ক্যাচ মিসের রোগ বেড়েই চলেছে শান্তদের
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে করা ৫৩১ রানের জবাবে শুরুটা মন্দ হয়নি বাংলাদেশের। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগে ১ উইকেটে ৫৫ রান তোলে ঘরের মাঠের দলটি। ওপেনার জাকির হাসান ২৮ রানে অপরাজিত আছেন, নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুল ইসলাম রানের খাতা খোলেননি।
ভালো শুরু হওয়ায় স্বস্তিতেই থাকার কথা বাংলাদেশের, যা মিলেছে দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে। কিন্তু এর আগে প্রায় দুদিনের বেশিরভাগ সময়ে হতাশায় সময় কাটে, যেখানে কেবলই বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের গল্প। শ্রীলঙ্কার ১৫৯ ওভারের ইনিংস, হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ছয়জন ব্যাটসম্যান। এরমধ্যে তিনজনই জীবন পেয়েছেন, অন্যদেরসহ হিসাবটা কষলে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে মোট সাতটি ক্যাচ ছেড়েছে বাংলাদেশ। ক্যাচ ছাড়াটা যেন রোগে পরিণত হয়েছে তাদের জন্য, যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এক ইনিংসে সাতটি ক্যাচ মিস হলে প্রতিপক্ষ রান-পাহাড় গড়ার সুযোগ পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। শ্রীলঙ্কাও ঠিক সেটাই করেছে, জীবন পেয়ে নিজেকে শুধরে উইকেটে থাকা বাকিটা সময়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন তাদের ব্যাটসম্যানরা। শ্রীলঙ্কার রান বরং কমই হয়েছে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাটা উইকেটে, এরপর প্রতিপক্ষের ক্যাচ মিসের মহড়া; এমন সুযোগ পেয়ে সংগ্রহটা আরও বড় করে ইনিংস ঘোষণা করাই বরং স্বাভাবিক দেখাতো।
'ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস' ক্রিকেটে কথাটি খুব প্রচলিত। বাংলাদেশ সেখানে অবিরতভাবে ক্যাচ মাটিতে ফেলেছে। ক্যাচ মিসকে খেলার অংশ বলা হলেও সেটা নিশ্চয়ই এমন পরিমাণে নয়। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প সেটাই বলতে চাইলেন। ক্যাচ ধরে বোলারদের পরিশ্রশের দাম দেওয়ার পরামর্শ বারমুডার সাবেক এই ব্যাটসম্যানের।
ক্যাচ মিসের প্রসঙ্গে হেম্প বলেন, 'ম্যাচে এমন হয়, এটা আমরা অস্বীকার করতে পারব না। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কেউ-ই ইচ্ছা করে ক্যাচ ছাড়ে না তবে বোলাররা যখন কষ্ট করে সম্ভাবনা তৈরি করে, সেটাকে অবশ্যই কাজে লাগানো উচিত।' হাসান মাহমুদ, তাইজুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজদের তৈরি করা সম্ভাবনা মাটিতে ফেলেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তাতে শ্রীলঙ্কার স্কোর বড় হয়েছে, উইকেট বঞ্চিত হয়েছেন বোলাররা।
টেস্টে স্লিপ ফিল্ডিং সব সময়ই বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণে, এই টেস্টে সেটা রীতিমতো দুঃশ্চিন্তায় পরিণত হয়েছে। সাত মিসের পাঁচটিই পড়েছে স্লিপের ফিল্ডারের হাত থেকে। স্লিপে ফিল্ডিং করা তুলনামূলক কঠিন। অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানে বেশি মনোযোগী ও গতিতে ক্ষীপ্ত হতে হয়। এটা না করতে পারলে ক্রিকেট মাঠের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে বলে জানান হেম্প।
জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের ভাষায়, 'স্লিপ ফিল্ডারের কাজটা কঠিন, এখানে অনেক প্রত্যাশা থাকে। স্লিপে দাঁড়ালে প্রতিটা বলই আপনার কাছে আসবে, আপনাকে এভাবে ভাবতে হবে। এমন মানসিকতা তৈরি করতে না পারলে আপনার জন্য কঠিন হবে ব্যাপারটা। আপনি যতো বেশি অনুশীলন করবেন, ম্যাচের পরিস্থিতিতে নিজেকে ততো বেশি সুযোগ দিতে পারবেন।'
প্রথম দিন তিনটি ক্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই উইকেটের দেখা মিলতে পারতো। শরিফুল ইসলামের জায়গায় সুযোগ পাওয়া অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ সুযোগ তৈরি করেন, কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো মাহমুদুল হাসান জয় ক্যাচটি নিতে পারেননি। অফ স্টাম্পের বাইরে করা হাসানের ব্যাক লেংথের ডেলিভারিতে ব্যাট চালান মাদুসকা, সহজ ক্যাচ হলেও তা মাটিতে ফেলে দেন জয়।
জীবন পেয়ে নিজেকে শুধরে নেন লঙ্কান ওপেনার, আরও দায়িত্বশীল হয়ে ব্যাট চালাতে থাকেন। ২২তম ওভারে গিয়ে হাসানের বলে আবারও সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু দিমুথ করুনারত্নের তোলা ক্যাচটি সাকিব আল হাসান নিতে পারেননি। এগিয়ে যাওয়ার কারণে ক্যাচটি কঠিন হয়ে ওঠে, ক্যাচটি তালুবন্দী করতে দুর্বার ফিল্ডিং করতে হতো তাকে। শেষ মুহূর্তে কেবল ছক্কা বাঁচাতে পারতেন সাকিব। কিন্তু ক্যাচ নেওয়া বা ছক্কা বাঁচানোর কোনোটিই করতে পারেননি প্রায় ৯ মাস পরে টেস্ট খেলতে নামা অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
৬৬.৪ ওভারে আবারও সুযোগ হাতছাড়া, মিরাজের বলে ক্যাচ তোলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। কিন্তু উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাস ও প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো শাহাদাত হোসেন দিপুর মাঝ দিয়ে বল চলে যায়। দিপু চেষ্টা করলেও তার হাতে লেগে বল বেরিয়ে ৪ রা হয়ে যায়। দিনশেষে ক্যাচ মিস নিয়ে হতাশার কথা জানান পেস বোলিং কোচে আন্দ্রে অ্যাডামস।
আজ আগের দিনের হতাশাও ছাড়িয়ে যায়। দিনের শুরুতেই ধনঞ্জয়ার ক্যাচ ফেলেন মিরাজ। খালেদের বলে লঙ্কান অধিনায়ক ক্যাচ তুললেও স্লিপে দাঁড়ানো মিরাজ নিতে পারেননি। খালেদের করা ১২১তম ওভারে তিনজন ফিল্ডার মিলেও একটি বল ধরতে ব্যর্থ হন। খালেদের বলে প্রবাথও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো শান্ত সহজ ক্যাচটি ফেলে দেন।
সেই বলটি ধরার চেষ্টার করেন শাহাদত হোসেন দিপু। বল হাতে নিলেও রাখতে পারেননি তিনি। পড়তে থাকা বলের দিকে হাত বাড়ান জাকির হাসান, কিন্তু তার হাঁত ছুয়ে বল মাটিতে পড়ে যায়। ৩৬তম ওভারে তাইজুলের বলে আবারও ক্যাচ তোলেন প্রবাথ, এবার ক্যাচ ছেড়ে হতাশ করেন লিটন কুমার দাস। তার গ্লাভস ফসকে বল বেরিয়ে যায়। ১৪৯তম ওভারে আবারও হাত ফসকে বেরোয় ক্যাচ। তাইজুলের বলে ক্যাচ তোলেন অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়া কামিন্দু। ডিপ-মিড উইকেটে ফিল্ডিং করা হাসানও বাকিদের মতো হতাশ করে ক্যাচটি মাটিতে ফেলেন।