টোকিও থেকে পালানো বেলারুশ অলিম্পিয়ান সিমানোস্কায়া নিজের পদক নিলামে তুলেছেন
টোকিওতে দলের নির্দেশ অনুযায়ী স্বদেশগামী বিমানে উঠতে অস্বীকৃতি জানিয়ে শিরোনামে এসেছিলেন বেলারুশিয়ান স্প্রিন্টার ক্রিস্টসিনা সিমানোস্কায়া। এবার স্বদেশী ক্রীড়াবিদদের সাহায্য করতে নিজের পদক নিলামে তুলছেন তিনি।
আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই ২৪ বছর বয়সী দৌড়বিদ বলেন, 'অন্য অ্যাথলেটদের অর্থনৈতিক বা যেকোনো ধরণের সাহায্য লাগলে যেন তারা সেটা পেতে পারে সেজন্য আমি আমার পদক নিলামে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিলামের টাকা (বেলারুশিয়ান) স্পোর্টস সলিডারিটি ফাউন্ডেশনে যাবে। এবং এই ফাউন্ডেশন ক্রীড়াবিদদের একত্রিত করতে এবং প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে সাহায্য করবে।'
১ আগস্ট গুগল ট্রান্সলেটের সাহায্যে টোকিও পুলিশের সাহায্য চেয়ে সারা বিশ্বের নজরে এসেছিলেন সিমানোস্কায়া। অলিম্পিক চলাকালে প্রকাশ্যে নিজের কোচদের সমালোচনা করা সিমানোস্কায়া স্বদেশে নিজের নিরাপত্তার ভয় পাচ্ছিলেন। বেলারুশগামী বিমানে উঠতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পরবর্তীতে তিনি আশ্রয় নেন পোল্যান্ডে।
এ ব্যাপারে বেলারুশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। সেই দাবিকে নাকচ করে দিয়ে সিমানোস্কায়া বলেন, 'বেলারুশে ফিরে গেলে আমার সাথে দুটোর মধ্যে একটি ঘটতো। হয় আমাকে পাগলাগারদে পাঠানো হতো, অথবা জেলখানায়।'
সর্বশেষ ইউরোপিয়ান গেমসে রৌপ্য জেতা এই দৌড়বিদের এবারে অলিম্পিকে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে ট্র্যাকে নামতে দেয়া হয়নি।
২০১৯ ইউরোপিয়ান গেমসে দলগত রিলেতে রৌপ্য জিতেছিলেন সিমানোস্কায়া। সেই রুপার পদকই এবার ইবে-তে ১৭ লাখ টাকার প্রারম্ভিক মূল্যে নিলামে তুলেছেন তিনি।
টোকিও পরবর্তী যাত্রা
সিমানোস্কায়া জানান, টোকিওতে তার কোচরা তাকে একটি বাড়তি রেসে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছিল। ২০০ মিটার স্প্রিন্টের দৌড়বিদ সিমানোস্কায়ার কোন কথা না শুনেই তাকে ৪*৪০০মিটার রিলেতে অংশগ্রহণ করার নির্দেশ দেয় কোচরা।
কোচদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলেও তার কোন কথা কানেই তুলেননি তারা। কোচদের এরকম তাচ্ছিল্য ও শ্রদ্ধাহীনতা মেনে নিতে পারেননি এই দৌড়বিদ। তাই ইন্সটাগ্রামে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বসেন অগত্যা।
সিমানোস্কায়া জানান, 'এরপর তারা (কোচরা) আমার রুমে আসেন। এবং জানান, উপর থেকে নির্দেশ এসেছে। আমাকে অলিম্পিক থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাকে ২০০ মিটারেও অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। আমাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমাকে শুধু বলতে হবে, আমার একটা ইনজুরি হয়েছে। এবং দেশে গিয়ে নীরব থাকতে হবে। তাহলে আমাকে আর কোন শাস্তি দেওয়া হবে না।'
এরপর যা ঘটে তা কোন হলিউড মুভিকেও হার মানাবে।
'ওইদিন প্রধান কোচ আমার রুমে এসে জানান, আমার হাতে আর ৪০ মিনিট সময় আছে সবকিছু গুছিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওনার,' বলেন সিমানোস্কায়া।
ভীতসন্ত্রস্ত সিমানোস্কায়া তখন দেশে থাকা তার আত্মীয়স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তার দাদীমা তখন তাকে জানান, দেশীয় চ্যানেলগুলোয় সিমানোস্কায়াকে
নিয়ে যাচ্ছেতাই বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। কিন্তু এরপরও দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন দৌড়বিদ।
বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে যখন গাড়িতে উঠেছেন, তখন হঠাৎ সিমানোস্কায়ার দাদীমা তাকে ফোন দিয়ে নিষেধ করেন দেশে ফিরতে। দেশে ফিরলে তার বিপদ হতে পারে বলে জানান তিনি।
টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে এসে তিনি গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে জাপানী পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে সমর্থ হন। পুলিশের সহায়তায় তখন তিনি বেলারুশিয়ান কর্মকর্তাদের হাত থেকে রক্ষা পান। এবং তাকে আর স্বদেশগামী বিমানে উঠতে হয়নি।
পরবর্তীতে এই দৌড়বিদ জাপানের পোলিশ অ্যাম্বাসির দ্বারস্থ হন। অ্যাম্বাসি তার জন্য একটি মানবিক ভিসা মঞ্জুর করে।
সিমানোস্কায়া জানান, 'এখন আমি পোল্যান্ডে। এখানে আমি সম্পূর্ণ নিরাপদে আছি।'
গত সপ্তাহে, সিমানোস্কায়াকে নিজের ইভেন্টে অংশগ্রহণ না করতে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা করায় দুই বেলারুশিয়ান অলিম্পিক কোচ, ইউরি মোইসেভিচ ও আরতুর শুমাককে অলিম্পিক ভিলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গত আগস্টে হয়ে যাওয়া একটি বিতর্কিত নির্বাচনের পর গত এক বছরে বেলারুশজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে সরকার। বিরোধীরা বেলারুশ প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে নির্বাচন চুরি এবং বেআইনি গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে।
লুকাশেঙ্কোকে অনেকেই ইতিমধ্যে 'স্বৈরশাসক' খেতাবও দিচ্ছেন। তবে তিনি এসব দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। এবং বলেছেন, সিমানোস্কায়াকে ভুল বুঝানো হয়েছে।
সোমবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেলারুশ অলিম্পিক কমিটির উপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। তবে কমিটির প্রধান, প্রেসিডেন্ট-পুত্র ভিক্টর লুকাশেঙ্কোর এসব নিষেধাজ্ঞাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বেলারুশিয়ান স্পোর্টস সলিডারিটি ফাউন্ডেশন বলেছে, তারা সিমানোস্কায়ার পদক থেকে আসা অর্থ পিছিয়ে পড়া ও শোষণের শিকার হওয়া ক্রীড়াবিদদের পিছনে খরচ করবে।
ভিন্ন মতের জন্য চাপে থাকা ক্রীড়াবিদদের সমর্থন করে আসছে এই ফাউন্ডেশন। নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতেও কাজ করে তারা।
- সূত্র: আল জাজিরা