টানা তিন জয়ে দুই ম্যাচ আগেই সিরিজ বাংলাদেশের
আজও ব্যাটিংটা মন মতো হলো না বাংলাদেশের। টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়ার পর আরও একবার দায়িত্ব নিলেন তাওহিদ হৃদয়, এবার সঙ্গে পেলেন জাকের আলী অনিককে। এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে বড় সংগ্রহ না মিললেও তেমন অস্বস্তি ছিল না ঘরের মাঠের দলটির। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের শক্তি ও আগের দুই ম্যাচে তাদের ব্যাটিং-ই হয়তো বাংলাদেশকে অস্বস্তি দিতে পারেনি।
ব্যাট হাতে না পারলেও বল হাতে শাসন করেন বাংলাদেশের বোলাররা। তাতে খেই হারায় জিম্বাবুয়ে, একের পর এক উইকেট হারায় তারা। এর মাঝেও শুরুতে লড়েন ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানি। শেষ দিকে ঝড় তুলে জয়ের সম্ভাবনা জাগান ফারাজ আকরাম। যদিও তা যথেষ্ট হয়নি, আরেকটি জয়ে দুই ম্যাচ আগেই সিরিজ জিতে নিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। পরের দুটি ম্যাচ আগামী ১০ ও ১২ মে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ম্যাচসেরা হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরি ও জাকেরের চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৬৫ রান তোলে বাংলাদেশ। এই সংগ্রহই অবশ্য বেশি মনে হতে পারে। কারণ পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪২ রান তোলা বাংলাদেশ ১০ ওভারে স্কোরকার্ডে জমা করে ৬৩ রান। হৃদয়-জাকিরের দাপুটে ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ১০২ রান তোলে বাংলাদেশ। জিতলেও তাদের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন তোলার অনেক জায়গা আছে। বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যর্থতা প্রায় প্রতি ম্যাচেই ভোগাচ্ছে শান্তদের।
লক্ষ্য তাড়ায় ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানি ছাড়া জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেউ-ই লড়তে পারেননি। তবু শেষ দিকে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে সঙ্গে নিয়ে ফারাজের করা খুনে ব্যাটিংয়ে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয় দলটির। জয়ের জন্য শেষ ১২ বলে ২৭ রান দরকার ছিল জিম্বাবুয়ের, শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই রান নিতে পারেননি ফারাজ-মাসাকাদজা। ৯ উইকেটে ১৫৬ রানে থামে সফরকারীদের ইনিংস।
লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় ওভারেই ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকে হারায় জিম্বাবুয়ে। তাকে ফিরিয়ে দেন ১৮ মাস পর এই সিরিজ দিয়ে ফিরে ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করে যাওয়া পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিতেও দেরি করেনি বাংলাদেশ, চতুর্থ ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের শিকার ব্রায়ান বেনেট। শুরুর এই ধাক্কা আর সামলে নিতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের কোনো বোলারের বিপক্ষেই সুবিধা করতে পারেনি তারা। বোলিং করা বাংলাদেশের ৬ জন বোলারই উইকেট পেয়েছেন।
বিপর্যয়ের মাঝেই ১১ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করে যান মারুমানি। বাঁহাতি এই ওপেনার ২৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন। আগের ম্যাচে ঝড় তোলা জোনাথন ক্যাম্পবেল আজও ঝড়ো শুরু করেন, কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ১০ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২১ রান করেন তিনি। শেষ দিকে মাসাকাদজাকে এক পাশে রেখে ফারাজ তাণ্ডব চালালেও শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে পারেননি।
নবম উইকেটে এ দুজন ৩০ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন। ফারাজ ১৯ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। মাসাকাদজা ১৪ বলে ১৩ রান করেন। এ ছাড়া ক্লাইভ মাদান্দে ১১ রান করেন। জিম্বাবুয়ের ৬ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ৪২ রানে ৩টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান রিশাদ। একটি করে উইকেট নেন তানভীর, তাসকিন, তানজিম ও মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো ছিল না। ব্যাট হাতে চরম বাজে সময় পার করতে থাকা লিটন কুমার দাস আজও ধুঁকেছেন। রান করতে পারেননি, উল্টো দৃষ্টিকটুভাবে বিলিয়ে আসেন নিজের উইকেট। জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির করা চতুর্থ ওভারে স্কুপ শট খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন লিটন। পরের বলে আবারও একই শট খেলার চেষ্টা করেন তিনি। তৃতীয়বারের মতো স্কুপ খেলার চেষ্টা করে বোল্ড হন ১৫ বলে ২টি চারে ১২ রান করা ডানহাতি এই ওপেনার।
২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ, দ্বিতীয় জুটিও টেকেনি। সিকান্দার রাজার বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৪ বলে ৬ রান করা বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম আরও কিছুটা সময় লড়েন। তবে ধারাবাহিকভাবে শট খেলার চেষ্টা করেও পারছিলেন না তিনি, ব্যাটে-বলে হচ্ছিল না তার। দলীয় ৬০ রানে গিয়ে ক্যাচ তুলে আউট হন তানজিদ, ২২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২২ রান করেন তিনি।
এরপর জুটি গড়ে তোলেন হৃদয় ও জাকের। মুহূর্তেই উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান স্কোরকার্ডে চেহারা পাল্টে দিতে সময় নেননি। জিম্বাবুয়ের বোলারদের শাসন করে চতুর্থ উইকেটে ৫৮ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৯তম ওভারে গিয়ে আউট হন ৩৮ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৭ রান করা হৃদয়। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। অল্প রানের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে হৃদয় যথাক্রমে ৩৩ ও ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
এই ওভারে জাকেরকেও ফেরান বাংলাদেশকে ভোগানো জিম্বাবুয়ের ডানহাতি পেসার মুজারাবানি। ফেরার আগে ৩৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন জাকের। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪ বলে ২টি চারে ৯ ও রিশাদ হোসেন ৪ বলে একটি চারে ৬ রান করেন। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রানে ৩টি উইকেট নেন মুজারাবানি। এ ছাড়া ফারাজ আকরাম ও সিকান্দার রাজা একটি করে উইকেট নেন।