‘মহাকাশ ভ্রমণের নতুন যুগে স্বাগতম’, পৃথিবীতে ফিরে রিচার্ড ব্র্যানসন
ঘন্টাব্যাপী সফল মহাকাশ যাত্রা শেষে গতকালই পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী রিচার্ড ব্র্যানসন। নিজ মহাকাশ অভিযান সংস্থা ভার্জিন গ্যালাকটিকের তৈরি রকেট বিমানে চেপে গতকাল রোববার (১১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো রাজ্যের আকাশে পাড়ি জমান তিনি।
এক ঘন্টার এ যাত্রায় ইউনিটি-২২ নামের মহাকাশযানটি ঘণ্টায় তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে ওড়ে।
মহাশূন্যের দ্বারপ্রান্ত থেকে পৃথিবীতে অবতরণের পর এ যাত্রাকে জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেছেন ব্রানসন।
মহাকাশে ব্রানসনের ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে ছিলেন দুজন পাইলট- ডেভ ম্যাকে ও মাইকেল মাসাউকি এবং ভার্জিন গ্যালাকটিকের তিন কর্মচারী- বেথ মোজেস, কলিন বেনেট ও সিরিশা বান্দলা।
ছয় যাত্রীর প্রত্যেকেই এ অভিযানের মধ্য দিয়ে ভরশূন্যতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
যাত্রা শেষে নিউ মেক্সিকোর স্পেসপোর্ট আমেরিকাতে ফিরে আসার সময় একটি লাইভ ফিডে ব্র্যানসন বলেন, "ভার্জিন গ্যালাকটিকের দুর্দান্ত দলটিকে অভিনন্দন জানাই, যাদের ১৭ বছরের কঠোর পরিশ্রম আমাদের আজকের পর্যায়ে এনেছে"।
"মহাকাশকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই আমরা। মহাকাশ ভ্রমণের নতুন যুগে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম"।
২০০৪ সাল থেকেই মহাশূন্যে বাণিজ্যিক ভ্রমণ চালু করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন।
২০০৭ সালেই এই ভ্রমণ চালুর কথা ছিল, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির রকেটে প্রাণঘাতী এক বিস্ফোরণের পর উদ্যোগটি মাঝপথে থেমে যায়।
মহাকাশ বিশ্লেষক লিও এনরাইট আল জাজিরার কাছে ব্র্যানসনের এ ভ্রমণ প্রসঙ্গে বলেন, "কোন মহাকাশযাত্রা এর চেয়ে অধিক মসৃণ হতে পারত না এবং এবার রিচার্ডের মহাকাশ বাণিজ্যের প্রতি সাধারণ মানুষ আবারও উৎসাহ বোধ করতে শুরু করবে"।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মোজাভে মরুভূমির উপর পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় তাদের আরেকটি রকেট বিমান বিধ্বস্ত হয়, এতে বৈমানিকদের একজন নিহত এবং অপরজন গুরুতর আহত হন।
এনরাইট বলেন, "প্রতিষ্ঠানটি আবারও তাদের মহাকাশ ভ্রমণের জন্য টিকিট বিক্রির বড় ঘোষণা নিয়ে আসতে পারে"।
"২০১৪ সালের সে করুণ দুর্ঘটনা এবং ক্ষয়ক্ষতির পর তারা টিকেট বিক্রির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। হতে পারে এবার আরও বড় কোন চমক নিয়ে আসছেন রিচার্ড ব্র্যানসন"।
এবারের মহাকাশ ভ্রমণের ঘোষণা দিয়ে এ মাসের শুরুতে রিচার্ড ব্র্যানসন নিজের টুইটারে লেখেন, "আমি সব সময় স্বপ্ন দেখে এসেছি। আমার মা আমাকে কখনোই হাল না ছাড়তে এবং তারার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াতে শিখিয়েছেন। জুলাইয়ের ১১ তারিখে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের দিন"।
অবশেষে সত্যিই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করলেন ব্র্যানসন।
আর এক সপ্তাহ পরেই ৭১-এ পা দিতে যাওয়া ব্র্যানসন বিবিসিকে বলেন, "আমি আশা করছি আগামী ১০০ বছরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ মহাশূন্যে সফর করতে পারবেন।"
এবারের ভ্রমণটি ছিল ভার্জিন গ্যালাকটিকের ২২তম পরীক্ষামূলক ফ্লাইট; এবারই প্রথম একটি সম্পূর্ণ ক্রু নিয়ে রকেটযাত্রা পরিচালিত হলো।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও কিছু পরীক্ষামূলক ফ্লাইট চালনার ঘোষণা দিয়েছে তারা। ২০২২ সাল থেকে নিয়মিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর প্রত্যাশা তাদের।
তবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল মহাকাশ যাত্রার কেবল কয়েক মিনিটের অভিজ্ঞতার জন্যই খরচ করতে হবে প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার।
এদিকে পৃথিবীতে ফিরে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্র্যানসন একটি লটারির ঘোষণা দেন যার ভাগ্যবান দু'জন বিজয়ী পাবেন মহাকাশ ভ্রমণের দুটি ফ্রী টিকিট; এছাড়া যেকোন ঐচ্ছিক অনুদান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এনজিও 'স্পেস ফর হিউম্যানিটি'তে প্রদান করা হবে জানান তিনি।
এটি এমন এক ভ্রমণ যেখানে কোন ডিসকাউন্ট বা ছাড়ের সুযোগ নেই। তবু এর চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে, ইতিমধ্যে কয়েকশ মানুষ তাদের ভ্রমণের রিজারভেশন করে রেখেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস ধারণা করছে, ২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশ পর্যটনের সম্ভাব্য বার্ষিক বাজার মূল্য ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।
মহাকাশ অভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব, মানুষের কাছে এখন মহাকাশযাত্রার ঝুঁকি এবং প্রয়োজনীয় সতকর্তা ও সুরক্ষাব্যবস্থা তুলে ধরা।
রোববারের সফল উড্ডয়নের পাশাপাশি ব্র্যানসনের জয় কিন্তু অন্যখানে। প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোসের আগেই মহাশূন্য পাড়ি দিতে পেরেছেন তিনি।
বেজোসের রকেট ইঞ্জিন তৈরির প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন আগামী ২০ জুলাই মহাকাশ ভ্রমণের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। অ্যাপোলো-১১ নভোযানের মধ্য দিয়ে চাঁদে মানুষের পদার্পণের ৫২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২০ জুলাই ব্লু অরিজিনের নিজস্ব রকেট উড্ডয়নকেন্দ্র থেকে বেজোসের এই মহাকাশ যাত্রা শুরু হবে।
অন্তরে যাই থাকুক, সামাজিক মাধ্যমে ঠিকই ব্র্যানসনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বেজোস। ইনস্টাগ্রামে তিনি লেখেন, "সফল এ ভ্রমণের জন্য অনেক অভিনন্দন। আমারও এই দলে যোগ দিতে আর তর সইছে না"।
- সূত্র-বিবিসি ও আল জাজিরা