বড় জয়ে ঘুচলো অপূর্ণতাও
বল হাতে শাসনে শুরু, অল্পতেই বাধা পড়ে আয়ারল্যান্ড। তাদের প্রথম ইনিংসের জবাবে বড় সংগ্রহ না গড়তে পারলেও বাংলাদেশের মেলে বড় লিড। যা পাড়ি দিতে নেমে শুরুতেই দিক হারানোর পরও অবিশ্বাস্যভাবে ঘুুরিয়ে দাঁড়িয়ে দারুণ লড়াই করে আইরিশরা। চার দিনে গড়ানো টেস্টের একটি দিন নিজেদের করে নেয় তারা। মিরপুর টেস্টে এই দিনটাই কেবল বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে, বাকি প্রায় সবই ছিল চাওয়া মতো। তাই ফলটাও এলো পক্ষে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে আয়ারল্যান্ডকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টে উইকেটের হিসাবে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়, সবচেয়ে বড় জয় ৮ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পর টেস্ট সিরিজের ট্রফিটাও উঠলো বাংলাদেশের ঝুলিতে। তিন বছর পর ঘরের মাটিতে মিললো টেস্ট জয়ের স্বাদ।
দারুণ এই জয়ে দীর্ঘ এক অপেক্ষারও অবসান হলো। প্রথমবারের মতো কোনো দলের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্ট জিতলো তারা, আগের সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই হারতে হয়েছিল তাদের। টেস্টে এটা বাংলাদেশের ১৭তম জয়, এর মধ্যে লক্ষ্য তাড়া করে জিতলো ৫টি টেস্টে। সর্বশেষ কিউইদের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের পর ৯টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, এর মধ্যে ৮টিতেই হারা বাংলাদেশ অবশেষে জয়ের স্বাদ পেল। মিরপুরে টানা চার টেস্ট হারের পর জয় দেখলো বাংলাদেশ।
তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, এবাদত হোসেনদের বোলিং তোপের মুখে ৭৭.২ ওভারে ২১৪ রানেই গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। জবাবে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিসহ অধিনায়ক সাকিব সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যাটে ৩৬৯ রান তোলে বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসেই মেলে ১৫৫ রানের লিড।
লরকান টাকার-অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনদের ব্যাটে আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯২ রান তুললে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩৮ রান। যা লিটনের ঝড়ো শুরুর পর মুশফিকের ওয়ানডে স্টাইলের হার না মানা হাফ সেঞ্চুরিতে ২৭.১ ওভারেই পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। ২৫তম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মুশফিক দুই ইনিংসেই দারুণ ব্যাটিং করে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।
ছোট লক্ষ্য দ্রুতই পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের, তাই উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তন আনা হয়। নাজমুল হোসেন শান্তর বদলে তামিম ইকবালের সঙ্গে লিটন কুমার দাসকে পাঠানো হয়। তামিম টেস্ট মেজাজে খেললেও উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন লিটন। তার ব্যাটে ৫ ওভারেই ৩২ রানে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এ সময় অবশ্য দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন লিটন। ১৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করা লিটন পুল করতে গেলে বল প্রথমে তার হেলমেটে লাগে। এরপর হাত বেয়ে গিয়ে গ্লাভসে লেগে বল লাগে স্টাম্পে।
দুই নম্বরে নামা শান্ত প্রথম ইনিংসের মতো এই এবারও ব্যর্থ। প্রথম ইনিংসে প্রথম বলেই আউট হওয়ায় বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪ রান করে বিদায় নেন। ৪৩ রানে দুই উইকেট হারানো দলকে ১০৫ রান পর্যন্ত নিয়ে যান ৬২ রানের জুটি গড়া তামিম-মুশফিক। তামিম ৩১ রান করে আউট হলে মুশফিক ও মুমিনুল দলের জয় নিশ্চিত করেন। মুশফিক ৪৮ বলে ৭টি চারে ৫১ ও মুমিনুল ২২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২২ রানে অপরাজিত থাকেন।
৫১ রানের ইনিংস খেলার পথে দারুণ এক মাইলফলকে পৌঁছান মুশফিক। তামিমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (তিন ফরম্যাট মিলিয়ে) ১৪ হাজার পূর্ণ করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রান এখন ১৪ হাজার ৪৩। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের মার্ক এডেয়ার, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও বেন হোয়াইট একটি করে উইকেট পান।