ফের ভাঙলো ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ, নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান
সাড়ে চার মাসের মাথায় আবারও ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা খলিলুর রহমানকে এবার নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
রোববার (৫ মে) ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে চেয়ারম্যান ও ৩ সতন্ত্র পরিচালকসহ ১০ সদস্যের পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এই পর্ষদে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান চেয়ারম্যান জয়নাল হক সিকদারের পরিবারের আর কেউ রইল না বোর্ডের ডিরেক্টর হিসেবে। যদিও গত ডিসেম্বরে করা পর্ষদের একমাত্র সদস্য ছিলেন সিকদার পরিবারের মেয়ে পারভীন হক শিকদার।
বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে আরেক বেসরকারি ব্যাংক ইউসিবির একীভূত হওয়ার প্রাথমিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে গত ২৮ এপ্রিল ন্যাশনাল ব্যাংক পর্ষদ জানায়– তারা একীভূত হতে চাচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ক্ষমতাবলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের গঠিত নতুন ১০ সদস্যের এই পর্ষদে নতুন করে ৭ জনকে ডিরেক্টর হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪ জন হচ্ছেন— প্রতিনিধি পরিচালক ও ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক।
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সেই পর্ষদে ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ ফেরহাত আনোয়ার।
সেই বোর্ডের অন্য নতুন সদস্যরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম; সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন। এ পর্ষদে একমাত্র সিকদার পরিবারের সদস্য ছিলেন পারভীন হক সিকদার। যদিও নতুন বোর্ডে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
নতুন ডিরেক্টর হচ্ছেন যারা
ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ডে প্রতিনিধি পরিচালক হয়েছেন, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ, অ্যাডভোকেট এহসানুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম তোফাজ্জল হক। এছাড়া একই ভার্সিটির প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ডে থাকা সাবেক এক পরিচালক জানান, "কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ৯ এপ্রিল ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এ সিদ্ধান্ত জেনে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন।"
তিনি বলেন, "আমরা কয়েকটি বড় খেলাপি গ্রাহককে চিঠি দিয়েছি ঋণ পরিশোধের জন্য তারা আমাদের উপর নাখোশ। এছাড়া, মার্জেরের সিদ্ধান্তে আমাদের বোর্ড যেতে চাচ্ছে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা বলেছি আমাদের বোর্ড গঠন হয়েছে মাত্র চার মাস। এক বছর সময় দিলে আরও অনেক উন্নতি হতো ব্যাংকের। কিন্তু তার আগেই বোর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।"
২০২৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসান হয়েছে ১,৪৯৭ কোটি টাকা। এর আগের বছর ব্যাংকটির লোকসান ছিল ৩,২৮৫ কোটি টাকা। যদিও ২০২৩ সালে আগের বছরের চেয়ে লোকসান প্রায় ৫৪ শতাংশ কমেছে, এরপরেও ন্যাশনাল ব্যাংকের লোকসানের অঙ্ক এখনও বেশি।