চেনা সাকিবে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ বাংলাদেশের
এক ম্যাচেই সব অপেক্ষা ফুরালো। রোমাঞ্চকর জয়ে এক যুগ পর জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। আর এই ম্যাচে দেখা মিললো চিরচেনা সাকিব আল হাসানের। দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে খুঁজে ফেরা বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার দলের অপেক্ষার সঙ্গে নিজের অপেক্ষাকেও ছুটিতে পাঠালেন। প্রথম ম্যাচে বল হাতে নিজেকে ফিরে পাওয়া সাকিব এদিন ব্যাট হাতে একাই জেতালেন বাংলাদেশকে।
রোববার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিলো তামিম ইকবালের দল। জিম্বাবুয়ের মাটিতে ১২ বছর পর সিরিজ জয়ের স্বাদ নিলো বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়েতে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের এটা সপ্তম সিরিজ জয়। এর মধ্যে তিনটি সিরিজ জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দুটি সিরিজ জয় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। একটি কেনিয়ার বিপক্ষে এবং বাকিটি আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে। ২০১৯ সালের সেই ত্রিদেশীয় সিরিজের পর বিদেশের মাটিতে প্রথম সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
সিরিজ জয়ের তৃপ্তি মিললেও দ্বিতীয় ওয়ানডে জিততে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২৪০ রান তোলে। জবাবে সাবধানী শুরুর পরও দিক হারিয়ে কাতরাতে থাকে বাংলাদেশ। সেখান দলকে টেনে তুলে ৯৬ রানের হার না মানা দারুণ এক ইনিংসে জয় ছিনিয়ে আনেন ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান।
আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে ফেরেন সাকিব। ওই সিরিজে ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ছুটি নেওয়া সাকিব পরে মাঠে ফিরে কঠিন সময়ই পার করছিলেন।
আইপিএল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন সাকিব। তার খারাপ সময়ের শেষের শুরু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে। ১৫৫ রানের বিশাল জয়ে ব্যাট হাতে সাকিবের অবদান ছিল ১৯ রান। তবে বল হাতে রীতিমতো স্বাগতিকদের কোণঠাসা করে রাখেন তিনি। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নিয়ে মাশরাফিকে ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে যান তিনি। ওয়ানডেতে এখন তার উইকেট ২৭৬টি, মাশরাফির ২৬৯টি।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে চিরচেনা চেহারায় হাজির হন সাকিব। প্রথমে বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। এই ইনিংস খেলার পথে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক হয়েছেন দেশসেরা এই ক্রিকেটার। এদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ হাজার রান পূর্ণ হয়েছে তার। তাতে বিশ্বের দ্রুততম অলরাউন্ডার হিসেবে ১২ হাজার রান ও ৫০০ উইকেটের মালিক হলেন তিনি। ৩৪৮তম আন্তর্জাতিক ম্যাচে এই মাইলফলক স্পর্শ করলেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার।
সাকিবের আগে আর একজন অলরাউন্ডার এই মাইলফলকে পৌঁছাতে পেরেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে এই মাইলফলক গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ক্রিকেটার জ্যাক ক্যালিস। তবে ম্যাচ খেলার দিক থেকে ক্যালিসের চেয়ে অনেক দ্রুততম সাকিব। ৪২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে এই মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন ক্যালিস।
রোববার জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে সাবধানী শুরু করে বাংলাদেশ। এরপরও দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। দলীয় ৩৯ রানে আউট হন তামিম। অধিনায়ক ২০ রান করে ফেরার পর দিক হারায় বাংলাদেশ। দ্রুত ফিরে যান লিটন দাস ও মোহাম্মদ মিঠুন। ১১ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ।
এদিন আর পথ ভোলেননি সাকিব। এক পাশ আগলে খেলে যেতে থাকেন তিনি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৫৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব। ২৬ রান করে মাহমুদউল্লাহও ফিরে যান। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন বেশি সময় টিকতে পারেননি। মিরাজ ৬ ও আফিফ ১৫ রান করে থামেন।
সাকিবকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। অষ্টম উইকেটে সাকিবের সঙ্গে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ার পথে ২৮ রানের ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। সাকিব ১০৯ বলে ৮টি চারে ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের লুক জঙ্গুয়ে ২টি এবং ব্লেসিং মুজারাবানি, রিচার্ড এনগারাভা, ওয়েসলে মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজা একটি করে উইকেট নেন।
এরআগে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন ওয়েসলে মাধেভেরে। এ ছাড়া টাডিওয়ানাশে মারুমানি ১৩, রেজিস চাকাভা ২৬, অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর ৪৬, ডিওন মায়ার্স ৩৪ ও সিকান্দার রাজা ৩০ রান করেন।
জিম্বাবুয়েকে ২৪০ রানের মধ্যে আটকে রাখার পথে বল হাতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। তরুণ বাঁহাতি এই পেসারের শিকার ৪টি উইকেট। সাকিব আল হাসান ২টি এবং তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন একটি করে উইকেট নেন।