বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকার হয়েছে আরো ২ লাখ ৪০ হাজার: বিবিএস
২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশে বেকার সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার জন।
আজ সোমবার (৬ মে) প্রকাশ করা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশের বেকারত্ব হার ৩.৫১ শতাংশ বেড়েছে।
আজ সোমবার (৬ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, সার্বিক বেকারত্ব হার বেড়ে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। দেশে বেকার সংখ্যা এখন ২৫ লাখ ৯০ হাজার জন, যা ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে ছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার। এই হিসাবে বেকার সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, যাঁরা সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী ছিলেন, তাঁরা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এই নিয়ম অনুসারে বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে।
২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকের চেয়ে এবছরের জানুয়ারি- মার্চ সময়ে নারী ও পুরুষ উভয় জনসংখ্যার মধ্যেই বেকারত্ব বেড়েছে।
আগের প্রান্তিকে ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ থাকলেও এখন পুরুষদের বেকারত্ব হার ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০২৩ এর শেষ প্রান্তিকে নারীদের বেকারত্ব হার ছিল ৩ দশমিক ০৬ শতাংশ, যা জানুয়ারি- মার্চ প্রান্তিকে ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
তবে গত বছরের একই প্রান্তিকের সাথে তুলনায় করে দেখা গেছে, সার্বিক বেকারত্ব হার একই রয়েছে। কিন্তু পুরুষের বেকারত্ব বেড়েছে এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা কমেছে।
চলতি বছরের ২ এপ্রিলে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ম্যাক্রো পোভার্টি আউটলুক ফর বাংলাদেশ প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, ২০২২-২৩ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি নতুন করে চরম দারিদ্র্য সীমায় পড়বে। অর্থাৎ, তাদের দৈনিক আয় হবে ২ ডলার ১৫ সেন্টের চেয়েও কম। আর মূল্যস্ফীতির হার পৌঁছাবে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে। এটি বেসরকারি খাতের ভোগচাহিদা দুর্বল হওয়ারও আভাস দিচ্ছে। এর সাথে উচ্চ মূল্যস্ফীতিও বেকারত্ব বাড়ার উদ্বেগজনক প্রবণতার চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর গবেষণা পরিচালক সায়েমা হক বিদিশা বলেছেন, "মৌসুমের কারণে বেকারের সংখ্যা উঠানামা করে। এ কারণে গত বছরের শেষ প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বাড়াতে পারে। যেমন কৃষি খাতে একেক মৌসুমে শ্রমে নিয়োজিতদের হার বাড়ে বা কমে। ফলে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কারণে গত বছরের চতুর্থ কোয়র্টারের সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম কোয়ার্টারে বেকারত্বের হার বেড়েছে।"
তিনি আরো বলেন, আবার বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে অবস্থায় রয়েছে – তাতেও কাজের সুযোগ সেভাবে তৈরি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি অনেকদিন ধরেই আছে। মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে এই পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে। যদি কোনো ধরনের বিকল্প পলিসি না নেওয়া হয়, শ্রমবাজারে যদি চাহিদা না বাড়ে – তাহলে কর্মসংস্থান বাড়ারও কোনো কারণ নেই। ফলে বেকারত্বের হার বাড়তেই পারে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে শ্রমশক্তি সংখ্যা গত বছরের একই সময়ে তুলনায় বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৩৭ লাখ, যা গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৭ কোটি ৩৬ লাখ।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কর্মে নিয়োজিত জনসংখ্যা হয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭ কোটি ১২ লাখ।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণ শ্রমশক্তির সংখ্যা কমেছে। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে তরুণ শ্রমশক্তি জনগোষ্ঠী ছিল ২ কোটি ৭৪ লাখ, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ।
কৃষি ও সেবা খাতে কর্মে নিয়োজিতদের সংখ্যা সামান্য কমেছে। আর শিল্প খাতে কর্মে নিয়োজিত সংখ্যা সামান্য বেড়েছে।