গবেষণা বলছে ম্যালেরিয়ার ওষুধে করোনা নিরাময় হতে পারে
করোনা নিরাময়ে বিদ্যমান ওষুধপত্রের ক্ষমতা পরীক্ষা করছেন গবেষকরা। এর ধারাবাহিকতায় পরীক্ষা করা হচ্ছে ম্যালেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ।
ইতোমধ্যেই ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্রতিরোধে ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোকুইন ওষুধ করোনা আক্রান্ত রোগীদের ওপর প্রয়োগ করে ফ্রান্স বেশ উল্লেখযোগ্য সফলতা লাভ করেছে। এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ এটি প্রয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চীনের উহান নগরের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানান, হাইড্রক্সিক্লোকুইন গোত্রের একটি ভিন্ন ব্র্যান্ড প্লেকুইনিলের ব্যবহার বেশ কার্যকর ফল দিতে পারে। বুধবার 'সেল ডিসকভারি' নামক একটি মহামারি রোগ গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধসূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
এমনটা হলে বিশ্বজুড়ে ১০ সহস্রাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া কোভিড-১৯ ভাইরাসটির বিস্তার রোধের সম্ভাবনা বাড়বে। আরও কমবে নতুন ওষুধের গবেষণা ব্যয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে প্লেকুইনিল। এটি ম্যালেরিয়াসহ রিউমেটিক আর্থারাইটিস এবং অন্তর্দাহ সৃষ্টিকারী বেশ কিছু রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
তবে সবচেয়ে বড় উপকার হবে সময় সাশ্রয়ের মাধ্যমে। প্রচলিত জীবাণু নিরোধকের সঠিক চিকিৎসায় বেঁচে যেতে পারে অগণিত মানুষের প্রাণ। তবে সরকারি গবেষণাগারে পরীক্ষার আগে মার্কিন কর্তৃপক্ষ এখনই প্লেকুইনিলকে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। খবর ফোর্বসের।
ফ্রান্সে ব্যাপক সাফল্য
এর আগে ফ্রান্সের মার্সেই শহরে চিকিৎসা বিজ্ঞানী দিদিয়ার রোল্টের নেতৃত্বে একদল গবেষক করোনা আক্রান্ত রোগীদের দেহে প্লেকুইনিল পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেন। সোমবার ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন রোল্ট।
গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, প্লেকুইনিলের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মোট ৩৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী অংশ নেন। এদের সবাইকে ৬০০ মিলিগ্রাম করে প্লেকুইনিলের ডোজ দেওয়া হয়। এভাবে তিনদিন পর দেখা গেছে আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগী করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সাতদিনের মাথায় করা করোনা টেস্টে সফলতার হার ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়ালে অংশ নেওয়াদের মাঝে ১৬ জন ছিলেন পরীক্ষামূলকভাবে সংক্রমিত এবং বাকি ২০ জন ইতোমধ্যেই করোনায় চিকিৎসাধীন রোগী। এদের মাঝে ছয়জন রোগীকে আলাদা করে প্লেকুইনিল এবং অপর আরেকটি জীবাণুরোধক অ্যাঝিথ্রোমাইসিন দেওয়া হয়।
তিনদিন পর করা পরীক্ষায় দেখা যায়, এই ছয়জনের মাঝে পাঁচজনই করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছেন; তার মানে সফলতার হার ৮৩ শতাংশ। আর ছয়দিন পর বাকি একজনও করোনামুক্ত হলে এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে শতভাগ সফলতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
রোল্টের গবেষণার প্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়টি এই পরীক্ষার আওতা আরও বাড়ানোর অনুমোদন দেয়। দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল ফ্রান্স-থ্রি'র বরাতে জানা গেছে, এবার লিলে শহরে নতুন গবেষণা শুরু হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি হাইড্রক্সিক্লোকুইন নিয়ে গবেষণার কথা জানিয়েছেন। এসব গবেষণা সফল হলে করোনায় ভারাক্রান্ত বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমূল বদলে যেতে পারে। ভয়ঙ্কর এই বৈশ্বিক মহামারির দুঃসময়ে এটাই মানুষকে উদ্দীপনা জোগানোর মতো সবচেয়ে বড় আশার কথা।