দেশে লিফটের বার্ষিক বাজার ১৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
দেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক ভবনগুলোতে লিফট এখন একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।
উৎপাদক ও আমদানিকারকদের মতে, দেশে লিফটের বাজার এখন বছরে ১৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যেটি প্রতি বছর লিফট ব্যবহার বৃদ্ধির প্রতিফলন।
তবে দেশের লিফটের বাজারের ৭০ শতাংশ এখনো আমদানির ওপর নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও আয়োজকরা। গতকাল (১০ অক্টোবর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হওয়া দুটি লিফট ও এসকেলেটর প্রদর্শনীতে স্থানীয় ও বিদেশি উৎপাদক এবং বিপণনকারীরা অংশগ্রহণ করেছেন।
দুটি প্রদর্শনীর মধ্যে একটি হলো "গ্লোবাল এলিভেটর অ্যান্ড এসকেলেটর এক্সপো ২০২৪", যেটির আয়োজন করেছে ভারতের ভার্গো কমিউনিকেশনস অ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেড। আর অন্যটি "ইন্টারন্যাশনাল বেলিয়া এলিভেটর এক্সপো ২০২৪", যেটি আয়োজন করেছে বাংলাদেশের এলিভেটর এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (বিইইএলআইএ)। প্রদর্শনীগুলো আগামী শনিবার শেষ হবে।
বর্তমানে দুটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান, ওয়ালটন এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ লিফট উৎপাদন ও বিপণন করছে। প্রতিষ্ঠান দুটি এই খাতের ভিত শক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনী ঘুরে ও আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীন, জাপান, ইতালি, তুরস্ক, ফিনল্যান্ড, ভারত ও স্পেনসহ প্রায় ১৫০টি দেশীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের এসকেলেটর, লিফট এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদর্শন করছে।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডিলার ও পরিবেশকদের মাধ্যমে অংশ নিয়েছে।
এই শিল্প সম্পর্কে জানতে, নিজস্ব পণ্য প্রদর্শন করতে এবং দেশে বিদেশে ব্যবসায়িক সুযোগ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে উৎপাদকদের জন্য এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ একটি চমৎকার সুযোগ মনে করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।
ভার্গো কমিউনিকেশন অ্যান্ড এক্সিবিশনের পরিচালক অনিতা রঘুনাথ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার লিফট বিক্রি হয়। দেশের বার্ষিক বাজারের আকার ১৫০০ কোটি টাকার বেশি এবং চাহিদা প্রতি বছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
তিনি উল্লেখ করেন, লিফট এখন একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, "২০২৩ সালে ভারতের লিফটের বাজারের আকার ৪.২৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়িত হয়েছে এবং ২০২৪ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি বার্ষিক ৮.৯ শতাংশ যৌগিক বৃদ্ধির হারে (সিএজিআর) বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৭.৭৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে।"
অনিতা রঘুনাথ আরও বলেন, "এই খাতের মান নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশের সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সময় এসেছে, যাতে দেশে উচ্চমানের লিফট আমদানি ও উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়।"
মেলায় ওয়ালটন নিজস্ব প্যাভিলিয়নে লিফটসহ বিভিন্ন উপাদান বিক্রি করছিল।
ওয়ালটন লিফটের চিফ বিজনেস অফিসার জেনান উল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বর্তমানে ওয়ালটন দেশের মোট লিফটের চাহিদার ১৫ শতাংশ সরবরাহ করছে।
তিনি জানান, তারা জার্মানি, ইউরোপ ও চীনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে লিফট তৈরি করছেন। তিনি বলেন, "ওয়ালটন ২০১৮ সাল থেকে নিজস্ব লিফট উৎপাদন করে আসছে।"
বাংলাদেশ এলিভেটর এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আলম উজ্জ্বল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বর্তমানে তাদের অ্যাসোসিয়েশনে ৯১ জন সদস্য রয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা অনেক বছর ধরে বিদেশি বিশ্ববিখ্যাত ফুজি ইন্টারন্যাশনাল, সিগমা, হিডোস, কনে, হ্যান্ডক ইত্যাদি ব্র্যান্ডের লিফট ও এসকেলেটর আমদানি করি।"
তিনি স্থানীয় লিফট কারখানাগুলোর জন্য সরকারি নীতিমালা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ এলিভেটর এসকেলেটর অ্যান্ড লিফট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০টি প্রতিষ্ঠান লিফট বিক্রি করছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি লিফটস প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০০টি নিজস্ব ব্র্যান্ডের লিফট স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে বলে জানিয়েছেন ব্র্যান্ডের সহকারী ব্যবস্থাপক (কর্পোরেট সেলস) রাজীব।
২০২০ সাল ছিল প্রপার্টি লিফটসের নিজস্ব ব্র্যান্ডের অধীনে লিফট উৎপাদনের যাত্রা শুরুর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
রাজীব বলেন, "কনে, এসআরএইচ, এবং এমপির মতো ব্র্যান্ডের পরিবেশক হিসেবে আমরা প্রতি বছর প্রায় ১২০০টি লিফট বিক্রি করি। চাহিদা প্রতি বছরই বাড়ছে।"
ফরচুন বিজনেস ইনসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক লিফট ও এসকেলেটর বাজারের আকার ৮৮.৫৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়িত হয়েছে। এই বাজার ২০২৪ সালে ৯৪.০৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩২ সালের মধ্যে ১৬৭.৬২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।