কমলা হ্যারিসের সাক্ষাৎকার: আমি আমার পরিচয় নিয়ে গর্বিত
কমলা হ্যারিস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী এবং প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলের একটি থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন পেয়েছেন। তার মা শ্যামলা গোপালান ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। বারাক ওবামার মতো এই মিশ্র জাতিসত্তা বিভিন্ন পরিচয়ের মানুষের মধ্যে তাকে পৌঁছে দিয়েছে।
'ইন্ডিয়া অ্যাবরোড' নামের একটি গণমাধ্যমের নির্বাহী সম্পাদক ও প্রধান রাজনৈতিক সংবাদদাতা আজিজ হানিফফার নেওয়া কমলা হ্যারিসের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে সিএনএন। সাক্ষাৎকারটিতে হ্যারিসের ভারতীয় পরিচয়ের ভূমিকা প্রকাশ পেয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতির পাল্টা আখ্যান দেয় অভিবাসী দম্পতির সন্তান কমলা হ্যারিসের পরিচয়।
আজিজ হানিফা: সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ব্যাপারে আপনার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা কী?
কমলা হ্যারিস: আমার মা তার ভারতীয় পরিচয় নিয়ে খুবই গর্বিত ছিলেন, আমাকে ও আমার বোন মায়াকেও শিখিয়েছেন নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত হতে। আমরা আগে প্রায় প্রতি বছরই ভারতে যেতাম। আমার জীবনে প্রভাব রাখা আরেকজন মানুষ হলেন আমার নানা পি.ভি. গোপালান। তিনি একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি বেসান্ত নগরে (তৎকালীন মাদ্রাজ) থাকাকালীন তার সঙ্গে সৈকতে হাঁটতে যাওয়ার স্মৃতিগুলো আমার শৈশবের অন্যতম প্রিয় স্মৃতি।
তিনি প্রতিদিন সকালে তার বন্ধুদের সঙ্গে সৈকতে হাঁটতে যেতেন; তারা সবাই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তারা রাজনীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল, ন্যায়বিচার- এসব নিয়ে কথা বলতেন। তারা হাসতেন, মতামত দিতেন, তর্ক করতেন। দায়িত্বশীল, সৎ হতে শেখার ক্ষেত্রে আমার ওপর শক্তিশালী প্রভাব ছিল এগুলোর।
ভারত বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ। আমি আজ কী করি এবং কে- তার ওপর আমার পরিচয়ের এই অংশটির বেশ বড় ধরনের প্রভাব আছে।
আজিজ: তাহলে কি বলা যায়, আপনার নাগরিক অধিকার কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা এসেছিল আপনার নানার সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে হাঁটার মাধ্যমে, ঠিক যেমনটা এসেছিল আপনার বাবা-মায়ের ছাত্র জীবনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনে জড়িত থাকার ঘটনা থেকে?
কমলা: আমার পরিচয় ও আমার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাদের সকলের ভূমিকা আমার কাছে সমান। আমার নানা-নানী সব সময় বার্কলেতে আমাদের সঙ্গে দেখা করতেন। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সকল শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো সবসময় উপভোগ করেছেন তারা।
আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বভ্রমণ এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি জানার একটি সুবিধা হচ্ছে, আপনি সত্যিই বুঝতে পারবেন এবং দেখবেন- মানুষ যে ভাষায়ই কথা বলুক না কেন, তাদের মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে অনেক বেশি সাদৃশ্য রয়েছে।
আজিজ: ববি জিন্দালের মতো জনসমর্থিত কিছু ভারতীয়-আমেরিকান রাজনীতিবিদ নির্বাচনী প্রচারণায় জয়লাভের পর ভারতীয়-আমেরিকান ঐতিহ্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখতে চান। জাতিগত পরিচয় এক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করে? এব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
কমলা: আমি কে- আমার জীবনে আমার পরিবার, আমার সম্প্রদায়, মেন্টর, সহকর্মী এবং বন্ধুদের প্রভাব নিয়ে আমি গর্বিত।
বিষয়টি এমন নয় যে, একটি গ্রহণ করে অন্যটি বাদ দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এটি জাতিগত বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। মানুষ ও যেকোনো বিষয়কে আমাদের একমাত্রিকভাবে দেখা বন্ধ করতে হবে। এর পরিবর্তে আমাদের দেখতে হবে, বেশিরভাগ মানুষই আসলে অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টি, এবং এটিই বাস্তবতা।