আরব বসন্ত থামিয়ে ফাইনালে মেসিদের সঙ্গী ফ্রান্স
প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠা হলো না মরক্কোর। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরে সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হল অ্যাটলাসের সিংহদের।
কাতারের আল-বাইত স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স এবং মরক্কো। সেখানে আফ্রিকান দল মরক্কোকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে গেল ফ্রান্স। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠার অর্জনটাকে আরেক ধাপ এগিয়ে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিল মরক্কো। তবে সামনে বাধা হিসেবে ছিল বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। বেলজিয়াম, স্পেন, পর্তুগালকে টপকে সেমি-ফাইনালে আসা মরক্কোর জন্য সেটি বোধোহয় একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং হয়ে গিয়েছিল।
যদি পরিসংখ্যানের হিসেবে কিংবা খালি চোখের দেখায় ম্যাচে আধিপত্য ছিল মরক্কোরই, কিন্তু ফ্রান্সের মুহূর্তের জাদুই যথেষ্ট হয়েছে তাদেরকে আরেকবার ফাইনালে নিয়ে যেতে। পুরো ম্যাচে মরক্কোকে ভুগিয়েছে তাদের ফিনিশং দুর্বলতা। নয়তো ৬২% সময় বলের দখলে রেখে আর ফ্রান্সের প্রায় সমান গোলের প্রচেষ্টা করেও কেন ২-০ ব্যবধানে হারবে তারা!
সেমি-ফাইনালের আগে খেলা ৫ ম্যাচে মাত্র একটি গোল খেয়েছিল মরক্কো, কানাডার বিপক্ষে সেই গোলও ছিল আত্মঘাতী। কিন্তু সেমি-ফাইনালে মাত্র ৫ মিনিটেই গোল খেয়ে বসল অ্যাটলাসের সিংহরা। ফ্রান্সের থিও হার্নান্দেজ বক্সের ভেতর থেকে দুর্দান্তভাবে শরীর বাঁকিয়ে বল মরক্কোর জালে পাঠান। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের পর সেমি-ফাইনালে যা দ্রুততম গোল।
বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের কাছে প্রথমবারের মতো গোল খেয়ে যেন ঘুম ভাঙে মরক্কোর। আক্রমণ শানাতে থাকে তারা। বেশ কয়েকবার গোলের খুব কাছাকাছি গিয়েও বারবার সুযোগ নষ্ট করেছেন মরোক্কান ফরোয়ার্ডেরা। ৪৪ মিনিটে এল ইয়ামিকের বাই-সাইকেল কিক অসাধারণ দক্ষতায় সেইভ করে ফ্রান্সকে রক্ষা করেন তাদের অধিনায়ক এবং গোলরক্ষক হুগো লরিস।
যেই গোলটি হলে খেলার মোড় ঘুরে যেতে পারতো। প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধে আরো মরিয়া হয়ে উঠে মরক্কো। এদিকে প্রতি আক্রমণের সুযোগ খুঁজতে থাকে ফ্রান্স। মরক্কোর পা থেকে বল কেড়ে নিলেই ভয়ঙ্কর গতিতে উপরে উঠে আসছিলেন এমবাপ্পে-দেম্বেলেরা। তবে গোলের দেখা পাচ্ছিল না কোনো দলই।
এর মাঝেই দুটি অসাধারণ সুযোগ নষ্ট করে মরক্কো। বক্সের ভেতর শট নেওয়ার জায়গা পেয়েও দেরি করে বসেন হামাদাল্লাহ। অপর সুযোগটি বাইরে মারেন হাকিমি। মরক্কো যখন সমতা ফেরানোর হুমকি দিচ্ছিল ঠিক তখনই শূন্য থেকে সুযোগ তৈরি করে ফ্রান্সের ফাইনাল নিশ্চিত করেন এমবাপ্পে।
ম্যাচের ৭৯ মিনিটে মরক্কোর ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে দুর্দান্ত টার্ন নিয়ে ওয়ান টু ওয়ান খেলে বক্সে ঢুকে যান এমবাপ্পে, সেখানে দুইজন খেলোয়াড়কে জায়গায় কাটিয়ে শট নেন তিনি। সেটি কোনোরকমে ঠেকিয়ে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক বুনু, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
মাত্র ৪৪ সেকেন্ড আগেই বদলি হিসেবে নামা কলো মুয়ানি ছিলেন জায়গামতোই, আলতো ছোঁয়ায় বল মরক্কোর জালে পাঠিয়ে ফ্রান্সকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মরক্কোর স্বপ্ন শেষ করে দেন তিনি।
শেষের ১০ মিনিটে মরক্কো আরও কয়েকটি সুযোগ পেলেও পুরো ম্যাচের মতোই মিসের মহড়া দেয় তারা। ফলে ম্যাচে ফেরার আশা শেষ হয়ে যায় আফ্রিকান দলটির।
সেমি-ফাইনাল থেকে বাদ পড়লেও নিজেদের অর্জন নিয়ে গর্বিত হতেই পারে মরক্কো। প্রথম আফ্রিকান এবং আরব দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠার নজির গড়েছে তারা। এখনও সুযোগ আছে তৃতীয় স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করার। যে লক্ষ্যে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তারা।
অপরদিকে পরপর দুইবার ফাইনালে উঠা ফ্রান্স খেলবে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব ধরে রাখার ম্যাচে লিওনেল মেসির মুখোমুখি হবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।