উপসাগরীয় অঞ্চলে নকল মার্কিন যুদ্ধজাহাজে ইরানের হামলা
নকল একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ তৈরি করে 'অন্যরকম' এক সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে তাতে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান।
গত মঙ্গলবারের ইরানের রিভোল্যুশনারি গার্ডের এই মহড়া নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলে বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়। হরমুজ প্রণালীতে হওয়া ইরানের এই মহড়ার নাম প্রফেট-১৪।
বুধবার (২৯ জুলাই)দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এইসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিকে আমেরিকা এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে। পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা যখন বাড়ছে, ঠিক এমন সময়ই ইরানের পক্ষ থেকে এই মহড়া চালানো হলো।
ইরান যে সামরিক মহড়া চালিয়েছে তাতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া মহড়ায় দীর্ঘ পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কিছু অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেন এই মহড়ার মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নিলফোরুশান।
তিনি বলেন, যুদ্ধ-প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এ মহড়া চালায়। ইরানের হরমুজগান প্রদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল, হরমুজ প্রণালী ও পারস্য উপসাগরে মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
খবরে বলা হয়েছে, এই মহড়ায় আইআরজিসি'র নৌ ও বিমান শাখা একযোগে অংশ নেয়। এতে স্থল, সমুদ্র ও আকাশে মহড়া চালায় তারা। এ বিষয়ে নিলফোরুশান এক বিবৃতিতে বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইরানের সামিরক বাহিনীর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এভাবে মহড়া চালানো হয়েছে।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে তেহরানের পরমাণু ইস্যুতে সম্পর্ক বহুদিন ধরেই বেশ খারাপ। আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে। আর এই ঘটনার মধ্যেই রেভোলিউশনারি গার্ডের গুরুত্বপূর্ণ এক কম্যান্ডারকে হত্যা করেছে আমেরিকা। এরপরই দুই দেশের মধ্যে 'যুদ্ধ পরিস্থিতি'ও তৈরি হয়। তবে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর অবস্থা শান্ত ছিল এতদিন হয়।
কিন্তু আপাতত দৃষ্টিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও ইরান এই মহড়ার মধ্য দিয়ে আমারিকার প্রতি তাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি সেটি আবার নতুন করে জানান দিলো। পুরো মহড়াটি ইরানের টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, জনগনকে ইরানের সামরিক দক্ষতা দেখানো।
এদিকে আমেরিকা ইরানের এই অভিনব মহড়ায় বেশ বিস্মিত। প্রথমে তারা পুরো বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেনি। উপসাগরীয় অঞ্চলে দুইটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজে 'হাই অ্যালার্ট' ঘোষণা হয়েছিল। তবে তারা যখন বুঝতে পারে, এটি ইরানের সামরিক মহড়া; তখন তারা এর কড়া সমালোচনা করে।
উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন নৌ বাহিনীর এক কমান্ডার বলেন, 'আমেরিকা যখন এই অঞ্চলে তার সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে উপসাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে, ইরান তখন নিজেদের আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে। এই ঘটনা এই অঞ্চলের শান্তি প্রক্রিয়ায় যে কোনো সময় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।'
এদিকে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ফুটেজে দেখা যায়, নকল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে একের পর এক মিসাইল আক্রমণ চালাচ্ছে ইরান। নকল ফাইটার জেটও দেখা গেছে তাতে।
এই মহড়া নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান ইচ্ছে করেই এই মহড়া চালিয়েছে। আমারিকা ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে ইরান বুঝিয়ে দিতে চেয়েছে যে, উপসাগরীয় অঞ্চলে এখনো তাদের শক্তি অটুট।
এদিকে আব্বাস নিলফোরুশান জানান, তারা ২০১৫ সালে ঠিক একইরকম এক মহড়ায় আরেকটি নকল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, 'ইরানি জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে আমাদের প্রতিরক্ষা নীতি সম্পূর্ণ আত্মরক্ষামূলক। কিন্তু রণকৌশলে আমাদের নীতি সম্পূর্ণ আক্রমণাত্মক। যুদ্ধ শুরু হলে আমরা কাউকে ছেড়ে কথা বলব না।'
তিনি বলেন, 'শত্রুর শক্তি ও দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে সমরাস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরি করেছি। এ ছাড়া, শক্তিমত্তার সঙ্গে ইরানি জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রাখার নিশ্চয়তা দেয়ার লক্ষ্যে মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।'
অপরদিকে মার্কিন নৌবাহিনীর বাহরাইন-ভিত্তিক ফিফথ ফ্লিটের মুখপাত্র কমান্ডার রেবেকা রেবারিচ বলেছেন, তারা ইরানের সামরিক মহড়ার বিষয়ে সর্বদা সচেতন।
তিনি বলেন, মার্কিন নৌবাহিনী নৌ-পরিবহণের স্বাধীনতার জন্য তার অংশীদারদের সাথে সামুদ্রিক সুরক্ষা স্বার্থে প্রতিরক্ষামূলক মহড়া চালায়। অন্যদিকে ইরান আক্রমণাত্মক মহড়া পরিচালনা করে। কারণ তারা ভয় দেখাতে চায়। তবে এই মহড়া ওই অঞ্চলে জোটের কোনো অভিযানকে ব্যাহত করেনি। হরমুজপ্রণালী কিংবা এর আশেপাশে বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহেও কোনো প্রভাব ফেলেনি।