১৫ বছরে কয়েকশ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছে ব্রিটেন
গত ১৫ বছরে কয়েকশ মানুষের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। অভিবাসন নীতি নিয়ে কর্মরত আইনজীবীদের সংগঠন ফ্রি মুভমেন্ট ওয়েবসাইটের পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
তবে যাদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকার নিয়মিত তথ্য প্রকাশ করে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ১৫ বছর আগে আইন প্রয়োগে শিথিলতা আনার পর অন্তত ৪৬৪ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে এক ব্যক্তি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে রাষ্ট্রহীন ছিলেন।
ফ্রি মুভমেন্টের সদস্য সিজে ম্যাককিনে বলেন, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের (হোম অফিস) তথ্যের ঘাটতি অসন্তুষ্টজনক। তার মতে, অনেকক্ষেত্রে বিষয়টি যুক্তরাজ্য থেকে নির্বাসিত করার মতোই গুরুতর। তিনি আরও বলেন, নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কখন কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা ন্যূনতম স্বচ্ছতাবোধ থেকে সংসদ ও জনগণের সামনে প্রকাশ করা উচিত।
নাগরিকত্ব হারানো ভুক্তভোগীদের মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম। ১৫ বছর বয়সে আইএসে যোগ দিতে বাড়ি ছাড়েন শামীমা। নাগরিকত্ব পুনর্বহালের মামলায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার পরাজয় ঘটে।
ম্যাককিনে দেখেন যে ২০০৬ সাল থেকে জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ১৭৫ জনের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়। অন্যদিকে জালিয়াতির অভিযোগ থাকায় ২৮৯ জন ব্যক্তি নাগরিকত্ব হারান। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ক্ষমতা ব্যবহৃত হয়নি।
ম্যাককিনে জানান তিনি ঐতিহাসিক তথ্য অধিকারে আইনের সাহায্যে এবং 'অস্বচ্ছ পরিসংখ্যান প্রকাশনা' থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ১৯১৪ সাল থেকে চালু হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে এর ব্যবহার। তথ্য অধিকার থেকে সংগৃহীত উপাত্ত অনুসারে, ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এধরনের নয়টি ঘটনা ঘটে। কিন্তু ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ১৪৮ জনের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৮ সালে এরকম ৭৩টি ঘটনা ঘটে, ২০১৯ সালে ৮২টি এবং ২০২০ সালে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ৪২টি ঘটনা ঘটে।
চলতি সপ্তাহে দ্য অবজার্ভারের প্রকাশিত একটি ঘটনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৪০ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাবা-মা বাংলাদেশ থেকে হলেও তার জন্ম লন্ডনে। বাংলাদেশে আসার পর তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়।
অভিযোগে তাকে ইসলামী চরমপন্থী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে এর আগেও তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
তবে অভিযোগ থাকলেও এরকম বিষয়ে কখনোই তাকে গ্রেপ্তার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এমনকি তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের কোনো প্রমাণও নেই।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ায় তিনি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েন। হোম অফিস স্বীকার করলে তার নাগরিকত্ব পুনর্বহাল হয়।
যে বিলের কারণে মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ আসছে সেই বিতর্কিত ন্যাশনালিটি এবং বর্ডারস বিল জোরদার করার কথা ভাবছে হোম অফিস। এর ফলে কারও ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আগে তাকে নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
নাগরিকত্ব হারিয়ে রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই ভুক্তভোগীর আইনজীবী বলেন, "মানুষকে নাগরিকত্ব বঞ্চিত করার অর্থ তাদের পরিচিতি, নিরাপত্তা বোধ এবং সুরক্ষা চাওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া। নৈতিকভাবে তা সমর্থনযোগ্য নয়।"
ব্যক্তি কিংবা তার আইনজীবীর অজান্তে পূর্ববর্তী কোনো বিচারিক তদারকি ছাড়াই যখন গোপন প্রমাণের ভিত্তিতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, "ক্ষমতার প্রয়োগ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে হোম অফিস স্বচ্ছতা রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।"
এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল আইন কার্যকর রয়েছে। কেবল জালিয়াতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভ করে কিংবা জঙ্গিবাদী, চরমপন্থী ও গুরুতর সাংগঠনিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর তা প্রয়োগ করা হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।