কাতার বিশ্বকাপ ২০২২: ভেঙে ফেলার জন্যেই তৈরি যে স্টেডিয়াম
একসময় পারস্য সাগরের তীরের অঞ্চলটিতে জীবনের চিহ্ন ছিল না; সেখানে এখন নানা রঙ এর বাহার এবং জনমানুষে পরিপূর্ণ। আর কিছুদিন পরেই সেখানে শোনা যাবে ৪০ হাজার দর্শকের চিৎকার।
বলা হচ্ছে কাতারের রাস আবু আবুদ স্টেডিয়ামের কথা; এটিই ইতিহাসের প্রথম ফুটবল স্টেডিয়াম যা আসলে ভেঙ্গে ফেলার জন্যই তৈরি।
দোহা বন্দরের উপকন্ঠে ৯৭৪টি শিপিং কন্টেইনারের দিয়ে গঠিত রাস আবু আবুদ স্টেডিয়ামে এবার ২০২২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারফাইনাল পর্যন্ত সাতটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
সবগুলো কন্টেইনারই পরিশোধিত স্টীল থেকে তৈরি এবং গায়ে ৯৭৪ সংখ্যাটি লেখা, যা কাতারের ডায়ালিং কোড এর প্রতীক। এটি একই সাথে দেশটির টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রতিশ্রুতি ও নিজস্ব পরিচয়কে তুলে ধরছে।
টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশ, রিমুভেবল সিট, কন্টেইনার এবং ছাদ পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলা হবে এবং কাতার কিংবা কাতারের বাইরের অন্য কোনো খেলার অনুষ্ঠানে বা সাধারণ অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হবে।
রাস আবু স্টেডিয়ামের একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার, মোহাম্মদ আল আতওয়ান সিএনএনকে বলেন, '৪০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার এই ভেন্যুর প্রতিটি জিনিসই ভেঙে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব এবং সেগুলো দিয়ে ২০ হাজার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি স্টেডিয়াম বানানো যাবে। আর এটাই এই স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য্য।'
অন্যান্য সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি, কাতার এও প্রত্যাশা করছে যে এই স্টেডিয়ামটি ভবিষ্যত ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের অগ্রদূত হবে।
টেকসই হবে কি?
জুনে প্রকাশিত, ফিফার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২২ বিশ্বকাপ সব মিলিয়ে ৩৬ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করবে; যা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত রাশিয়া বিশ্বকাপের চাইতে ১৫ লাখ টন বেশি।
তাই কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে উপসাগরীয় দেশ, কাতারের এই প্রচেষ্টা যে সাড়া ফেলবে তাতে সন্দেহ নেই।
টুর্নামেন্টের অবকাঠামোগত নির্মাণের সময়েও টেকসই নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কাতার। দেশটির আয়োজক কর্তৃপক্ষ আরও দাবি করেছে, ভবন নির্মাণে তারা এমন উপকরণ ব্যবহার করেছে যা সর্বোচ্চ উপযোগিতা দিবে এবং কার্বন নিঃসরণ, আবর্জনার পরিমাণ ও জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব কমাবে।
টেকসই ধারণক্ষমতা এবারের আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। সে কারণেই গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে সারা বিশ্বে বিশ্বকাপের সকল অবকাঠামোকে ঘিরে গাছ লাগানো হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপ দেখতে আগতদেরকেও তারা সুপারিশ করবে কিভাবে তারা ভ্রমণ, বাসস্থান ও খাদ্যের মত খাতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে পারে।
কাতার আরও জানিয়েছে, বিশ্বকাপের সমাপ্তি ঘোষণার পরপরই তারা দুটি বৃহৎ সৌর প্রজেক্ট বানাবে, যেগুলো টুর্নামেন্ট চলাকালীন কার্বন নির্গমনকে পুষিয়ে দেয়ার জন্য পরবর্তী ১০-১৫ বছর পর্যন্ত কাজ করতে থাকবে।
কাতার-২০২২ এর বাকি সব ভেন্যুর মতো রাস আবু আবুদ স্টেডিয়ামের এ অস্থায়ী বন্দোবস্ত এই প্রমাণ করে যে, দেশটি কম সময়ে কম খরচে অবকাঠামো নির্মাণের দিকেও নজর দিচ্ছে।
আয়োজকদের তথ্যমতে, ৪৮ লাখ বর্গফুটের এই স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এ বছরের শেষ দিকে এটি পুরোপুরি ব্যবহার উপযোগী হবে বলে আয়োজকরা জানান।
সমুদ্রের হিমশীতল হাওয়ায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ:
রাস আবু আবুদ স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে বাইরে পা রাখলেই দোহার পশ্চিম উপসাগরীয় দিগন্তের সাথে দেখা মিলবে ভক্তদের। আর যখন সূর্য ডুবে যাবে, তখন একপাশে আকাশচুম্বী ভবন ও অন্যপাশে স্টেডিয়ামের মধ্যে বর্ণিল আলোর বিনিময় সমুদ্রতীরে প্রতিফলিত হয় এবং শহরকেও আলোকিত করে তোলে।
বিশ্বকাপের জন্য কাতারের নির্ধারিত সকল স্টেডিয়ামেই অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা একটি শীতল-আরামদায়ক আবহাওয়া তৈরি করে।
কিন্তু, রাস আবু আবুদ স্টেডিয়ামে সেই কৃত্রিম শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না, কারণ পার্শ্ববর্তী সমুদ্র থেকেই সেখানে শীতল বাতাস আসে।
আল-আতওয়ান মনে করেন, এই স্টেডিয়ামের মূল অবস্থানটি খুবই সুবিধাজনক এবং এখানে একাধিক প্রজেক্টের কাজ করা যাবে বিধায় এর দারুণ ভবিষ্যত আছে।
- সূত্র: সিএনএন