সেমি-ফাইনালের স্বপ্নে তাওহিদ হৃদয়
ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে 'টেনেটুনে' পাস করা বাংলাদেশের ভরাডুবিই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। চরম হতাশার পারফরম্যান্স করা বাংলাদেশ আইসিসির সহযোগী দেশটির বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ খোয়ায়। তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতলেও বিশ্বকাপে তাদের সম্ভাবনার আগে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। গড়পড়তাও নিচে পারফর্ম করা দলটিকে নিয়ে আশা করা মানুষই নেই বললেই চলে।
কিন্তু মাঠে যারা লড়েন, তারা ধ্বংস্তূপ থেকেও ফিনিক্স পাখি হয়ে উড়তে চান। কয়েকটি ম্যাচের ফলে হতাশ হলেও আশা ছাড়েন না। তাওহিদ হৃদয়ই যেমন স্বপ্ন দেখছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল খেলার। সর্বশেষ আটটি টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের পারফরম্যান্স চাওয়া মতো না হলেও স্বপ্নটা বড়ই রাখতে চান বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম ভরসা হয়ে ওঠা এই ক্রিকেটার।
অন্যরা না পারলেও হৃদয় এই সাহস দেখাতে পারছেন, ২৩ বছর বয়সী ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান যে জানেন শিরোপার স্বাদটা কেমন হয়। ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জেতে বাংলাদেশ, সেই দলের অন্যতম সদস্য তিনি। এবার জাতীয় দলের হয়েও লম্বা সফরের অংশীদার হতে চান তিনি, কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে নিজেদের দেখতে চান শেষ চারে।
ক্রিকেট দলগত খেলা হলেও কিছু ক্রিকেটার থাকেন, যাদের কাঁধে সওয়ার হয় দল। বর্তমান বাংলাদেশ দলে হৃদয় তেমনই একজন। বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানদের রান খরার সময়েও তিনি ব্যাট হাতে উজ্জ্বল। তবে বিশ্বকাপে নিজের নামের পাশে কিছু দেখতে চান না, দলগতভাবে করতে চান উদযাপন, 'এবারের বিশ্বকাপে নিজের নামের পাশে কিছু দেখতে চাই না। আমি চাই দল যেন ভালো করে। আমার জায়গা থেকে অবশ্যই নিজের সেরাটা দিয়ে অবদান রাখার চেষ্টা করব। আমি চাই আমার দল কমপক্ষে সেমি-ফাইনাল খেলুক।'
এবার সেমি-ফাইনালের কথা বললেও হৃদয়ের স্বপ্নের সীমানাটা আরও বড়, যুব দলের মতো জাতীয় দলের হয়েও জিততে চান বিশ্বকাপ। তার ভাষায়, 'চোখ খুলেও এখনও অনুভব করি কী হয়েছিল সেই বিশ্বকাপে (অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ)। এখন আমাদের সময় এসেছে জাতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মতো জায়গায় গিয়ে ভালো করা, কাপ নেওয়া। ভালো করা না, কাপ নিতে চাই। শুধু আমি না, আমরা সবাই চাই। আমরা যদি আমাদের দিক থেকে ভালো করতে পারি, তাহলে বেশি দেরি নেই।'
নিজেদেরসহ পরবর্তী প্রজন্মকে বিশ্ব ক্রিকেটে শক্ত অবস্থান দিতে চান হৃদয়। এ জন্য যে বিশ্বকাপে ভালো করার বিকল্প নেই, তা বুঝতে পারেন তিনি, 'আইসিসি ইভেন্ট জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যখন জিতবো, তখন আমাদের সেভাবেই মূল্যায়ন করা হবে। এখন যেমন বড় বড় দলের খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করা হয়…আমরা যদি দুই-একটি ট্রফি জিততে পারি, তাহলে আমাদের মানসিক সন্তুষ্টি, আত্মবিশ্বাস…আমাদের যে নতুন প্রজন্ম আসবে, তাদেরও ওইভাবে সবাই মূল্যায়ন করবে।'
১৯ বছর বয়সে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিশ্বজয় করেছিলেন হৃদয়রা। সেই দলের অনেকেই এখন জাতীয় দলের সদস্য। হৃদয় ছাড়াও এবারের বিশ্বকাপ দলে আছেন তানজিদ হাসান তামিম, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব। যুব বিশ্বকাপে না থাকলেও রিশাদ হোসেন একই সময়ের। অনেক দিনের এই সতীর্থদের ওপর হৃদয়ের অগাধ আস্থা। যুব দলের সতীর্থরা মিলে জাতীয় দলের হয়েও বিজয় নিশান ওড়াতে চান।
হৃদয় বলেন, 'অনূর্ধ্ব-১৯ দলে যারা ছিল, শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ নয়, এই দলে যারা আছে, মনে হয় যে প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ। সবাই খুবই আক্রমণাত্মক। তামিম (তানজিদ), সাকিব (তানজিম), রিশাদ…যারাই আছে, আমার মনে হয় ওরা এমন খেলোয়াড়, যেকোনো দিন একজন-দুজন খেলার চেহারাটা পরিবর্তন করে দিতে পারে। এদের মধ্যে ওই সামর্থ্য আছে। প্রত্যেকের মধ্যে একটা জেদ আছে। আমরা যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এখানেও তেমন কিছু করব।'