মাঠে ঝামেলার জন্য কোহলি-নবীন-গম্ভীরকে মোটা অঙ্কের জরিমানা
স্লেজিংয়ের সময় কি মেজাজ হারিয়ে নবীন-উল-হককে জুতো দেখিয়েছিলেন বিরাট কোহলি? আর সেই ঘটনা থেকেই কি বিরাট এবং গৌতম গম্ভীরের ঝামেলার সূত্রপাত হয়েছিল? তা নিয়ে সামনে এসেছে একটি ভিডিও। ওই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, সোমবার একানা স্টেডিয়ামে লখনৌ সুপার জায়েন্টস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ম্যাচের মধ্যে মধ্যে বিরাটের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সেইসময় ২৩ বছরের আফগান ক্রিকেটারকে বিরাট জুতো দেখান বলে অভিযোগ উঠেছে। যে রেশ ম্যাচের শেষে হাত মেলানোর পর্বেও ছিল। হাত মেলানোর সময় নবীন এবং বিরাটের একপ্রস্থ ঝামেলা হয়। শেষে বিরাট এবং গম্ভীরকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। দু'জনেই একে অপরের দিকে তেড়ে যান।
এমনিতে সোমবার লখনৌয়ের বিরুদ্ধে ফিল্ডিংয়ের সময় চূড়ান্ত আগ্রাসী রূপ ফুটে ওঠে বিরাটের। উইকেট পড়লে মারাত্মক আগ্রাসনের সঙ্গে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। বিরাটের আগ্রাসনের আগুন থেকে বাদ যাননি লখনৌয়ের দশম ব্যাটসম্যান নবীনও। তিনি যখন ব্যাট করছিলেন, তখন তাকে স্লেজিং করতে থাকেন বিরাট।
ওই ভিডিওয় একটি ওভারের পরে নবীন এবং বিরাটকে উত্তেজিতভাবে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তা যে খুব একটা 'মধুর' কথা ছিল না, তা হাবভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। লখনৌয়ের ব্যাটসম্যান অমিত মিশ্র বিরাটকে আটকানোর চেষ্টা করলে কোনও লাভ হয়নি। তারইমধ্যে নবীন হেঁটে ক্রিজের দিকে চলে যান। নবীন ক্রিজের দিকে চলে যাওয়ার পরে সেদিকে ইঙ্গিত করেই নিজের জুতা দেখাতে থাকেন বিরাট। সঙ্গে কিছু বলতে থাকেন। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম কিংবদন্তি ঠিক কী বলতে চাইছিলেন, সেটা অবশ্য স্পষ্ট হয়নি। তবে সেইসময়ের মতো বিরাটদের শান্ত করে ফিল্ডিংয়ের জন্য পাঠিয়ে দেন অনফিল্ড আম্পায়ার।
কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি ঝামেলার। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর হাত মেলানোর পর্বে নবীন এবং বিরাটের একপ্রস্থ ঝামেলা লেগে যায়। দু'জনে যখন হাত মেলাচ্ছিলেন, তখন তাদের মধ্যে কেউ একটা কিছু বলেন। কে প্রথমে বলেছিলেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। একাধিক ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার জন্য বিরাটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন নবীন। সেইসময় বিরাট তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে সম্ভবত কিছু বলেন। তারপর বিরাটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকান নবীন। দু'জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলে। সেই পরিস্থিতিতে দু'দলের অন্যান্য খেলোয়াড়রা তাদের সরিয়ে নিয়ে যান।
তবে সেখানেই শেষ হয়নি ঝামেলার। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, নবীনের সতীর্থ তথা লখনৌয়ের ক্রিকেটার কাইল মায়ার্সের সঙ্গে বিরাট কিছু কথা বলছেন। সেইসময় সেখানে চলে আসেন গম্ভীর। মায়ার্সকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে চলে যান। বিরাট যেদিকে যাচ্ছিলেন, তার উলটোদিকে চলে যান লখনৌয়ের হেড কোচ।
তারইমধ্যে পিছন থেকে সম্ভবত কিছু মন্তব্য উড়ে আসে। সেই মন্তব্য বিরাট করেন নাকি অন্য কেউ করেন, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে তারপরই পিছন ফিরে বিরাটের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে থাকেন গম্ভীর। রীতিমতো উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন কেএল রাহুল, বিজয় দাহিয়া, মিশ্ররা। শেষপর্যন্ত দুই দলের খেলোয়াড়, সাপোর্ট স্টাফরা বিরাট এবং গম্ভীরকে সরিয়ে নিয়ে যান।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) এবং আইপিএলের আয়োজক কমিটি এই তিনজনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। গম্ভীর, বিরাট ও নবীন তিনজনকেই জরিমানা করেছে বিসিসিআই।
আইপিএলের আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য লখনৌ সুপার জায়ান্টসের মেন্টর গৌতম গম্ভীরকে তার ম্যাচ ফির ১০০ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিরও ১০০ শতাংশ ম্যাচ ফি কাটা যাবে। এছাড়া ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে লখনৌ দলের ফাস্ট বোলার নবীন-উল-হককে। ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।