'আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা': ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মাঠে নামার অপেক্ষায় ফুটবল বিশ্ব!
জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ২০ নভেম্বর পর্দা উঠেছে কাতার বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপের উনিশ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর আজ শুক্রবার রাতটিই হতে যাচ্ছে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে উত্তেজনাকর রাত। কারণ আজ রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে মাঠে নামছে লাতিন আমেরিকার দুই পরাশক্তি ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল মুখোমুখি না হলেও, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা যদি নিজ নিজ প্রতিপক্ষের বাধা পেরোতে পারে তাহলে সেমিফাইনালেই মুখোমুখি হবেন মেসি-নেইমারেরা! তাই শুক্রবার রাতটি সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনই শ্বাসরুদ্ধকর!
কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ব্রাজিল মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার। অন্যদিকে, লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে লুই ফন গালের নেদারল্যান্ডস।
ক্রোয়েশিয়া কী পারবে 'অপ্রতিরোধ্য' ব্রাজিলকে রুখে দিতে?
চলমান বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী একটি দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ব্রাজিলকে। তারকায় ঠাসা স্কোয়াড, ছন্দময় ফুটবল আর দুর্দান্ত আক্রমণ- সব মিলিয়ে ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ব্রাজিল। সমর্থকদের আত্মবিশ্বাসই বলে দেয়, ব্রাজিল এবার বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার।
নক-আউট পর্বের ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়াকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে ব্রাজিল; নেইমার, ভিনিসিয়ুস, রিচার্লিসনদের গোলে ৪-১ ব্যবধানে বড় জয় পেয়েছে সেলেসাওরা। যদিও ইনজুরির কারণে গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচ মিস করেছিলেন দলের তারকা খেলোয়াড় নেইমার, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে তার রাজার মতো প্রত্যাবর্তন আজ আরও স্বস্তিতে রাখবে ব্রাজিলকে।
এমনকি কোচ তিতেও ব্রাজিলের তরুণ তারকায় ঠাসা এই দলটির পারফরমেন্সে বেশ সন্তুষ্ট। দক্ষিণ কোরিয়াকে হারানোর পর খেলোয়াড়দের সাথে তিতেও শামিল হয়েছিলেন তাদের উদযাপনের নাচে। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রোয়েশিয়াকে হারানোর দিকেই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
সে কারণেই তো ব্রাজিলকে মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছেন না ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ। দালিচ বলেন, "এখন পর্যন্ত যা দেখা গেছে, আপনি যদি ব্রাজিলের খেলোয়াড় এবং তাদের মান ও দক্ষতার দিকে তাকান, তাহলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন যে তারা কতটা বিপজ্জনক। আমাদেরকে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ও ভরসা নিয়ে মাঠে নামতে হবে, গোল করার সুযোগ খুঁজে নিতে হবে এবং ব্রাজিলের সাথে খেলার সুযোগটা উপভোগ করতে হবে।"
২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে রানারস-আপ হয়ে বিদায় নেওয়া ক্রোয়েশিয়া ব্রাজিলকে রুখে দেওয়ার জন্য ভালোই ছক কষেছে বলে ধারণা করা যায়। ক্রোয়েশিয়া দলে রয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ, যিনি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে কাতারেই হবে তার শেষ বড় টুর্নামেন্ট।
ক্রোয়েশিয়ার ফুল-ব্যাক জোসিপ জুরানোভিচ বলেন, "যখন আপনি দেখবেন মডরিচের মতো খেলোয়াড় মাঠজুড়ে দৌড়াচ্ছে আর প্রাণ উজাড় করে খেলছে, তখন এমনিতেই মনের মধ্যে এক ধরনের বাড়তি শক্তি চলে আসে।"
এবার দেখা পালা যে সেই শক্তি দিয়ে ক্রোয়েশিয়া পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ীদের থামাতে পারে কিনা!
মেসি নাকি লুই ফন গালের বিদায়?
এক জীবনে ফুটবলের এমন কোনো শিরোপা নেই যা মেসি জেতেননি, শুধুমাত্র বিশ্বকাপ বাদে। স্বপ্নের শিরোপা জেতার জন্য মেসি যে আজ নিজের সেরাটা দিয়ে খেলবেন তা বলাই বাহুল্য। ধারণা করা হচ্ছে, কাতার বিশ্বকাপই হবে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারের শেষ বিশ্বকাপ।
আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় নেদারল্যান্ডস বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচ অতীতের নানা ইতিহাসের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে দুই দলকে। ১৯৭৮ সালের ফাইনালে মারিও কেম্পেসের আর্জেন্টিনার বিজয় বা ১৯৯৮-এ ডেনিস বার্গকাম্পের সেই অসাধারণ টাচের জাদুতে ডাচদের সেমিফাইনালে ওঠা, কিংবা ২০১৪-তে পেনাল্টি শ্যুটআউটে আর্জেন্টাইন গোলকিপার সার্জিও রোমেরোর হিরো হয়ে ওঠার স্মৃতি- ডাচ বনাম আর্জেন্টাইনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মানেই এক বিশেষ অনুভূতি!
আর এবারও যে তার ব্যতিক্রম হবে না তা ইতোমধ্যে দুই পক্ষের কথার লড়াইয়েই বোঝা গেছে। আজই নির্ধারণ হয়ে যাবে বিশ্বকাপ আসর থেকে কে বিদায় নেবেন- কিংবদন্তি লিওনেল মেসি নাকি ডাচ কোচ লুই ফন গাল?
৩৫ বছর বয়সী লিওনেল মেসির কাঁধে দায়িত্বের বোঝাটা সবসময়ই বেশ ভারি। নিজের স্বপ্নপূরণ এবং আর্জেন্টিনার বহু বছরের শিরোপা খরা ঘোচানো, দুটোই করতে হবে তাকে। মেসি ম্যাজিকের দিকেই যে তাকিয়ে আলবিসেলেস্তেরা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
অন্যদিকে, মেসিকে থামানোয় পাঁয়তারা কষছেন ৭১ বছর বয়সী ঝানু কোচ লুই ফন গাল। তাই মাঠে তার কৌশল থাকবে মূলত মেসিকে ঘিরে। ফন গাল বলেছেন, "আমরা আমাদের পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে পারি। আমরাও একসময় ভালো দল ছিলাম এবং মেসি তেমন বলই পেত না তখন।"
ফন গালের এমন বক্তব্য দুই পক্ষের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন ফুটবল ভক্তরা। তবে প্রিয় পাঠক, যা ই করুন না কেন, শুক্রবার রাতে বিশ্বকাপ ফুটবলের এই মহারণের সাক্ষী হতে কোনোভাবেই ভুলবেন না যেন!
সূত্র: বিবিসি