ক্যাপিটলে সহিংসতা: আমেরিকানরা ‘হতবাক’ এবং ‘বিরক্ত’
বুধবার মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে সহিংসতার ঘটনায় পুরো বিশ্বই স্তম্ভিত।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের গদি ছিনতাই হতে দেখে আমেরিকানরা কী ভাবছে তা জানতে কিছু ভোটার প্যানেলের সদস্যদের কাছে মতামত চাওয়া হয়।
সিমোন পিটার
গৃহযুদ্ধের সময়ে উগান্ডাতে বেড়ে ওঠা সিমোনের; গত বছর সে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করে। স্নাতকোত্তরের এ শিক্ষার্থী হুঁশিয়ার করলেন যে, পরিস্থিতি ঠিক হলেও, "গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না।"
আমি বিরক্ত কিন্তু অবাক হইনি। আগেই ভেবেছিলাম এমন কিছু ঘটতে পারে । কিন্তু এটি যে খোদ রাজধানীতেই হবে সেটি ভাবিনি। ইনি সেই প্রেসিডেন্ট - গ্রীষ্মে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে যার লোকেরা বলেছিল , তারা আইন ও শৃঙ্খলার অনুগামী। এখন কোথায় গেল তাদের আইনশৃঙ্খলা যখন তারা ক্যাপিটলে আক্রমণ করে বসল এবং আমেরিকার পতাকাকে ট্রাম্পের পতাকার সাথে বদলে দিল! ইতিহাসে বিগত ২০০ বছরেও এমন কিছুর নজির নেই। তাতেই বোঝা যায়, এই লোকটি কতটা বিপজ্জনক।
নভেম্বরে উগান্ডায় যখন বিরোধীদলকে গ্রেফতার করা হলো তখন মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং গুলিবিদ্ধ হয়। গ্রীষ্মে ক্যাপিটল ভবনটি সুরক্ষিত ছিল এবং তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে থাকে।
এতে সহজেই বোঝা যায় যে, তাঁরা (ট্রাম্প সমর্থকেরা) আসলে সংঘবদ্ধ হচ্ছিল। আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম যে, এমন কিছু ঘটবে কিন্তু আমাদের অবচেতন মন ভাবেনি, সাদা মানুষেরা হুমকিস্বরূপ। এটি এ দেশেরই নির্মাণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও একে এভাবেই দেখে থাকে।
টেইলর গোল্ডেন
টেইলর কট্টর ট্রাম্প সমর্থক এবং ইলেকশন পরবর্তী একটি র্যালিতে যোগ দিতে সম্প্রতি তিনি ওয়াশিংটনেও ভ্রমণ করেছেন। পেশায় ফটোগ্রাফার এই নারী দাঙ্গার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন বামপন্থী উগ্রপন্থীরাই এ দাঙ্গা-হাঙ্গামার জন্য দায়ী।
যা দেখতে হলো তা খুবই বেদনাদায়ক এবং বিক্ষোভকারীদের আচরণ একদম অনাকাঙ্ক্ষিত; এমন ট্রাম্প সমর্থকদের আমি চিনি না। এটি যদি সত্যিই কনজারভেটিভরা ঘটিয়ে থাকে তবে আমি তার নিন্দা করি। সহিংসতার কোন অজুহাত হতে পারে না। তবে এতে ট্রাম্পের জন্য আমার সমর্থন বদলাবে না। তিনি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় না এলেও মানুষের তাঁর জন্য ভালবাসার কমতি হবে না।
এর অর্থ হলো, আমরা এখনো ২০২৪ এর আশা জিইয়ে রেখেছি, উনি না হলেও হয়তো ওনার ছেলেমেয়েরা আবারো নির্বাচনে সামিল হবে ।
বাইডেন দায়িত্ব নিলে আগামী চার বছর আমাদের দেশের জন্য কোন সুআশা নেই। আমি আজ নগর থেকে বেরিয়ে রিপাবলিকান কাউন্টির এক শহরতলীতে যাচ্ছি । বাইডেন অধ্যুষিত ডেমোক্র্যাটিক কাউন্টিগুলো কেমন হতে যাচ্ছে তা ভেবে আমি ভীত!
