সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল চেয়ে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
সরকার পতনের পর থেকে সিলেট চেম্বার অব কমার্সে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চেম্বারের বর্তমান অনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদকে 'গোপন কমিটি' আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ব্যবসায়ীরা। কমিটি বাতিলের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় চেম্বারের পাঁচ জন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। আর অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন সভাপতি তাহমিন আহমদ। ফলে একজন পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
জানা গেছে, চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি নির্বাচন ছাড়াই সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। এতে আগের কমিটির সভাপতি তাহমিন আহমদ পুনরায় সভাপতি হন। আর সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে এমদাদ হোসেন ও সহসভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী দায়িত্ব পান।
পর্ষদের দায়িত্বশীলদের দাবি, ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল। ওই সময় তিন ক্যাটাগরিতে ২৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। পরে ২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে ২৩ পদে সমান সংখ্যক প্রার্থী হওয়ায় তাদেরকে ২০২৪-২৬ মেয়াদের জন্য বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নির্বাচনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না। গোপনে সমঝোতার এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবার নির্বাচনী তফশিল সংবাদপত্রে প্রকাশ ও সদস্যদের অবগতির জন্য প্রচার করা হলেও সেই পন্থা অবলম্বন করা হয়নি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সিলেট চেম্বারের সভাপতির পদত্যাগ ও পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলেন ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেন। চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদকে কয়েক দফা তারা অনুরোধ করলেও তিনি পদত্যাগ করেন নি।
এদিকে, ব্যবসায়ীদের অসন্তোষের মুখে গত সপ্তাহে পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আলীমুল এহসান চৌধুরী। এরপর গত শনিবার সিনিয়র সহসভাপতি এমদাদ হোসেন, সহসভাপতি এহতেশামুল হক চৌধুরী, পরিচালক, জহিরুল হক চৌধুরী শিরু ও খন্দকার ইশরার আহমদ রকি পদত্যাগ করেন।
তাদের পদত্যাগের পর গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানায় সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভাপতি তাহমিন আহমদ অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগ। তাই সিনিয়র পরিচালক মুজিবুর রহমান মিন্টুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদকে 'গোপন কমিটি' আখ্যা দিয়ে গত রবিবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বস্তরের ব্যবসায়ীর ব্যানারে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেন ব্যবসায়ীরা। এই সময়ের মধ্যে সকল পরিচালক পদত্যাগ না করলে চেম্বার ভবন ঘেরাও করে তালা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবদুর রহমান রিপন জানান, কোন ধরণের তফশিল ছাড়াই প্রহসনের কমিটি হয়েছে সিলেট চেম্বারে। ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে রেখে ষড়যন্ত্র করে হঠাৎ করে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কাদেরকে দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল, তফশিল কীভাবে ঘোষণা হয়েছিল তারও কোন জবাব দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তাই ব্যবসায়ীরা এই কমিটি বাতিলের দাবিতে মাঠে নেমেছেন।
পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করা আলীমুল এহসান চৌধুরী বলেন, চেম্বার ব্যবসায়ীদের সংগঠন। ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি পদত্যাগ করেছি। আমি অন্য সকল পরিচালকদেরও পদত্যাগ করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছি।