ট্রাম্প যে নিঃশব্দে যাবেন না তার আভাস দিয়েছিলেন বহুভাবেই
ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সহজে ক্ষমতা ছাড়বেন না তা আগেই অনুমান করা গেছিল, তার শাসনামলের কার্যক্রমে এর পূর্বাভাসও মিলেছে বহুবার।
পরাজয় অস্বীকারের মানসিকতা, গর্বভরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করা, উগ্র ডানপন্থী ও কট্টর আমেরিকান জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের প্রতি সমর্থন- তার এসব কাজেই প্রতীয়মান হয়ে ওঠে তিনি খুব সহজে পরাজয় স্বীকার করে নেবেন না।
গত বুধবার ট্রাম্পের সমর্থকরা মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলার পরই এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায়। সংঘর্ষে একজন পুলিশ অফিসারসহ মোট ৫জন নিহত হয়।
ট্রাম্পের সমর্থকেরা ক্যাপিটল ভবনে এতো নির্দ্বিধায় আক্রমণ চালায়, তারা নিজেরাই নিজেদের কর্মকান্ড সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে সরাসরি প্রচার করে। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছিল; তারা যাই করুক, ট্রাম্প তাদের সমর্থনেই থাকবে।
কারণ দিনশেষে, যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রেসিডেন্টই তার সমর্থকদের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট সমর্থক গভর্নরকে অপহরণের পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। তিনি সেসময় এ পরিকল্পনার ব্যাপারে বলেছিলেন, "হয়তো এটি সমস্যাজনক, আবার হয়তো না।"
ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করতে পছন্দ করেন না তা তিনি তার শাসনামলের বিভিন্ন সময় তিনি তার বক্তব্য ও কাজের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। দেউলিয়া হওয়ার অবস্থাকে সফলতা হিসেবে প্রচার করা, সরকারি নানা কার্যক্রমের ব্যর্থতাকে গৌরবময় বিজয় হিসেবে প্রচার করা করা এসব ছিল তার নিত্যনৈমিত্যিক আচরণ।
সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজয়ের পর আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকার সময়েই যুক্তরাষ্ট্রও 'ব্যানানা রিপাবলিকে' পরিণত হতে যাচ্ছে এমন বিতর্কও চাউর হয়েছে।
বিগত চার বছরে হাস্যরসাত্মকভাবে বা কখনো সরাসরিই তার সমর্থকদের এধরণের কর্মকান্ডে সমর্থক যুগিয়ে গেছেন ট্রাম্প।
"এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত এমনটাও বলতে পারছি না আমরা। দুঃখজনকভাবে, আমরা এমন আশঙ্কা করেছিলাম আমরা," নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যাপিটল হামলার ব্যাপারে এমন মন্তব্যই করেন।
ট্রাম্পের ভাতিজি ম্যারি ট্রাম্পও একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও তার পরিবারের সদস্যের দৃষ্টিকোণ থেকেই এসব ব্যাপার ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
"তার এধরণের আচরণ নতুন কিছু নয়, তিনি ছোটবেলা থেকেই আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি সবসময়ই পরাজয়, পরাজিতত অবস্থানের পরিণতির ব্যাপারে ভীত ছিলেন। নির্বাচনের পর জীবনে প্রথমবারের মতো নিজের কর্মকান্ডের প্রভাবের দায়িত্ব নিতে এ ভয়ও জেকে বসে তার মনে।" মার্কিন নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর পিবিএস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছিলেন ম্যারি ট্রাম্প।
নির্বাচনে ভোট দেয়ার এক মাস আগেই মেইল ভটের মাধ্যমে জালিয়াতি হবে এমন তথ্য প্রচার করতে থাকেন তিনি। তার সমর্থকদেরও মেইল ভোট দেওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেন তিনি। নির্বাচনের পর বিভিন্ন রাজ্যে তার করা মামলাগুলোও প্রত্যাখ্যাত হয়।
মামলায় পরাজয়ের পরও ক্ষান্ত দেননি তিনি।
২০১১ সালেই তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেছিলেন, "আমি পরাজয় ঘৃণা করি। পরাজয় মেনে নিতে পারিনা আমি।"
তবে নির্বাচনে পরাজয়ের পর তার অন্ধভক্তরা ছাড়া সব সমর্থনের জায়গাই হারান তিনি। তার মতোই তার সমর্থকেরাও তার পরাজয় মেনে নিতে পারেনি।
ট্রাম্পের মিথ্যা তথ্য ও বর্ণবাদী ষড়যন্ত্র প্রচারের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ। ক্যাননের মতো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারকারী দলকেও সমর্থন যুগিয়েছেন তিনি। আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, "আমি তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা। আমি শুধু জানি তাদের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তারা আমাকে ভালোবাসে।
২০১৭ সালে ভার্জিনিয়ায় শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের সহিংসতার ঘোষনায়ও তাদের সমর্থেনে তিনি বলেছিলেন, 'উভয় পক্ষেই ভালো মানুষ আছে, এমন ঘটনার জন্য উভয়পক্ষই দায়ী।'
'অ্যান্টি ডেফ্যামেইশন লীগ সেন্টার অন এক্সট্রিমিজম'এর পরিচালক ওরেন সিগ্যাল বুধবারের ঘটনার ব্যাপারে বলেন, ট্রাম্পের শাসনামলের উগ্রপন্থী কর্মকাণ্ডের চূড়ান্ত প্রকাশই বুধবারে ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা।
"আপনি যদি এ ঘটনায় অবাক হন, তাহলে আপনি আসলে বিগত বছরগুলোর অবস্থা খেয়ালই করেননি।" বলেন ইন্টেগ্রিটি ফার্স্ট নামের নাগরিক অধিকার সংস্থার অ্যামি স্পিটালনিক।
এ ঘটনার পর গত শুক্রবার ট্রাম্প বাইডেনের অভিষেকের দিন উপস্থিত থাকবেন না বলেও জানিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত তিনি তার প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তা স্বীকার করে নিলেও, তিনি হয়তো কখনোই পরাজয় স্বীকার করে নেবেন না।
- সূত্র: এপি