমিট্যান্স আয়ে বড় পতন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ ১.৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা বিগত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
রপ্তানি ও রেমিটেন্স, উভয়ই কমে যাওয়ায় দেশের অর্থপ্রদানের সক্ষমতার ওপর চাপ বাড়ছে। এতে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা।
দেশের বাহ্যিক আয়ের প্রধান দুই উৎসের এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে নতুন চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে; এর প্রভাবে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও কমতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফের রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি অনুসরণ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার; তবে এই রিজার্ভের পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।