কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট মারা গেলে বা শারীরিকভাবে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে কি ঘটে?
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে। বর্তমান অবস্থার অবনতি হলে- তিনি দায়িত্বপালনকালেই মারা যেতে পারেন বা শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়বেন, সামান্য হলেও এমন ঝুঁকি রয়েছে।
শুক্রবার ট্রাম্পকে জরুরি চিকিৎসার জন্য ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপরও, ওয়াশিংটনের শীর্ষ নীতি-নির্ধারকদের খুব কম সংখ্যকই গত শুক্রবার এনিয়ে আলোচনা করার আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ঝুঁকি যতই কম হোক, মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদ অনির্দিষ্টকালের জন্য শূন্য রাখা যায় না। নির্বাচিত কোনও রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে- তার জায়গায় কে আসবেন- অনেক আগেই তার সুরাহা করে রেখেছে মার্কিন সংবিধান এবং প্রতিনিধি পরিষদ বা কংগ্রেস।
অনিশ্চিত সময়ে বহিঃশত্রু এবং আভ্যন্তরীন অস্থিরতা থেকে জাতীয় সুরক্ষার কথা বিবেচনা করেই নেওয়া হয়- এমন পরিকল্পনা।
প্রেসিডেন্টের অবর্তমানে তাকে প্রতিস্থাপনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে সবার আগে থাকবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এব্যাপারে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট মারা গেলে বা দায়িত্বপালনে শারীরিকভাবে অক্ষম হলে- ভাইস প্রেসিডেন্ট তখন অস্থায়ীভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। গত শুক্রবার করা পরীক্ষায় ৬১ বছরের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েনি। ফলে জরুরি মুহূর্তে তার পদপ্রাপ্তি অনেকটা নিশ্চিত।
মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশধনীর আওতায় বলা হয়েছে; ''প্রেসিডেন্ট তার দপ্তর ছাড়তে বাধ্য হলে বা তার মৃত্যু অথবা পদত্যাগ ঘটলে, সেক্ষেত্রে উপ-রাষ্ট্রপতি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।''
এ অবস্থায় আইন অনুসারে ৪৮তম ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল আর পেন্স রাষ্ট্রপতি পদে শপথ নিতে পারেন।
ঐতিহাসিক নজির:
মার্কিন ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল নয়, বরং নয়বার দেখা গেছে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
পুর্বসূরি প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র একমাস পরই মারা গেলে যুক্তরাষ্ট্রের দশম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন জন টেইলর।
একইভাবে, ১৮৫০ সালে প্রেসিডেন্ট জাকারি টেইলরের মৃত্যুর পর ১৩তম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন মিলার্ড ফিলমোর।
দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টখ্যাত আব্রাহাম লিঙ্কন আততায়ীর হাতে মৃত্যুর পর তার জায়গায় ১৭তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন আন্ড্রু জনসন।
১৮৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড-ও ক্ষমতাগ্রহণের সাড়ে ছয়মাসের মাথায় আততায়ীর হাতে খুন হন। তখন ২০তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন চেস্টার অ্যালান আর্থার।
১৯০১ সালে ২৫তম রাষ্ট্রপতি ম্যাককিনলে- হত্যার পর মাত্র ৪৩ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের কনিষ্ঠতম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন থিওডর রুজভেল্ট।
১৯২৩ সালে আকস্মিকভাবে প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি হার্ডিং- এর মৃত্যুর পর ৩০৯তম রাষ্ট্রপতি হন কেলভিন কোলিজ।
১৯৪৫ সালে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের মৃত্যুর পর- ৩৩ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন হ্যারি এস ট্রুম্যান।
১৯৬৩ সালে আরেক জনপ্রিয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির মৃত্যুর পর ৩৬তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন লিন্ডন বি জনসন।
অতি-সাম্প্রতিক সময়ে এই ঘটনা শেষবার ঘটে ১৯৭৪ সালে । জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া বা ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা ছাড়াই- ওই বছর প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন শিল্পপতি থেকে রাজনৈতিক বনে যাওয়া জেরাল্ড ফোর্ড।
এতো গেল প্রেসিডেন্টের অবর্তমানে তার শীর্ষ সহকারীর দায়িত্ব গ্রহণের ঘটনা। কিন্তু, ভাইস প্রেসিডেন্টের কিছু হলে; ওই অবস্থায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে- তার সিদ্ধান্ত নেবে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ।
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা যায় এখনও, ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প। এখানে আগামী কয়েকদিন তার স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন চিকিৎসকরা।