সহজ জয়ে সিরিজে আরও এগিয়ে বাংলাদেশ
লড়াইটা হলো প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো করেই। বাংলাদেশের বোলারদের তোপে দিক হারালেও জিম্বাবুয়ের দুজন ব্যাটসম্যান কাণ্ডারী হয়ে উঠলেন, লড়াই চালালেন অনেকটা সময়। তাতে আগের ম্যাচের চেয়ে কিছুটা বড় সংগ্রহ মিললো সফরকারীদের। তাতেও অবশ্য রক্ষা হলো না; ম্যাচসেরা তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাসের ব্যাটে সহজ জয় তুলে নিলো বাংলাদেশ।
রোববার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে আরও এগিয়ে গেল ঘরের মাঠের দলটি, পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। পরের ম্যাচটি ৭ মে এই মাঠেই বেলা ৩টায় শুরু হবে। সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ ১০ ও ১২ মে মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ টি-টোয়েন্টি সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে, তবে শেষ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে সকাল ১০টায়।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে জিম্বাবুয়ে। আগের ম্যাচের মতো দুর্দশা না হলেও ৪২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। এখান থেকে হাল ধরা ব্রায়ান বেনেট ও প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা জোনাথন ক্যাম্পবেল দাপুটে ব্যাটিংয়ে দারুণ এক জুটি গড়ে দলকে ১৩৮ রানে পৌঁছে দেন, জিম্বাবুয়ে উইকেট হারায় ৭টি। জবাবে লিটন ও তানজিদ হাসানের জুটির পর কিছুটা কঠিন সময় গেলেও হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ৯ বল হাতে রেখে জেতে বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। ৫.৫ ওভারে উদ্বোধনী জুটিতে ৪১ রান যোগ করেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। ষষ্ঠ ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে ব্রায়ান বেনেটের হাতে ধরা পড়েন আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা তানজিদ। আজ ১৯ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৮ রান করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা ২৩ বছর বয়সী তরুণ বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
পরের জুটিতে লিটন ও শান্তকে সাবলীলই দেখাচ্ছিল। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও দুজনের কেউ-ই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন শান্ত, ভাঙে তাদের ২০ রানের জুটি। বাংলাদেশ অধিনায়ক ১৫ বলে একটি ছক্কায় ১৬ রান করেন। একবার জীবন পাওয়া লিটনকেও এই ওভারে আউট করেন জিম্বাবুয়ের পেসার লুক জংওয়ে। ২৫ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করেন লিটন।
এরপর চতুর্থ জুটিতে ৩১ রান যোগ করেন হৃদয় ও জাকের আলী। ১২ বলে একটি চারে ১৩ রান করে জাকের ফেরার পর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৯ বলে ৪৯ রানের জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ। ২৫ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাচসেরা হৃদয়। ১৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৬ রানের হান না মানা ইনিংস খেলেন। জিম্বাবুয়ের লুক জংওয়ে ২টি এবং রিচার্ড এনগারাভা ও এইন্সলে এনডলোভু একটি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করা জিম্বাবুয়ের ইনিংসে প্রথম আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ, চতুর্থ ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন তাদিওয়ানাশে মারুমানিকে। জয়লর্ড গাম্বি ও ক্রেইগ আরভিন চেষ্টা করলেও চাপ কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ৩০ রানে যে ধাক্কা আসে, তাতে এলোমেলো হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শেখ মেহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন তোপে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে তারা।
৪২ রানের মধ্যেই ফিরে যান গাম্বি, অধিনায়ক সিকান্দার রাজা, ক্লাইভ মাদান্দে ও আরভিন। এখান থেকে হাল ধরেন বেনেট ও ক্যাম্পবেল। কঠিন সময় হলেও শুরু থেকেই দাপুটে ব্যাটিং করতে থাকেন ক্যাম্পবেল। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান মুহূর্তেই উইকেটে থিতু হয়ে যান। বেনেট কিছুটা সময় নিয়ে তারপর দ্রুত রান তোলা শুরু করেন।
ষষ্ঠ উইকেটে ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়েন বেনেট-ক্যাম্পবেল। দলীয় ১১৫ রানে ভাঙে এই জুটি। শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৫ রান করেন অভিষিক্ত ক্যাম্পবেল।
বেনেট অবশ্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৯ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৪ রানে অপরাজিত থাকেন। এ ছাড়া গাম্বি ১৭ ও আরভিন ১৩ রান করেন। প্রথম ম্যাচের মতো আজও আগুনে বোলিং করেন তাসকিন। ডানহাতি এই পেসার ৪ ওভারে ১৮ রানে নেন ২ উইকেট। লেগ স্পিনার রিশাদেরও শিকার ২ উইকেট, ৪ ওভারে তিনি দেন ৩৩ রান। সাইফউদ্দিন, শেখ মেহেদি ও শরিফুল একটি করে উইকেট পান।