জিম্মি করার ১০ দিন পর জাহাজে দোভাষী আনে দস্যুরা; মুক্তিপণ ভাগ হয় ৩ অংশে
"জিম্মি করার ১০ দিন পর সোমালিয়া থেকে তারা [জলদস্যু] জাহাজে দোভাষী নিয়ে আসে। দোভাষী এসেই আমাদেরকে বলে, 'তোমাদের মালিকপক্ষ ভালো। তারা আমাদের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করেছে। তোমরা খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে।'"
সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বাড়িতে ফিরে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) নিজেদের জিম্মিদশার নানা অভিজ্ঞতার কথা সাংবাদিকদের জানান এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান। এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) চট্টগ্রাম বন্দরে এসে নামেন তিনি ও তার সহকর্মীরা।
আইয়ুব খান লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া গ্রামের বিনন বেপারী বাড়ির মৃত আজহার মিয়ার ছোট ছেলে।
গত ১২ মার্চ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার পথে ২৩ নাবিকসহ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর মুক্তিপণ দেওয়ার পর ৩৩ দিনের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় জাহাজ ও নাবিকেরা।
কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজটির নাবিক আইয়ুব খান বলেন, মুক্তিপণ পাওয়ার পর সে অর্থ তিনভাগে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে ধাপে ধাপে জাহাজ ত্যাগ করে জলদস্যুরা।
'১৩ এপ্রিল হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিপণের অর্থ ফেলার সময় আমাদের সংখ্যা গোনা হয়। প্রথমে আমরা ২২ জন ছিলাম, আমাদের ক্যাপ্টেন তখন জাহাজের অন্যত্র ছিলেন। এ কারণে প্রথমে মুক্তিপণের ব্যাগ ফেলা হয়নি,' বলেন আইয়ুব।
পরে ক্যাপ্টেনকে আনা হলে বেলা ১১টার দিকে ডলারভর্তি ৩টি ব্যাগ সমুদ্রে ফেলা হয়। 'এরপর দস্যুরা নিজেদের মধ্যে অর্থ ভাগ করে নেয়। তারপর তিনভাগে জাহাজ থেকে নেমে যায়। বিকেলে এক দল, সন্ধ্যায় এক দল এবং বাকিরা রাত ১২টার পর জাহাজ থেকে বিদায় হয়,' বলেন তিনি।
ক্যাডেট আইয়ুব বলেন, 'সকালের দিকে দুটি জাহাজ আমাদের নিরাপত্তা দিতে আসে। তারা আমাদের সোমালিয়ার উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার করে দেয়।'
এমভি আবদুল্লাহ মুক্তি পেয়ে দুবাইয়ের দিকে যাত্রা করার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নৌ-মিশনের দুটি যুদ্ধজাহাজ এটিকে নিরাপত্তা প্রদান করে। ইউন্যাভফর-এর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায়, অপারেশন আটলান্টার দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আব্দুল্লাহকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে।
আইয়ুবের মা হোমায়রা বেগম বলেন, দস্যুদের আক্রমণের প্রায় এক মাস আগে আইয়ুবের বাবা মারা যান। সে শোক না কাটতেই আইয়ুবসহ ২৩ নাবিক জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এতে পুরো পরিবারের ওপর অন্ধকার নেমে আসে। তার ফিরে আসায় এখন আবারও সবার মাঝে আনন্দের বাতাস বইছে।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ২০১০ সালে কেএসআরএম গ্রুপের এমভি জাহান মনি জাহাজ সোমালি জলদস্যুরা ছিনতাই করে। তখন জাহাজটিতে ২৫ জন ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ জন ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর জাহাজসহ তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।