বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয় বাংলাদেশের
লক্ষ্য বড় ছিল না, শুরুটাও একেবারে মন্দ নয়। এরপর দ্রুত দুই উইকেট হারালেও সেটা চাপ হয়ে চাপেনি বাংলাদেশের কাঁধে। ম্যাচসেরা নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়ের দারুণ ব্যাটিংয়ে জয়ের পথটা সহজ হয়ে যায় ঘরের মাঠের দলটির। সেই সহজ পথটা পরে আরও সহজ বানিয়ে পাড়ি দিয়ে ফেলেন সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। তাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয়ের কাব্য লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম জয়। এর আগে খেলা একটি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হার মানে তারা। হারে শুরুর পর প্রথম দুই ম্যাচ দিয়েই ওয়ানডে সিরিজ খোয়ানো বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো দারুণ এক জয় দিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে ১৭ বছরের পথচলায় ১৪৫ ম্যাচে এটা বাংলাদেশের ৫০তম জয়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ইংল্যান্ড। দারুণ শুরুর পর সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন বাটলার। সল্ট চল্লিশ ছুঁইছুঁই ইনিংস খেলেন। মারকুটে ব্যাটিং শুরু করলেও ইনিংস বড় করার সুযোগ পাননি বেন ডাকেট। এই তিনজরই রানের দেখা পান, ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাটিং করা বাকি পাঁচ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। জবাবে ঝড় তুলে হাফ সেঞ্চুরি করা শান্তর সঙ্গে হৃদয়ের জুটির পর সাকিব ও আফিফের ব্যাটে ১২ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা একেবারে খারাপ ছিল না বাংলাদেশের। উদ্বোধনী জুটিতে ৩.৩ ওভারে ৩৩ রান যোগ করেন শান্ত ও প্রায় আট বছর পর জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলতে নামা রনি তালুকদার। বিপিএলে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলে ফেরা রনি মারকুটে ব্যাটিংয়ে শুরু করেন। দারুণ ব্যাটে-বলেও হচ্ছিল তার। যদিও তার ইনিংসটি দীর্ঘ হয়নি। ১৪ বলে ৪টি চারে ২১ রান করে থামেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর লিটন কুমার দাসও ক্যাচ তুলে বিদায় নেন, ১০ বলে ১২ রান করেন তিনি। ৪৩ রানে ২ উইকেট হারালেও অবশ্য দরকে চাপ বুঝতে দেননি শান্ত ও হৃদয়। এ দুজন শুরু থেকেই শাসন করে খেলতে থাকেন। বিশেষ করে শান্ত ছিলেন বিধ্বংসী চেহারায়। ২৬ বলে ৮টি চারে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মার্ক উডের করা সপ্তম ওভারে টানা ৪টি চার চারসহ ১৭ রান তোলেন।
শান্ত-হৃদয়ের ৩৯ বলে ৬৫ রানের জুটি ভাঙে হৃদয়ের বিদায়ে। বিপিএলে ব্যাট হাতে শাসন করে ডাক পাওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান অভিষেক ম্যাচে ১৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৪ রান করেন। চার রান পর বিদায় নেন শান্ত। দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩০ বলে ৮টি চারে ৫১ রান করে আউট হন। এরপর সহজেই বাকিটা পথ পাড়ি দেন অধিনায়ক সাকিব ও আফিফ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৪ বলে ৬টি চারে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব। ১৩ বলে অপরাজিত ১৫ রান করেন আফিফ। ইংল্যান্ডের জফরা আর্চার, আদিল রশিদ, মার্ক উড ও মঈন আলী একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে আগে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ইংলিশ ওপেনার সল্ট ও বাটলার। ১০ ওভারে ৮০ রানের জুটি গড়েন তারা। দশম ওভারের শেষ বলে সল্টকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন নাসুম। ফেরার আগে ৩৫ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৮ রান করেন ডানহাতি এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
এরপর দ্রুতই ফেরেন ডেভিড মালান, এতে রান তোলার গতি কমে আসে। এরপর ডাকেটের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়েন ইংল্যান্ডের ইনিংসকে ঠিক পথে রাখা বাটলার। ১৩৫ রানে গিয়ে ভাঙে এই জুটি, ডাকেটের স্টাম্প উপড়ে নেন মুস্তাফিজ। উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলা ডাকেট ১৩ বলে ৩টি চারে ২০ রান করে আউট হন। পরের বলে ফিরে যান বাটলারও।
হাসান মাহমুদের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪২ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ইনিংস সেরা ৬৭ রান করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তার বিদায়ের পর অন্যরা সেভাবে আর রান তুলতে পারেননি। মঈন আলী ৮*, স্যাম কারান ৬, ক্রিস ওকস ১ ও ক্রিস জর্ডান ৫* রান করেন। হাসান সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান নাসুম, তাসকিন, মুস্তাফিজ ও সাকিব। বাংলাদেশের এই পাঁচ বোলারই বোলিং করেছেন, বাড়তি কোনো বোলার ব্যবহার করেননি সাকিব।