ব্যাংক লুটপাটকারী পরিচালকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ী নেতাদের
ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত পরিচালকদের দেশ ছেড়ে পালানো ঠেকাতে তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
গতকাল (১৪ আগস্ট) ঢাকায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে শাসা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, 'ব্যাংকে যে লুটপাট হয়েছে, যেসব ব্যাংকের ডিরেক্টর ছিলেন, তারা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন। তাদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার।'
তিনি বলেন, 'তাদের সবগুলো ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে দিত হবে। সব ব্যাংক পরিচালকের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা উচিত। তাদের কাছ থেকে পাই পাই করে হিসাব নেওয়ার পর তাদের দেশ ছাড়তে দেওয়া হোক। নইলে দুদিন পর আবার আগের মতো হবে। দেখা যাবে, ব্যাংকও দখল হয়ে গেছে। আমরা ভয় পাচ্ছি।'
রাজধানীর একটি হোটেলে সিপিডি আয়োজিত 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়: নাগরিক ভাবনা' শীর্ষক সংলাপে এমন কথা বলেন ঢাকা চেম্বারের (ডিসিসিআই) সাবেক এই সভাপতি। তিনি আরও বলেন,
'ইকোনমিক ফান্ডামেন্টালস কী, সে বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার। এর ওপর ভিত্তি করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করব কি করব না, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'
শামস মাহমুদ বলেন, 'কমোডিটি ট্রেড তিন-চারটি বড় কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। একটি কোম্পানি বড়, ব্যাংকের ওপর তাদের প্রভাব ছিল। এখন যেহেতু তারা নেই, আমদানিনির্ভর যেসব পণ্য ছিল, এর একটা প্রভাব আগামী দিনগুলোতে আসবে, যেটা মার্কেটকে অস্থিতিশীল করে দিতে পারে।'
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, 'ব্যাংকিং খাত বর্তমান সরকারের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক এজেন্ডা। আর ব্যাংক খাত যতটা খারাপ বলা হচ্ছে, বাস্তবে এর চেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের অনেকের নাম-পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি।'
তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং খাতে যা দেখানো হয়েছে, সবই মিথ্যা। আমরা যে খেলাপি ঋণ, ঋণের প্রভিশনিং এবং মূলধনের হিসাব দেখাই—সবই মিথ্যা। বাস্তব অবস্থা খুবই ভয়াবহ। আমরা যদি একসাথে কাজ না করি এবং প্রগতিশীলভাবে না এগোই, তাহলে এদেশের উন্নতি করা খুবই কঠিন হবে। আমাদের ব্যাংকিং খাতে জরুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানদন্দ মেনে চলতে হবে।'
সেলিম আরএফ হোসেন আরও বলেন, 'ব্যাংকিং খাতকে যে কী করে গেছে গত দেড় দশকে, বলতে বহু সময় লাগবে।'
তিনি বলেন, '১৪ বছরের বেশি সময় আমরা পুলিশি রাষ্ট্রে বাস করেছি। কথা বললে অনেক কিছু হয়ে যেত। আমরা জানি, ফোনকল "ওমুক জায়গা" থেকে এলে, রাতে দরজায় ঠক ঠক করলে কেমন লাগে।'
'কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনর্গঠন করুন,' বলেন তিনি।
বিডিজবসডটকম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, 'স্বাধীন দেশে কেন আমি স্বাধীনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছি না? ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) টাইপ সংস্থা ভেঙে দেওয়া দরকার। তারা গত ১০ বছরে কীভাবে স্পাইং করেছে, এসব বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার।'
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার অন্যায়, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারের প্রত্যাবর্তন রোধে আইনি ও সাংবিধানিক সংস্কারের আহ্বান জানান। এসব সংস্কার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক মীমাংসা প্রয়োজন বলে তিনি সুপারিশ করেন।
অনুষ্ঠানে বর্তমানে সংবিধান আদৌ আছে কি না, সে প্রশ্ন উঠে আসে বক্তাদের বক্তব্যে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান আছে কি নেই, সেটি সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে। সেটি দেরি করা যাবে না। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাদের গ্রেপ্তার করারও তাগিদ দেন তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, 'বিগত সরকার সাম্প্রতিক ঘটনায় দেশের অর্থনৈতিক সুনাম পরিকল্পিতভাবে ছোট করারা জন্য বক্তব্য দিয়েছে।'
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'অনেকে বলছেন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাদের সতর্ক থাকতে হবে। নইলে অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হবে না। কিছু সংস্কার হয়তো হবে, কিন্তু তারা না থাকলে টেকসইভাবে এগিয়ে যেতে পারব না।'