ট্রাম্প সমর্থকদের সশস্ত্র হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে কড়া নিরাপত্তা
ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনে হামলার দশ দিন পেরিয়ে গেলেও শঙ্কা আর ভয় এখনও রয়েই গেছে! সামনে, এ ধরনের প্রাণঘাতী ঘটনার পুনারাবৃত্তি রোধে সারা দেশ থেকেই ন্যাশনাল গার্ডের হাজারো সদস্যকে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে আনা হচ্ছে; ক্যাপিটলের রাস্তায় রাস্তায় বসানো হচ্ছে ব্যারিকেড ।
২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেককে কেন্দ্র করে সহিংস বিক্ষোভের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যে এবং ডিসট্রিক্ট অব কলম্বিয়াতে (ডিসি) সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ট্রাম্প সমর্থকরা সশস্ত্র মিছিল নিয়ে নামতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।
মিশিগান, ভার্জিনিয়া, উইসকনসিন, পেনসিলভেনিয়া এবং ওয়াশিংটনের পাশাপাশি এক ডজনেরও বেশি রাজ্য নিরাপত্তা জোরদারে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছে । শহরতলি ও ক্যাপিটল ভবনের আশেপাশে রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা; একটু পরপরই দেখা যাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের সহিংসতার মত ঘটনা যেন আর না ঘটে তার পূর্ব সতর্কতার অংশ হিসেবে এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে যৌথ অধিবেশন চলার মধ্যেই ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থক। এ ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার চারটি মার্কিন কংগ্রেসনাল কমিটির ডেমোক্র্যাটিক নেতারা জানান যে, তারা সে ঘটনা পর্যালোচনা করে হুমকির বিষয়ে কি কি জানা ছিল, তথ্য কতটুকু ভাগ করা হয়েছে এবং দেশের বাইরের কারো প্রভাব ছিল কিনা জানতে এফবিআই এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দিয়েছেন।
টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক সেফটির পরিচালক, স্টিভ ম্যাকক্র শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, 'সহিংস উগ্রপন্থীরা' অস্টিনে "অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপ' পরিচালনার জন্য সশস্ত্র বিক্ষোভের পরিকল্পনা করতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নির্দেশ করছে।
মিশিগানেও রাজধানী ল্যানসিং-এ ক্যাপিটল ভবনকে ঘিরে একটি বেষ্টনী তৈরি করা হযয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। হুমকির বিষয়ে উদ্বিগ্নতা থেকে আইনসভা আগামী সপ্তাহের বৈঠকও বাতিল করেছে।
একদিকে মহামারী অন্যদিকে নিরাপত্তার প্রশ্ন দু'য়ে মিলে এবার বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের সিংহভাগ অনলাইন জুড়েই থাকবে। বিধিনিষেধ মেনে এবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ২০ হাজারের বেশি উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
শনিবার সন্ধ্যায় শপথ অনুষ্ঠান উদ্বোধনী কমিটির "স্বাগত অনুষ্ঠান" অনলাইনেই সংঘটিত হয় যেখানে ইউনিয়ন নেতা, কর্মী এবং হুপি গোল্ডবার্গের মতো খ্যাতিমান অভিনেতাও উপস্থিত ছিলেন।
"ভুল করা যাবে না- সামনে যে পথ রয়েছে -তা সহজ নয়", জানান ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিজয়ী কামালা হ্যারিস।
"কিন্তু আমেরিকা প্রস্তুত, সাথে আমি এবং জো (বাইডেন) ও।"
স্থানীয় উগ্রবাদী
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে অভিনব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল মল বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এফবিআই সতর্ক করেছে, নির্বাচনের জালিয়াতি ও কারচুপি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভুয়া দাবির পক্ষে যেসব রাজ্যে ট্রাম্প–সমর্থকেরা নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে সভা–সমাবেশ করেছে; সেসব এলাকায় পরিকল্পিত সহিংসতা হতে পারে।
বিবিসি জানায়, এই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই গত শুক্রবার ডিসি থেকে এক অস্ত্রধারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে এমন পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে যা সরকারের ইস্যুকৃত নয়। নিরাপত্তা চৌকিতে তল্লাশি চালানোর সময় ওই ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫০৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে ওয়েসলে অ্যালেন বিলার নামের ওই ব্যক্তিকে পরে পুলিশ ছেড়ে দেন। ওয়াশিংটন পোস্টকে অ্যালেন বিলার জানান যে ওয়াশিংটনে তার আগ্নেয়াস্ত্র আনার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি জানিয়েছেন যে তিনি একটি বেসরকারি সুরক্ষা সংস্থার সাথে কাজ করতেন।
"ডিসিতে হারিয়ে যাওয়ার পরে আমি একটি চৌকিতে পৌঁছাই কারণ আমি গ্রামের মানুষ," তিনি বলেন।
কর্তৃপক্ষ ওয়াশিংটনে নিরাপত্তা জোরদার করার মধ্যেই এই আটকের এবং পরে মুক্তির ঘটনা ঘটলো। রাজধানী থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত বহু রাস্তা কংক্রিটের ব্যারিকেড এবং ধাতব বেড়া দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে।
আটকের সংবাদে ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি ডন বায়ার তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, শহরটি সত্যিকার অর্থেই ঝুঁকির মধ্যে আছে।
টুইটারে তিনি লেখেন, "যাদের পক্ষে সম্ভব এ সপ্তাহে ক্যাপিটল এবং মলের আশেপাশের এলাকা যেন তারা এড়িয়ে চলেন।"