আমরা সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদের দিকে তীর ছুঁড়ে দিচ্ছি। প্রেসিডেন্টের আসনে যিনিই থাকুক, আমি দেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত; আমাদের এখনো অনেক কিছুতে সংস্কার প্রয়োজন। দলমতের উর্ধ্বে আমরা আমাদের মানবতা এবং আলিঙ্গনের সাধারণ বন্ধনটি যেন খুঁজে পাই এটাই প্রত্যাশা করি।
জেমস ক্লার্ক
জেমস মনেপ্রাণে একজন রিপাবলিকান ছিলেন যিনি ক্যাপিটল হিলে দলের হয়ে বিশ বছরেরও অধিক সময় দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু ২০২০-নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ডেমোক্র্যাটদের জন্য ভোট দেন। ৬ জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া দাঙ্গায় তিনি রীতিমত বিস্মিত । তাঁর মতে, এটি দেশের ইতিহাসে কালো দাগ হয়ে থাকবে।
আমি নিজেও ভেবেছিলাম যে, বিক্ষোভে যাব- একটি চিহ্ন নিয়ে যাতে লেখা থাকবে, "রিপাবলিকানরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে "। আমার ভাই এর মতে, আমি যদি সত্যিই যেতাম তবে আজ লাশের সংখ্যা চার না, আমাকে নিয়ে পাঁচ হতো। আমি হতবাক তাদের দেখে যারা সেখানে মাস্ক ছাড়াই গিয়েছে এবং ক্যামেরায় যাদের চেহারা এসেছে। এদের মাঝে অনেকেরই জেলে জায়গা হতে যাচ্ছে। পুলিশি বাঁধা টপকে একটি সুরক্ষিত ভবন আক্রমণে অংশ নেয়াটা কোন হালকা বিষয় নয়।
আমার কিছু বন্ধু বলেছে, পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হতে পারত; কিন্তু বিশ্বাস করুন ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে বলতে পারি ইতোমধ্যে অনেক খারাপ আমরা দেখে ফেলেছি। গৃহযুদ্ধের সময়টা এর চেয়েও মন্দ ছিল। 'রিকন্সট্রাকশন পিরিয়ড' চলাকালে দক্ষিণে অনেক বেশি সহিংসতা দেখা গেছে। কাল যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা তবু দেশের মানুষ উতরে যাবে।
প্রেসিডেন্ট-বিজয়ী জো বাইডেনের বক্তব্য গতকাল আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। অবশেষে আমরা এমন কাউকে পেলাম যাকে সত্যিই প্রেসিডেন্টের মত শোনায়! গত চার বছর আমরা এর অভাব বোধ করেছি।
আ'কায়লা সেলেরস
আ'কায়লা একজন কলেজ শিক্ষার্থী যিনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন সমর্থন করেন। তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারীরা ক্যাপিটলে দাঙ্গাবাজদের রীতিমত 'আদর' করছিল। তাদের এ ধরণের আচরণেই বোঝা যায় যে, পুলিশি সংস্কার কতটা প্রয়োজনীয়!
এটা এতই বিরক্তিকর যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তাঁরা ক্যাপিটল আক্রমণ করল অথচ পুলিশ তাদের সাথে সহনীয় আচরণ করছিল, ভান করে যাচ্ছিল। গ্রীষ্মেও যখন ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার আন্দোলন হলো, তখন জীবন বাজি রেখে মানুষজন আহত হয়েছে; অনেককেই বন্দি করা হয়েছে।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, চার্লস্টনে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলের সময়ও আমাদের চোখেমুখে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। তবু সে আন্দোলন ছিল উদ্দীপনাময়। এবং সেটা কেন? কারণ আমরা একটি উদ্দেশ্য নিয়ে সে বিক্ষোভে যোগ দেই। একজন মানুষকে পুলিশেরা মিলে মেরে ফেলল। আমরা তাঁর প্রতিবাদে সামিল হলাম।
আর ক্যাপিটলের বিক্ষোভকারীদের মুখ ভার কেন? তাঁরা ব্যথিত কারণ আমরা গণতন্ত্রের ভিতর বাস করি এবং সেই গণতন্ত্র তাদের পছন্দের পথ ধরে আসছে না তাই!
নির্বাচনী এক বিতর্কে যখন ট্রাম্প বললেন, "পিছনে অবস্থান করুন এবং পাশে অবস্থান করুন" এর অর্থ কী এটি ছিল? এটা উত্তাল ঝড়ের আগের শান্ত পরিস্থিতি। আমার তো মনে হয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে; কিন্তু কামালা (হ্যারিস) এবং জো (বাইডেন) পরিবর্তন এবং আশার প্রতীক।
তাদের (ট্রাম্প সমর্থকেরা) ভাল লাগুক বা না লাগুক, আমেরিকা অনেক প্রগ্রসর একটি দেশ হতে যাচ্ছে এবং এখানে আরও অনেক নতুন নতুন পরিবর্তন আমরা দেখতে পাব।