তদন্ত শেষে সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিসিবি
সাইপ্রাসভিত্তিক ম্যারিকিট হোল্ডিংসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান অনলাইন বেটিং সাইট বেটউইনার। এই বেটিং সাইটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেট উইনার নিউজ। পোর্টালটির দূত হয়েছেন সাকিব আল হাসান। দুই পক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী বুঝতে বাকি থাকে না নিজেদের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। যা নিয়ে সরগরম বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন। যদিও বিসিবি এ ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বেটিং সাইটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হলেও এমন কোনো চুক্তির অনুমতি বিসিবি দেবে না বলে জানান নাজমুল হাসান। অবশ্য এই চুক্তির ক্ষেত্রে বিসিবির অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেননি সাকিব। যে কারণে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা নেই বলে দাবি বিসিবি সভাপতির। বিষয়টি তারা আগে তদন্ত করবেন, এরপর সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অনলাইন বেটিং বা জুয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এ নিয়ে আইসিসি, বিসিবিরও কঠোর নীতি আছে। তিন বছরের জন্য বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি হতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইনটারেস্ট) চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিসিবি। যেখানে পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়, কোনো বেটিং বা অনলাইন বেটিং সংস্থা এতে অংশ নিতে পারবে না।
সেখানে দেশের সেরা ক্রিকেটার হয়ে বেটিং সাইটের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাকিবের চুক্তির কথা শুনে যেন বিসিবির সবার মাথায় বাজ পড়েছে। এ কারণে বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে সামলাবে বিসিবি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার আগে সাকিবের সঙ্গে কথা বলে চুক্তির ব্যাপারে পরিষ্কার হতে চায় দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
চুক্তির ব্যাপারে অবশ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে সাকিবের ফেসবুক পোস্টেই। যেখানে তিনি বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারটি ঘোষণা দিয়েছেন। একইভাবে নিজেদের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে ঘোষণা দিয়েছে বেটউইনারও।
এরপরও বিসিবি সভাপতি বলছেন তদন্তের কথা। এ নিয়ে সাকিবের সঙ্গে নিজেই কথা বলবেন তিনি। চুক্তির ব্যাপারটি সত্যি হয়ে থাকলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'এটা তো শুধু ক্রিকেট বোর্ড নয়, বাংলাদেশের আইনেও অনুমতি নেই। আমাদের দেশের আইন এটা পারমিট করে না। এটা তো অবশ্যই মারাত্মক ইস্যু। এ জন্যই একেবারে একটা ফেসবুক বা পোস্টিংয়ের ওপর নির্ভর না করে আমাদের তদন্ত করতে হবে। খুঁজে দেখতে হবে আসলে কী হয়েছে। এটা সত্যি হয়ে থাকলে বোর্ডের যা যা করার, অবশ্যই বোর্ড করবে।'
সাধারণত যেকোনো ধরনের চুক্তির আগে তা বিসিবিকে জানাতে হয় ক্রিকেটারদের। এমনকি চুক্তিপত্রও জমা দিতে হয় বিসিবিতে। সাকিব এর কোনোটাই করেননি। জানালেও দেশের আইন অনুযায়ী অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না বলে জানান নাজমুল হাসান।
বৃহস্পতিবার বিসিবিতে বোর্ড সভা শেষে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'আমাদের অনুমতি নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, আমরা অনুমতি দেবই না। বেটিং সংক্রান্ত কিছু হয়ে থাকলে অনুমতি দেবই না। এটার মানে হচ্ছে, আমাদের কাছে অনুমতি চায়নি। দুই নম্বর ব্যাপার হচ্ছে, আদৌ চুক্তি করেছে কিনা, এটাও তো আমার জানতে হবে।' সাকিবের অফিসিয়াল পেজের কথা বলা হলে নাজমুল হাসান বলেন, 'আমরা তো অ্যালাউ করিনি। আমরা তো জানিই না এবং এটাও বললাম যে কোনো দিনই অ্যালাউ করব না।'
সাকিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে বলেও জানান নাজমুল হাসান, 'আমরা বলেছি যে, এটা তো কোনোভাবেই সম্ভব নয়, এটা কীভাবে হয়! তাড়াতাড়ি এটা বের করো যে এটা আসলেই হয়েছে কিনা। হলে অনতিবিলম্বে জানতে চাও। নোটিশ সার্ভ করা হবে, এটা কীভাবে সম্ভব। এটা তো বোর্ড কোনোভাবেই অ্যালাউ করবে না। বেটিংয়ের সঙ্গে এটার কোনোরকম, কোনোকিছুর সংযুক্ত থাকে, এটা বোর্ড কখনোই অ্যালাউ করবে না। এটা অলরেডি আমরা বলেছি।'
'আজকের মিটিংয়ে এই কথাটা উঠেছিল। নাও হতে পারে, এরকম একটা কথা এসেছে বোর্ডে। নাও হতে পারে, তাহলে তো একটা সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারছি না। তার পরও বলে দিয়েছি দ্রুত জানতে। তবে বোর্ডের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।' যোগ করেন বিসিবি সভাপতি।