৪০৮ দিন পর ম্যাচ খেলার অপেক্ষায় সাকিব
২০১৭ সালের কথা। টানা ক্রিকেট খেলে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন সাকিব আল হাসান। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে সেপ্টেম্বরে ছয় মাসের ছুটি চেয়ে আবেদন করেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। ছয় মাস ছুটিতে থাকা হয়নি তার। মাস তিনেকের ছুটি কাটিয়েই জাতীয় দলে ফেরেন সাকিব। সেই সাকিবই পাক্কা এক বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকলেন। ম্যাচ তো দূরের কথা, দলের সঙ্গে অনুশীলনও করার সুযোগ পাননি।
জুয়াড়ির কাছ থেকে তিনবার প্রস্তাব পেয়েও আইসিসি বা বিসিবিকে কিছু না জানানোয় সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব। চোট আর ছুটি নেওয়া ছাড়া কখনও বাংলাদেশ দলের বাইরে থাকতে হয়নি সাকিবকে। কিন্তু গত বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে চেনা সময় হারিয়ে যায়। ক্রিকেট এতো কাছে থাকতেও হয়ে যায় কতো দূরের। ৩৬৫টা দিন ক্রিকেটবিহীন কেটেছে বাংলাদেশ প্রাণ ভোমরার।
অবশেষে যন্ত্রণার সময় ফুরিয়েছে। কালো অধ্যায় শেষে নতুন এক সূর্যর দেখা পেয়েছেন সাকিব। গত ২৯ অক্টোবর মুক্ত হন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। মুক্ত হয়েই প্রিয় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফিটনেসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ফিটনেস টেস্ট দিয়ে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে খেলার প্রস্তুতি।
ঘরোয়া এই টুর্নামেন্টের প্লেয়ার্স ড্রাফটে প্রথম দল হিসেবে ক্রিকেটার বাছাইয়ের সুযোগ পায় জেমকন খুলনা। প্রথম ডাকেই সাকিবকে দলে ভেড়ায় তারা। এরপর থেকে দলের সঙ্গে অনুশীলন করে আসছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। নিষেধাজ্ঞার খড়্গের পর মাঠে ফেরার অপেক্ষাও ফুরিয়েছে তার। সাকিবের অপেক্ষা এখন ম্যাচ খেলার।
বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সফরে বিশ্রামে ছিলেন সাকিব। সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজ দিয়ে মাঠে ফেরেন তিনি। এরপর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ৬টি ম্যাচ খেলেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞার আগে এই আসরেই সর্বশেষ ম্যাচ খেলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সিপিএলের ফাইনালই সাকিবের খেলা শেষ ম্যাচ।
ক্যালেন্ডার বলছে মাঝে পেরিয়ে গেছে এক বছর এক মাস ১১ দিন। দিনের হিসাব করলে সংখ্যাটা অনেক বেশি, ৪০৮ দিন। এই দীর্ঘ সময় পর কোনো ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মিরপুর স্টেডিয়ামে সাকিবের দল জেমকন খুলনা মুখোমুখি হচ্ছে ফরচুন বরিশালের।
সাকিবের ফেরায় রোমাঞ্চিত বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারই। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে দলে পাওয়ায় খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর রোমাঞ্চ যেন একটু বেশিই, 'খুবই ভালো লাগছে। আমরা সবাই জানি সাকিবের গুরুত্ব কতটুকু। সেটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হোক বা ঘরোয়াতে। অবশ্যই আমরা সবাই খুশি ওর জন্য যে ও ফিরেছে এবং আমাদের দলেই খেলছে। তাকে দলে পাওয়া খুবই ভালো ব্যাপার।'
প্রতিপক্ষ হলেও সাকিবের ফেরার দিনটাকে বড় বলছেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল, 'আমি নিশ্চিত ওর জন্য অনেক বড় দিন। কারণ ও প্রায় এক বছর পর মাঠে ফিরছে। ওর জন্য বড় দিন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমি নিশ্চিত ওর ভক্তরা ওকে দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে।'
প্রিয় সতীর্থ ফিরে আসায় উচ্ছ্বসিত ঢাকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও, 'কেবল আমি নই, আমার মনে হয় পুরো বিশ্ব ক্রিকেটই অপেক্ষা করছে। সে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার এবং আমাদের সেরা খেলোয়াড়। আমাদের সঙ্গে ছাড়া যেন অন্য সবার সঙ্গে ভালো খেলে। আমার কাছে মনে হয়, শুধু আমি নই এটা পুরো টুর্নামেন্টের জন্যই বড় একটা পাওয়া। তার সঙ্গে এবং বিপক্ষে যেসব তরুণ খেলবে, তারা অনেক কিছু শিখতে পারবে। আমার মনে হয় এটা ভবিষ্যতেও খুব কাজে দেবে।'
৪০৮ দিন হলেও এটা সাকিবের কাছে সংখ্যার চেয়ে বেশি কিছু হওয়ার কথা নয়। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দৃষ্টি কেবলই সামনে। কালো অধ্যায় পেছনে ফেলে প্রতিবারের মতো ব্যাটে-বলে প্রত্যাবর্তন পর্ব রাঙানোর অপেক্ষায় সাকিব, অপেক্ষায় তার অগণিত ভক্ত-সমর্থকরাও।