দেশের অর্থনীতির অবস্থা জানাতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে সরকার, কমিটিপ্রধান দেবপ্রিয়
দেশের অর্থনীতির অবস্থা জানাতে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে সরকার। বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে পরামর্শ ও অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা যাচাই-বাছাই করে এটি প্রকাশ করবে সরকার।
বুধবার (২১ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, 'প্রিপারেশন অব আ হোয়াইট পেপার অন দ্য স্টেট অব দ্য ইকোনমি' শিরোনামে একটি ধারণাপত্র ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে।
সেখানেই দেশের বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্যচিত্র সমৃদ্ধ একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুতের ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, 'প্রস্তাবিত শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ, এসডিজি বাস্তবায়ন ও এলডিসি হতে উত্তরনে করণীয় বিষয়ে প্রতিফলন থাকবে।'
শ্বেতপত্রটি প্রণয়নকালে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও মতবিনিময় করা হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে ৬ আগস্ট ইউএনবি'র সঙ্গে আলাপকালে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে নতুন সরকারকে একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুত করার সুপারিশ করেছিলেন।
'এ ধরনের একটি নথি নতুন সরকারকে সাম্প্রতিক [অর্থনৈতিক] ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগে সহায়তা করতে পারে।'
ড. দেবপ্রিয় সামনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ স্বীকার করে বলেন, "বর্তমান বাস্তবতায় নতুন সরকার 'রাষ্ট্র সংস্কার' কতটা করতে পারবে তা দেখার বিষয়।"
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থ-পাচার ও অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ঋণগ্রহণ ইত্যাদি কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে।
'অর্থ বিভাগের সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পতনকালে শেখ হাসিনা সরকার ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে গেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের যে স্থিতি ছিল, তা বাংলাদেশের ৩টি বাজেটের মোট অর্থ বরাদ্দের সমান,' বলা হয় বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেশি — ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। 'বলা যেতে পারে যে, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে।'
দেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে যে-সব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার একটি তালিকাও উল্লেখ করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
এর মধ্যে রয়েছে কাঠামোগত সংস্কার সাধন, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দূরীকরণ, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, কর ও শুল্ক নীতির সংস্কার এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ইত্যাদি।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার একটি সামগ্রিক চিত্র এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রারম্ভেই সরকারের হাতে থাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।