অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৬,২৬৬ কোটি টাকা
বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর অক্টোবরে আগের মাসের তুলণায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৬,২৬৬ কোটি টাকা।
এটি আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০.০৯% প্রবৃদ্ধি। রপ্তানি ভিত্তিক পেমেন্টের পরিমাণ বাড়ায় ঋণের গ্রোথ বাড়ছে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা গেছে, অক্টোবর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫.২৯ লাখ কোটি টাকা। যা তার আগে মাসের তুলনায় ১.০৮% বেশি।
চলতি অর্থবছরের ২০২৩-২৪ এর জুনের তুলনায় জুলাই মাসে বেসরকারি খাতের আউটস্ট্যান্ডিং ঋণের পরিমাণ কমেছে ৮৮০৯ কোটি টাকা, আগস্টে বেড়েছে ৯৮১১ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ১৭,৭৯৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলেন, গত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণের নিট গ্রোথ ১০% এর কম। দেশের ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটি স্বাভাবিক হলে এই ঋণের গ্রোথ ১৫% এর বেশি হতো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, "বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এখন ক্যাপিটাল গুডস, ও ক্যাপিটাল র ম্যাটেরিয়াল আমদানি কম। এখন বেসরকারিখাতে যে ঋণগুলো যাচ্ছে তার বেশিরভাগই কনজুমার গুডস ইম্পোর্ট ব্যয় মেটানোর জন্য।"
তিনি বলেন, "গ্রাহক পর্যায়ের ঋণের সুদহার প্রতিমাসেই বাড়ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার পলিসি রেট চলতি অর্থবছরে কয়েকবার বাড়িয়েছে।"
"ব্যাংকগুলো বেশি রেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য নিচ্ছে, এছাড়া গ্রাহক পর্যায়েও সুদহার বাড়ায় গ্রাহকদের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমছে।"
চলতি ডিসেম্বর মাসে গ্রাহক ঋণের সুদহার হবে ১১.৪৭%। অথচ জুনে এই রেট ছিল ১০% এর মতো।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রেণে মানি সাপ্লাই কমাতে সংকোচনমূলক ধরা অব্যাহত রাখবে তারা। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮% এ নামিয়ে আনতে চাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ প্রকাশিত অক্টোবরে দেশের মূল্যস্ফীতি রয়েছে ৯.৯৩%।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্টে দেখা যায়, ২০২২ এর নভেম্বর থেকে ২০২৩ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের গ্রোথ টানা ১০ মাস পতন হয়েছে। যদিও অক্টোবরে আগের মাস সেপ্টেম্বরের তুলনায় তা ০.৪০ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে।
অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০.০৯%, যা ২০২২ সালের অক্টোবরে ছিল ১৩.৯৭%।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণ কমছে। এ ছাড়া বিদেশি বেসরকারি ঋণ কমছে।"
"যেহেতু ব্যাংকগুলোতে নন-পারফর্মিং লোন বাড়ছে, তারা ঋণ বিতরণে আরও সতর্ক হচ্ছে যা প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করেছে," বলেন তিনি।
সিটি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি খাতের ওভারঅল ঋণের গ্রোথ কম। নির্বাচনপূর্বে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করছে না। আমাদের বেসরকারি খাতের টার্ম লোন অনেক কম। অনেক ব্যবসায়ীদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল লোনকে টার্ম লোনে রূপান্তর করতে হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের এখন বেসরকারিখাতে যে ঋণগুলো যাচ্ছে তার নতুন করে শিল্প কারখানার জন্য নয়। এগুলোর বেশিরভাগই নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য।"
চলতি অর্থবছরের (জুলাই-অক্টোবর) চার মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় ইম্পোর্ট এলসি ওপেনিং ও সেটেলমেন্ট কমেছে যথাক্রমে ১১.৫২% ও ২৪.০৭%।