বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রত্যাশার শীর্ষে ভালো কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা: সিপিডি জরিপ
বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হচ্ছে ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ। এমন তথ্যই উঠে এসেছে দেশের শীর্ষ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক – সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক জরিপে।
আজ রোববার (৫ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে 'নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা' শীর্ষক একটি প্রাক-বাজেট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিপিডি। সিটিজেন'স প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজির সাথে যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সরকারকে আরো বেশি অর্থ বরাদ্দ করার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে সিপিডির জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ নাগরিক বেকারত্ব কমানোর কথা বলেছেন। ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, এবং ১১ দশমিক ০২ শতাংশ বেকারভাতা চালুর পক্ষে মত দেন।
নাগরিকদের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রত্যাশা হিসেবে রয়েছে শিক্ষা। ৪৯ দশমিক ৭২ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তারা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ চান। আর বৃত্তি/ শিক্ষাভাতা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন।
নাগরিকদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তা চান।
জাতীয় বাজেট-প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মতামত/ দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেছে সিপিডির জরিপ। দেশের সকল নাগরিকের চাহিদার প্রতি বাজেট যেন ন্যায়সঙ্গত ও প্রতিক্রিয়াশীল হয় সেজন্য এটি অপরিহার্য বলে মনে করে সংস্থাটি।
এবিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, "সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির বাজেট প্রস্তাবনাগুলোকে একত্র করে এই নথি প্রস্তুত করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয় এই যে, দেশের ঐতিহ্যগত বাজেট প্রস্তুতির প্রক্রিয়ায় সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টিভঙ্গি/মতামত প্রতিফলনের সুযোগ খুবই সীমিত।
জরিপে গুণগত (কোয়ালিটেটিভ) ও পরিমাণগত (কোয়ান্টেটিভ) উভয় ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য প্রথমে সরকারি বিভিন্ন সূত্রের প্রদত্ত সেকেন্ডারি ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়, এবং আওয়ামী লীগের ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করা হয়। এরপর গুগল ফর্ম ও ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইনে ও সামাজিক মাধ্যমে একটি জরিপ চালানো হয়। এই জরিপে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
গুগল ফর্মের মাধ্যমে জরিপে অংশ নেন মোট ২ হাজার ২৪৯ জন। আর সামাজিক মাধ্যমে প্রদত্ত কমেন্ট ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অংশ নেন ৮ হাজার ৪৮ জন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ ছিলেন সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণিভুক্ত।
সিপিডি কী কী সুপারিশ করেছে
জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে বেশকিছু সুপারিশ করেছে সিপিডি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মেধার-ভিত্তিতে বেকার জনগোষ্ঠীর চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করতে বাজেটে বরাদ্দ রাখার কথা বলেছে। এজন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা এবং করোনা মহামারির পরে যারা বেকার হয়েছে– তাদের কর্মসংস্থান সৃজনের জন্য বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে সিপিডি।
পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুদ- মুক্ত ঋণ সহায়তা প্রদান এবং সরকারি ভর্তুকি দেওয়ার মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের খাত সম্প্রসারণ করা দরকার বলে মনে করে সিপিডি।
সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সিপিডি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টণীর অধীন কর্মসূচিগুলোর আওতা বাড়ানো এবং এগুলোর প্রদত্ত ভাতাকে সময়োপযোগী করার পরামর্শ দেয়।
সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার সুষম ও ন্যায্য বন্টন, এবং তা যেন সঠিক ব্যক্তিরাই পায় তা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "(জনগণের ওপর) মুল্যস্ফীতির বোঝা লাঘব করতে করতে আগামী বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং (কর্মসূচির বাইরে থাকা) অন্যান্য খাদ্যপণ্যেও ভর্তুকি দিতে হবে।"
শিক্ষা খাত নিয়ে সুপারিশ করেছে যে, "২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় (যখন এখাতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১২ শতাংশ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমতে দেখা গেছে (মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ)।
"এ ছাড়া ২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ বরাদ্দ করা হলেও – সংশোধিত এডিপিতে তা কমিয়ে ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ করা হয়। এদিকে ২০২২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমলেও – ২০২৩ নমুনা জরিপে ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা একটি উদ্বেগজনক সংখ্যা।"
আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতের অর্জনগুলো ধরে রাখতে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং শিক্ষামান উন্নয়নের সুপারিশ করেছে সিপিডি।
চিকিৎসা খরচ খানা বা পরিবারপ্রতি তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত। এই খাতে শহরবাসীর চেয়ে আবার গ্রামাঞ্চলের মানুষকে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে (শহরাঞ্চলের খানাপ্রতি ৬ দশমিক ২০ শতাংশ ব্যয়ের চেয়ে গ্রামে তা ৭ দশমিক ১০ শতাংশ)। এই প্রেক্ষাপটে, সমাজের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ও পশ্চাদপদ শ্রেণির চিকিৎসা খরচ কমাতে ভর্তুকি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে সিপিডি।