জৌলুশ ফেরাতে বিপিএলে আনা হতে পারে হলিউড তারকাদের
বিদেশি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ, ক্রিকেটার কিনতে অর্থের ঝনঝনানি, চ্যাম্পিয়নশিপ প্রাইজমানি, সম্প্রচারের মান; সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসর দিয়ে তাক লাকিয়ে দেয় আয়োজকরা। ফ্র্যাঞ্চাইজি সত্ত্ব পাওয়ার লড়াই, ক্রিকেটারদের নিলাম, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও ছিল বিশ্ব মানের।
কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে মানে ভাটা পড়ে, রঙ হারায় বিপিএল। ১০টি আসর ও এক যুগ পরও বিপিএল পড়ে আছে সেই তিমিরেই। ১২ বছরেও বড় হতে পারেনি বিপিএল, বড় হয়ে ওঠেনি অংশ নেওয়া দলগুলোও। উল্টো ফিক্সিংয়ের থাবায় বন্ধ থেকেছে আসরটি, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বকেয়াসহ নানা বিতর্কে জড়িয়েছে বিপিএলের নাম। মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে কখনও কখনও বাইরের বিষয় দিয়েই আলোচনায় থেকেছে বিপিএল।
বিগত সমালোচনা-বিতর্কের অধ্যায় মুছে দিতে এবার নতুন আঙ্গিকে বিপিএল আয়োজন করার চেষ্টায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে নতুন ধারার একটি আসর আয়োজনে প্রত্যয়ী আয়োজকরা। এই চেষ্টায় সরকারকে পাশে পাচ্ছে বিসিবি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অলিম্পিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আয়োজনে ভিন্নতা আনার পরিকল্পনায় দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থা। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও আসরটির জনপ্রিয়তা বাড়াতে কাজ করছে তারা। জৌলুশ ফেরাতে আনা হতে পারে হলিউড তারকাদেরও।
নতুন করে সাজানো সূচি অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর মাঠে গড়াবে বিপিএলের একাদশতম আসর, ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। টুর্নামেন্টটি জাকজমকভাবে আয়োজনে পরিকল্পনা সাজাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং সম্প্রচার স্বত্বাধিকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে বিসিবি। বিপিএলকে দেশের সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে বৈঠকে।
প্যারিস অলিম্পিকের পরিকল্পনায়ে সম্পৃক্ত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিপিএলে ভিন্ন মাত্র যোগ করা যাবে বলে মনে করেন বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। সোমবার মিরপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'এ ধরনের ইভেন্টের সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মানুষকে কীভাবে আরও সম্পৃক্ত করতে হয়, মানুষকে উজ্জীবিত করে অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা যায়, এ বিষয়গুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টার চেয়ে ভালো কেউ জানেন না।'
এবারের আসর দিয়ে বিপিএল বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস নাজমুল আবেদীনের। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগটাকে আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে রূপ দেওয়ার আশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'কীভাবে এটাকে আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টে পরিণত করা যায়, কীভাবে এটাকে ব্র্যান্ড হিসেবে তৈরি করা যায়, কীভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায়…বিশ্ব যেন দেখে বাংলাদেশের তরুণেরা কেমন, বাংলাদেশের সমাজটা কেমন, বাংলাদেশের খাওয়া কেমন…এ জিনিসটা যেন সবাই দেখে। শুধু বিপিএল নয়, বাংলাদেশও একটা ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পাবে এই বিপিএলের পর।'
অতীতে বিপিএলে মঞ্চ মাতিয়েছেন বলিউডের সালমান খান, ঋত্বিক রোশান, জ্যাকলিন ফার্নান্দেজের মতো তারকারা। নিয়ে আসা হয়েছে কেকে, আতিফ আসলামের মতো তারকা সঙ্গীত শিল্পীদের। এবার হলিউড তারকাদেরও উপস্থিতি থাকতে পারে বিপিএলে। এ ছাড়া বিশ্বের নামিদামি ক্রিকেটার, ফুটবলারদেরও দেখা যেতে পারে বলে জানান নাজমুল আবেদীন। বিসিবির এই পরিচালক বলেন, 'আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যদি মাঠে আসেন, একটা বক্তব্য দেন, বিদেশ থেকে দারুণ নামকরা একজন ফুটবলার বা হলিউড থেকে একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী এখানে এসে সংযুক্ত হন, এটা নিশ্চয়ই সারা পৃথিবীর মিডিয়াতে আসবে। আমাদেরও সে চেষ্টা থাকবে।'
বিপিএলের প্রথম আসের ছিল থিম সং, গানটি তৈরি করেন ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পি লাহিড়ি। এরপর আরও ৯টি আসর চলে গেলেও নতুন কোনো থিম সং তৈরি করা হয়নি। এবার নতুন করে থিম সং তৈরি করা হচ্ছে। আসরটিতে এবার প্রথমবারের মতো থাকবে মাসকট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বড় অংশজুড়ে থাকবে কনসার্ট, যেখানে সঙ্গীত পরিবেশনা করতে পারেন পাকিস্তানের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খান। মিরপুরের পাশাপাশি বাকি দুই ভেন্যু সিলেট ও চট্টগ্রামেও আয়োজন করা হবে কনসার্ট।