ঢাকার পশুর হাট: ঈদের একদিন আগেও ক্রেতা কম, লোকসানের শঙ্কায় বিক্রেতারা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের দুলাল হোসেন আরও চার ব্যবসায়ীর সঙ্গে ১৩ জুন ঢাকার গাবতলী গরুর হাটে ৩২টি দেশি-বিদেশি গরু নিয়ে আসেন।
গতকাল পর্যন্ত ২০টি গরু অবিক্রীত থাকায় দুলাল আশঙ্কা করছিলেন, ক্রেতা উপস্থিতি কম থাকার কারণে গরুগুলোকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে হতে পারে।
গত ১৫ বছর ধরে গাবতলী বাজারে গরু বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত আছেন দুলাল হোসেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিগত কয়েকবছরের মধ্যে এবারই গবাদিপশুর সরবরাহ বেশি এবং দামও তুলনামূলক বেশি। কিন্তু পছন্দমতো ক্রেতা মিলছে না।
'আসলে বাজারে কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা অনেক কম পাইকারের তুলনায়। ফলে বেচাকেনাও কম।'
দুলাল আরও বলেন, গরুগুলো আনাসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনার পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। কিন্তু তারা বিনিয়োগ ওঠাতে পারবেন কি না, তা শঙ্কায় রয়েছেন।
রংপুর থেকে ৫ জন অংশীদারের সঙ্গে ৬৫টি ভেড়া ও ছাগল নিয়ে গাবতলী এসেছেন মোসাদ্দিকুল ইসলাম ও গোলাম রাব্বানী। শনিবার দুপুর পর্যন্ত তারা মাত্র ৪টি ছাগল ও ১টি ভেড়া বিক্রি করতে পেরেচেন।
দুলালের মতো তারাও জানালেন, পছন্দমতো ক্রেতা আসছে না। 'কিছু মানুষ এসে অল্প দাম বলে চলে যায়।'
তারা জানালেন, তারা এখন পশু নিয়ে ঢাকার অন্য বাজারে চলে যাবেন।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরেও গাবতলীর মতো একই চিত্র দেখা গেছে। ঈদের একদিন আগেও কোরবানির বাজারে সরবরাহের তুলনায় গবাদিপশুর বেচাকেনা কম হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, অধিকাংশ ক্রেতা ১ লাখ টাকার মধ্যে গবাদিপশু খুঁজছেন কেনার জন্য।
মোহাম্মদপুর থেকে একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়ে গরু কিনতে এসেছেন নূহ আলম। তিনি টিবিএসকে বলেন, 'এক থেকে দেড় লাখের মধ্যে কোনো বড় গরু ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। একটা মাঝারি সাইজের গরুর জন্যও ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার নিচে নামছেন না তারা।'
তিনি বলেন, ঈদের সময় আর বেশি নেই, তাই বাজেটের মধ্যেই একটা ছোট গরু নিতে হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা শামীম পাটোয়ারী বলেন, 'বাজারে পশুর কমতি নেই, কিন্তু দাম জিজ্ঞেস করতেই ভয় লাগে। গতকালকেও একবার এসেছিলাম, দামের কারণে নিতে পারিনি। তাই আজকে সকাল সকাল এসেছি। গতদিনের চেয়ে আজকে একটু কম দাম বলছে। অনেক ঘোরাঘুরি করে ১৩ হাজার টাকায় আনুমানিক ১২ কেজির একটা খাসি নিতে পেরেছি।'
এদিকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত শাহীওয়াল ও ফ্রিজিয়ান জাতের বড় গরুগুলো ৫ শতাংশও বিক্রি হয়নি।
বগুড়া থেকে আবুল হোসেন একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু এনেছেন। কালা বাবু নামক গরুটির দাম ১২ লাখ বললেও বৃহস্পতিবার থেকে সন্তোষজনক ক্রেতা পায়নি।
এছাড়া দিনাজপুর সদর থেকে মো. সাইফুল দুটি বড় জাতের গরু নিয়ে আসেন। রাজা ও বাদশা নামের গরু দুটির পেছনে হাটে আনা ও ব্যবস্থাপনা করতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হলেও এখনো গ্রাহক মিলেনি। একই জেলার পার্বতীপুর থেকে রাজা বাবু নামে একটি গরু এনে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেনি দুই ভাই আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর গরুর হাটগুলোতে কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
দারুসসালাম থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আসাদ মিয়া বলেন, 'এখন পর্যন্ত বাজার থেকে কোনো অসংগতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আমরা প্রায় ৪২ জনের পুলিশ টিম সক্রিয় আছি। জাল টাকার মেশিন আমাদের বুথে আছে। যেকোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এছাড়া হাটগুলোতে পশুচিকিৎসকদের মেডিক্যাল টিমও কর্তব্য পালন করছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, তাদের ২০ জনের টিম দুদিনে প্রায় ১০০ খামারির গরু, ছাগল ও উটকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা দিয়েছে।
তিনি বলেন, পশুপাখির রোগবালাই নজরদারির জন্য রোগ নির্ণয়ের নমুনা সংগ্রহের কাজ করা হচ্ছে।