নিজ রাজত্বে ‘আকবর দ্য গ্রেট’
রাজ্য নয়, পুরো বিশ্ব শাসন করার লড়াই জেতার মিশন। প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যেতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সৈন্য-সামন্ত নিয়ে সেখানে তাবু গেড়েছিলেন আরও ৯ রাজ্যের রাজা। বিশ্ব শাসনের লড়াই জিততে ১০ রাজার মধ্যে লড়াই চলে প্রায় ৪০ দিন। অনেকে মাঝপথে ‘সারেন্ডার’ করে নিজ রাজ্যে ফিরে যান। লড়াই চলতে চলতে দুই রাজার কাছে হার মানেন বাকি সবাই।
সবশেষে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতার লড়াই, রাজার মুকুট জেতার লড়াই। সবশেষ এই ধাপে দেখা মেলে ‘কুল হেডেড’ এক রাজার। যুদ্ধের ময়দানে দল যখন কোণঠাসা, এমন সময় ব্যাট নামের তরবারি হাতে ময়দানে নেমে ঠাণ্ডা মাথায় তিনি ধসিয়ে দেন প্রতিপক্ষের দুর্গ। তাতে বিশ্ব পেয়ে যায় নতুন রাজাকে, নাম তার আকবর আলী। ‘আকবর দ্য গ্রেট’।
বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার এই অন্যতম রূপকারকে বিরাট এই নামে ডাকতে দ্বিধা করেননি ক্রিকেট বোদ্ধারাও। শিরোপা হাতে বীরের বেশে দেশে ফেরেন আকবর ও তার দল। দেশে ফিরে প্রথমে বিসিবি, এরপর নিজ নিজ এলাকায় রাজসিক অভ্যর্থনা পান বাংলাদেশের তরুণ তুর্কিরা।
ছুটিতে ছিলেন যুবারা, বাড়িতে ফিরে পরিবারের সঙ্গে কাটাচ্ছিলেন দারুণ সময়। কিন্তু বিসিবি একাদশের হয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নিতে হাড়াহুড়ো করেই ঢাকা ফিরতে হয়েছে আকবরসহ ৬ ক্রিকেটারকে। ম্যাচের ভেন্যু অনেকদিনের চেনা, বেশ কয়েকজন যুবার সবচেয়ে ভালোবাসার জায়গা বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)।
দুইদিনের এই প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে আকবর ফিরেছেন নিজের চিরচেনা রাজত্বে। এই রাজ্য তাকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে, রাজা হওয়ার পথে প্রতিদিন একটা করে ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। এখান থেকেই দীক্ষা নিয়ে সত্যিকারের যোদ্ধা হয়ে উঠেছেন আকবর। এখানকার একেকটি ঘাসের কণার সঙ্গেও সখ্য আছে তার।
আকবরের শুরুটা অবশ্য এখানে নয়; বিকেএসপির দিনাজপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রে স্বপ্নের পথচলা শুরু করেছিলেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। সেখানে কাটে ৩ বছর। কিন্তু সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে হবে, আরও শক্তিশালী যোদ্ধা হতে হবে; তাই ২০১৫ সালে তিনি চলে আসেন সাভারের বিকেএসপিতে।
বিশ্বজয়ের আগ পর্যন্ত এখানেই বেশিরভাগ সকাল, সন্ধ্যা, রাত কেটেছে আকবরের। এই বিকেএসপিতে আকবর এখন মহানায়কের নাম। এর আগেও এখানে তিনি এসেছেন, কিন্তু এবারের আসা একবারে আলাদা। এবার তিনি বিশ্বজয়ী অধিনায়কের ট্যাগ গায়ে নিয়ে প্রিয় শিক্ষালয়ে এসেছেন।
ভালোবাসার প্রতিষ্ঠানও স্বাগত জানিয়েছে বিশ্বজয়ীদের। বিকেএসপির প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতেই নিজেদের ছবি আর ‘আমরা গর্বিত’ সম্বলিত ব্যানার দেখেছেন আকবররা। মাঠে ঢুকেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন তারা। বিশেষ করে আকবরকে নিয়ে আগ্রহের শেষ ছিল না ভেুন্যতে আসা দর্শকদের। তাদের সেলফির আবদার মেটাতে হয়েছে তাকে।
এত কিছু হলেও আকবর অবশ্য কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন না। চিরচেনা বিকেএসপিতে এলে যে প্রশান্তি মেলে, এবারও তেমনই লাগছে তার। বাড়তি কোনো অনভূতি কাজ করছে না এই বয়সেই আবেগে লাগাম টানতে জানা আকবরের। শুধু বললেন, ‘তেমন কিছু না। আগেও বিকেএসপিতে এলে যেমন লাগতো, তেমনই লাগছে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট চিফ মাসুদ হাসান অবশ্য ভিন্ন স্বাদ পাচ্ছেন। বিশ্বজয়ী প্রিয় শিষ্যদের এবারের আগমনটা তার কাছে অন্য রকম। আকবর সম্পর্কে এই প্রবীণ কোচ দ্য বিজনেজ স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ‘ওর মধ্যে ছোট থেকেই নেতৃত্বগুণ ছিল। বেশি কথা বলতো না, তবে অল্পতে সব বুঝে নিতো। ওদের এমন সাফল্যে নিজেকেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বলে মনে হয়।’