সমুদ্রের তলায় জমছে অগণিত মাইক্রোপ্লাস্টিক
প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়ছেই। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় হিসেব করে দেখা গিয়েছে প্লাস্টিক দূষণের ফলে সমুদ্রের তলদেশে জমা হয়েছে অন্তত এক কোটি ৪৪ লক্ষ টন প্লাস্টিকের টুকরো বা মাইক্রপ্লাস্টিক। সমুদ্রের তলদেশ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সমুদ্রের উপরিভাগে যে পরিমাণ প্লাস্টিক ভেসে বেড়াচ্ছে, তলদেশে জমা হয়েছে তার চেয়ে ৩০ গুণ বেশি প্লাস্টিক। অস্ট্রেলিয়ার সরকারি বিজ্ঞান সংস্থা সিএসআইআরও-র গবেষণায় এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
পৃথিবীর নদী, নালা, খাল-বিলে জমা প্লাস্টিক শেষ পর্যন্ত গিয়ে জমা হয় সমুদ্রের তলদেশে। সিএসআইআরও-র গবেষকরা অস্ট্রেলিয়ার উপকূল থেকে প্রায় তিনশো কিলোমিটার দূরের ছয়টি আলাদা স্থানের প্রায় তিন কিলোমিটার গভীরতা থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করেছেন।
৫১ ধরনের নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখতে পেলেন, পানির ভর বাদ দেওয়ার পর প্রতি গ্রাম নমুনায় গড়ে ১.২৬ মাইক্রোপ্লাস্টিক টুকরোর উপস্থিতি রয়েছে। প্লাস্টিকের অংশ ভেঙে ছোট ছোট আকারে পরিণত হলে পাঁচ মিলিমিটার পর্যন্ত মোটা টুকরোগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সিএসআইআরও-র মুখ্য গবেষণা বিজ্ঞানী এবং সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রটির লেখক ড. ডেনিস হার্ডেস্টি জানান সমুদ্রের এত গভীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া মানেই পৃথিবীর প্রত্যন্ত কোণেও পৌঁছে গিয়েছে প্লাস্টিক। তিনি বলেন, পানির সব স্তরেই এই প্লাস্টিক রয়েছে। অতএব আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে, সমুদ্র আমাদের আবর্জনা ফেলার স্থান নয়।'
যদিও সমুদ্রের একেবারে তলায় পাওয়া প্লাস্টিক টুকরোগুলোর বয়স কত বা সেগুলো কোন ধরনের জিনিসের অংশ ছিল, তা সঠিক অনুমান করতে পারেননি পরিবেশবিদরা। তবে মাইক্রোস্কোপের তলায় এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে সেগুলো কোনও না কোনও সময়ে ভোগ্য পণ্যের অংশ ছিল।
গবেষকেরা তাদের প্রাপ্ত প্লাস্টিকের পরিমাণ এবং অন্যান্য সংস্থার গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন পৃথিবীর সমুদ্রের তলদেশে জমা হয়েছে অন্তত ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টন প্লাস্টিক। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা এও জানিয়েছেন প্রতি বছর সেই সঙ্গে সমুদ্রের তলদেশে এসে জমা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক।
করোনা পরিস্থিতিতে আবার বিগত ছয় মাস ধরে নতুন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কেবল মানুষই নয়, করোনা-সংক্রমণের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে এ বার পরিবেশও। এ ক্ষেত্রেও খলনায়ক মারণ ভাইরাস কোভিড ১৯। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত সার্জিক্যাল মাস্ক এবং গ্লাভস। অভিযোগ, হংকং-এর সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে আমেরিকার শহরাঞ্চল- সর্বত্রই দূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে পরিত্যক্ত মাস্ক ও গ্লাভস, পিপিই। বিশেষ করে সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে করোনা রুখতে ব্যবহৃত এই উপকরণগুলোর কারণে।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান