সেবা ও নির্মাণ খাতের গতি কমায় এপ্রিলে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে: পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স
এপ্রিলে বাংলাদেশে ব্যবসার সার্বিক গতি আগের মাসের তুলনায় ২.১ পয়েন্ট কমেছে বলে উঠে এসেছে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেবা ও নির্মাণ খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের গতি কমে যাওয়ায় এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে। তবে কৃষি ও উৎপাদন খাতের দ্রুততর প্রবৃদ্ধির কারণে সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া গেছে।
অর্থনীতির গতিশীলতা নির্ণয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে প্রকাশ করা হয়েছে পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স বা পিএমআই নামে সমীক্ষাভিত্তিক সূচক। এ সূচক অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিলে ব্যবসার সার্বিক গতি ৬৪.৩ থেকে কমে ৬২.২-এ নেমে এসেছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ-এর (পিইবি) সঙ্গে যৌথভাবে এবং যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস-এর (এফসিডিও) সহায়তায় বৃহস্পতিবার (৯ মে) মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) তাদের গুলশান কার্যালয়ে পিএমআই ফলাফল প্রকাশ করে।
সেবা, উৎপাদন, কৃষি ও নির্মাণ—এ চার খাত নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
মার্চ মাসে সেবা খাতের পিএমআই ছিল ৬৩.৬, এপ্রিল মাসে তা কমে ৫৬.২-এ নেমে আসে। অন্যদিকে মার্চে মাসে নির্মাণ খাতের পিএমআই ছিল ৬৭.৭, এপ্রিলে যা নেমে আসে ৬৩.৮-এ।
তবে উৎপাদন ও নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধি দ্রুত বেড়েছে। মার্চে কৃষি খাতের পিএমআই ছিল ৫৫.৭, এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৬০.৯। মার্চে উৎপাদন খাতের পিএমআই সূচকের মান ছিল ৬৮.৪, এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৭৪.৫।
পিএমআই হচ্ছে অর্থনীতির এমন সূচক যা প্রধান অর্থনৈতিক খাতগুলো সম্পর্কে ধারণা দিয়ে একটি দেশের অর্থনীতির অবস্থা বুঝতে সাহায্য করে। অনেক উন্নত দেশ নিয়মিত পিএমআই সূচক ব্যবহার করে।
কোনো খাতের পিএমআই স্কোর ৫০-এর বেশি থাকার অর্থ হচ্ছে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, স্কোর কম থাকার অর্থ ওই খাতের সংকোচন হচ্ছে।
পিএমআই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আগের মাসের তুলনায় সামান্য কমলেও নতুন ত্রৈমাসিকে অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির পথে রয়েছে। উৎপাদন ও কৃষি উভয় খাতেই শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হয়েছে, অন্যদিকে সেবা ও নির্মাণ খাতে মন্থর প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
পিএমআই প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে পিইবির চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, প্রবৃদ্ধির গতি খুব বেশি কমেনি এবং সূচক ৫০ পয়েন্টের ওপরে আছে—এটি ভালো ব্যাপার।
তবে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতি মাসের ৭ তারিখে পিএমআই প্রতিবেদন প্রকাশ হবে জানিয়ে মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'আমরা প্রায় ৫০০ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এ রিপোর্ট প্রকাশ করি।'
তিনি আরও বলেন, এ সূচকের মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে পারবেন কোন দিকে নজর দেওয়া উচিত। একইভাবে বেসরকারি খাতও ধারণা পাবে অর্থনীতির চাকা কতটা শক্তিশালী।
প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে
সর্বশেষ পিএমআই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সেবা ও নির্মাণ খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের গতি কমেছে এবং কৃষি ও উৎপাদন খাতের দ্রুততর প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে সংকোচনের পর টানা চার মাস প্রবৃদ্ধি হলো কৃষি খাতের।
নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও ইনপুট খরচের মতো সূচকগুলোর জন্য এ খাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
নতুন অর্ডার, নতুন রপ্তানি, কারখানার আউটপুট, ইনপুট ক্রয় ও সরবরাহকারী ডেলিভারিসহ বিভিন্ন সূচকের কল্যাণে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির গতি বেড়েছে।
নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যকলাপ, কর্মসংস্থান ও ইনপুট খরচের মতো সূচকগুলোর জন্য সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়েছে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান তার বক্তব্যে বলেন, সূচক তৈরির উদ্যোগটি ভালো। এটি বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
'তবে তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশে ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কিছুটা চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।
'তবে সম্ভাবনাও রয়েছে অনেক। বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের সূচক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে,' বলেন তিনি।
সিঙ্গাপুর ইন্সটিটিউট অভ পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট এই সূচক প্রণয়নে সহায়তা করেছে। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালন স্টিফেন পো বলেন, সিঙ্গাপুরের পিএমআই প্রণয়ন হয় ১৯৯৮ সালে, এবং তারা এটি প্রতি মাসে প্রকাশ করেন।
পোহ বলেন, এটি সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যাংক ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো এ সূচক দেখে।
এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ যখন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথে এবং মহামারি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তখন পিএমআইয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ।