ক্রিকেটারদের ১৬ দফা দাবি, মেনে নেওয়ার আশ্বাস বিসিবির
সরকার বদলের পর থেকে ক্রীড়াঙ্গনে অনেক পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) এসেছে নতুন সভাপতি, নতুন পরিচালকও মনোনীত করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি ফেডারেশনের প্রধানকে অপসারণ করাসহ দেশের সব বিভাগীয়, জেলা ও মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। পরিবর্তনের এই জোয়ারে শামিল হয়ে এবার নিজেদের দাবি দাওয়া তুলে ধরলেন স্থানীয় ক্রিকেটাররা।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে আসেন ৬৪ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রিকেটাররা। বিসিবির কাছে ১৬ দফা দাবর কথা জানান তারা। দাবি সম্পর্কে জেনে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে বেশিরভাগ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিসিবি। স্থানীয় ক্রিকেটারদের বেশিরভাগ দাবি ঘরোয়া ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের উন্নয়নমুখী।
তাদের প্রধান দাবির মধ্যে আছে ঘরোয়া ক্রিকেটের নির্দিষ্ট সময়সূচি, জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রত্যেক বিভাগে দ্বিতীয় সারির আরেকটি দল গঠন করে লিগ আয়োজন করা। এ ছাড়া প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে তিন সংস্করণের লিগসহ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের সেরা ৩০ জন খেলোয়াড়সহ মোট ৯০ জন খেলোয়াড়কে বেতনের আওতায় আনার দাবিও রেখেছেন তারা।
অন্যান্য দাবির মধ্যে আছে, ঢাকা লিগে ক্রিকেটারদের সঙ্গে চুক্তি করার ক্ষেত্রে ক্লাবগুলোকে আরও পেশাদার হওয়া, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত পর্বে ৩ দিনের ক্রিকেট ম্যাচ চালু করা, আম্পায়ারিংয়ের মান উন্নয়ন ও ভালো উইকেট নিশ্চিত করা, দেশের প্রত্যেক জেলায় ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি লিগ ও অনুশীলনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো।
স্থানীয় ক্রিকেটারদের আরও দাবি, বিসিবির বেতনভুক্ত কোচরা যেন কোনো একাডেমিতে কাজ না করেন। এ ছাড়া ঢাকার প্রথম বিভাগ লিগের ম্যাচ অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার, ক্রিকেটারদের অধিকার আদায়ের সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) পুনর্গঠন ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া, রেজিস্টার্ড ক্রিকেটারের চোট পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফায়ার সর্বনিম্ন এন্ট্রি ফিতে সঠিক সময়ে শুরু করা এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের প্লেয়ার্স ড্রাফট উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান ক্রিকেটাররা।
প্রথম বিভাগ লিগের ক্রিকেটার রিয়াজুর বলেন, 'আমরা বিসিবিকে অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথাও বলে এসেছি। এখানে যখন বিপিএল খেলা হয়, তখন একই একাডেমি মাঠে ছয়-সাতটা দল অনুশীলন করে। অথচ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড চাইলে কিন্তু এমন ৫টা একাডেমি করতে দিতে পারে, বিভিন্ন জায়গায়। যদি মাঠের সংখ্যাও বাড়ে, তাহলেও আলহামদুল্লিল্লাহ।'
অনয়িমের কথা উল্লেখ করে রিয়াজুল রিয়াদ বলেন, 'অনেকদিন ধরেই অনিয়ম হয়ে আসছে। যদি বিসিবি আশাবাদ ব্যক্ত করে, তাহলে আমরা আশা করছি দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।' কোয়াব পুনর্গঠন করা নিয়ে আরেক ক্রিকেটার আসাদুজ্জামান বলেন, 'আমরা চাই কোয়াবকে নতুন করে পুনর্গঠন করা হোক। এই কোয়াব আসলে ক্রিকেটারদের অনেক কিছুই জানে না। আমাদের সঙ্গে কখনও কথাও বলেনি। আমরা যখন আমাদের সমস্যাগুলো কোয়াবকে জানিয়ে এসেছি, তখন তারা কোনো সাড়া করতো না। আমরা ৬৪ জেলার যারা এসেছি, সবার একই দাবি, কোয়াব পুনর্গঠন করা হোক।'
ক্রিকেটারদের এসব দাবি যৌক্তিক মনে করেন বিসিবির নতুন পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ এই কোচ বলেছেন, 'তোমাদের যে দাবি আছে, সেটার ব্যাপারে… এখন ক্রিকেট বোর্ড কী করলে আমার লাভ হবে বা তোমার লাভ হবে, সেটা নয়; কী করলে ক্রিকেটের লাভ হবে, সেটা দেখার সময়। সেটার জন্য যা যা করা দরকার, ক্রিকেট বোর্ড সামর্থ্য অনুযায়ী সেই জিনিসটা দেখবে।'
ক্রিকেটকে লাভবান করার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'জেলা ক্রিকেট চালু করা, জেলা পর্যায়ে একটা উইকেট থাকা শুরু করে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর কথা যদি বলি, প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেন সবখানে ন্যায্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মেধা প্রদর্শনের জন্য সবাই যেন সমান সুযোগ পায়, এসব ব্যাপার অবশ্যই ক্রিকেট বোর্ড দেখবে। আমরাও চোখ রাখবো। তোমরা একটা ব্যাপার নিশ্চিন্ত থাকতে পাবো, ক্রিকেট বোর্ড তার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবে। তোমাদের সব দাবি হয়তো এখনই পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে আমাদের ইচ্ছা থাকবে তোমরা তো বটেই, যেন ক্রিকেট লাভবান হয়।'