শান্তর সেঞ্চুরির পর মুশফিক-মিরাজে স্বস্তিতে দিন শেষ
শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়তে হয়েছিল। পরে মাহমুদুল হাসান জয় ও সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্তর জুটিতে মেলে বড় সংগ্রহের পথ। এরপরও অবশ্য অস্বস্তিতে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। আফগানিস্তানের গড়পড়তা বোলিংয়ের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিং করা দলটিই ৭২ রানে হারিয়ে বসে ৪ উইকেট, আবারও চাপ বাড়ে। যদিও মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজের দৃঢ়তায় চাপ বুঝতে হয়নি বাংলাদেশকে। স্বস্তি নিয়েই মাঠ ছেড়েছে স্বাগতিকরা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ৭৯ ওভারে ৪.৫৯ গড়ে ৫ উইকেটে ৩৬২ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ হয়েছে। মুশফিক ৪১ ও মিরাজ ৪৩ রানে অপরাজিত আছেন। টেস্টের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ রান তোলার দিক থেকে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। প্রথম দিনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩৭৪/৪, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যান জাকির হাসান। চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা বাঁহাতি এই ওপেনার ২ বল খেলেই আউট হয়ে যান। আফগানিস্তানের অভিষিক্ত ডানহাতি পেসার নিজাত মাসুদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১ রান করা জাকির। শুরুতেই উইকেট হারালেও অবশ্য চাপ বুঝতে হয়নি বাংলাদেশকে। মুহূর্তেই উইকেটে থিতু হয়ে যান জয় ও শান্ত।
আফগান বোলারদের শাসন করে খেলতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তাদের ব্যাটে ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১১৬ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। একই গতিতে দলীয় ২০০ রানও পূর্ণ করেন জয় ও শান্ত। ৪১ ওভারেই ২০০ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। এর কিছুক্ষণ পর এই জুটি ভাঙে জয়ের বিদায়ে, দৃষ্টিকটু শটে আউট হওয়ার আগে ১৩৭ বলে ৯টি চারে ৭৬ রান করেন তিনি। জয় ও শান্ত ২১২ রান যোগ করেন, যা দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। সর্বোচ্চ জুটি ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শামসুর রহমান শুভ ও ইমরুল কায়েসের করা ২৩২ রান।
শান্তর সঙ্গে যোগ দিয়ে বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৫ বলে একটি করে চার ও ছক্বায় ১৫ রান করে আউট হন। লম্বা সময় ধরে রানখরায় আছেন মুমিনুল। সর্বশেষ ১৭ ইনিংসে ১৩.৭৩ গড়ে মাত্র ২০৬ রান করেছেন তিনি। এর মধ্যে আছে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ৮৪। রানের খাতা খুলতে পারেননি চার ইনিংসে, অপরাজিত থেকেছেন একটি ইনিংসে।
ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করে ১১৮ বলে ১৮টি চারে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করা শান্তও আর বেশি সময় লড়তে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১৭৫ বলে ২৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৪৬ রান করেন দারুণ ছন্দে থাকা বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান। ২০২৩ সালে স্বপ্নের মতো সময় কাটলেও টেস্টে সেঞ্চুরির জন্য দীর্ঘ ২৩ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। আরও একটি অপেক্ষা ফুরিয়েছে শান্তর, প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন তিনি। শান্তর আগের দুটি সেঞ্চুরিই ছিল বিদেশের মাটিতে।
দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের চাপ আরও বাড়ে অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের বিদায়ে। দলীয় ২৯০ রানে থামেন ১৫ বলে একটি ছক্কায় ৯ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর দিনের বাকিটা সময়ে আর বিপদ আসেনি। ষষ্ঠ উইকেটে ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিনের খেলা শেষ করেন মুশফিক ও মিরাজ। আফগানিস্তানের নিজাত ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান জহির খান, আমির হামজা ও রহমত শাহ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৭৯ ওভারে ৩৬২/৫ (জয় ৭৬, শান্ত ১৪৬, মুমিনুল ১৫, লিটন ৯, মুশফিক ৪১*, মিরাজ ৪৩*; নিজাত ২/৬৭, রহমত ১/৩০)।