বিপিএল ফাইনালে টিকেট নিয়ে হাহাকার, কালোবাজারিদের রাজত্ব
দর্শক নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল বিসিবির। কিন্তু করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়্যান্ট ওমিক্রনের সংক্রমণে সেটা হয়নি। দর্শকশূন্য গ্যালারিতে খেলা হয় ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসরটির। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার কমে আসায় প্লে-অফ পর্ব থেকে সীমিত আকারে খোলা হয় মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি।
দুটি কোয়ালিফায়ার ও এক এলিমিনেটর ম্যাচে মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পান কয়েক হাজার দর্শক। তখন থেকেই টিকেট নিয়ে দর্শকদের মাঝে বিপুল আগ্রহ দেখা যায়। তবে সব ছাড়িয়ে গেছে ফাইনালের দিন। শুক্রবার ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মধ্যকার শিরোপা লড়াইয়ের ম্যাচে মিরপুর স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল নেমেছে।
ঢল নামলেও অনেক দর্শককেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। আগের ঘোষণা অনুযায়ী ফাইনালের জন্য ৪ হাজার টিকেট ছাপানো হয়েছে। এই টিকেট আবার সাধারণ দর্শকদের কাছে সরাসরি বিক্রির জন্যও নয়। যে কারণে গ্যালারির চেয়ে স্টেডিয়ামের বাইরেই বেশি দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। মিলেছে কালোবাজারিতে টিকেট বিক্রির প্রমাণও।
যদিও ফাইনালে অংশগ্রহণকারী দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির চাহিদার ভিত্তিতে টিকিট ছাপানো হয় এবং সব টিকেট তাদেরকেই দেওয়া হয়। নিজেদের সমর্থকদের মাঝে সেই টিকেট বণ্টন করার করা দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির। কিন্তু স্টেডিয়ামের বাইরে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।
বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির দেওয়া তথ্য অুনযায়ী নিজেদের সমর্থকদের মাঝে টিকেট বণ্টন করার কথা ফ্র্যাঞ্চাইজির। কিন্তু ম্যাচ শুরুর আগের স্টেডিয়ামের বাইরে টিকেট বিক্রি করতে দেখা গেছে কালোবাজারিদের। ১৫০ টাকার একেকটি টিকেটের দাম হাঁকানো হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। অনেকেই এই মূল্যে টিকেট কিনে মাঠে প্রবেশ করেছেন।
কালোবাজারিদের হাতে কীভাবে টিকেট গেল? প্রশ্নটি করা হলো টিকেট বিক্রি করছিলেন এমন একজনকে। উত্তরে তিনি বললেন, 'বিসিবির কাছ থেকেই টিকেট কিনেছি। বিসিবি বিক্রি না করলে আমরা কোত্থেকে টিকেট পাবো। কিছু টিকেট কিনেছি, বেশি দামে না বিক্রি করলে এই কষ্টটাই তো উঠবে না।'
টিকেট কেটে খেলা দেখা যাবে, এমন তথ্য পেয়ে অনেকেই স্টেডিয়ামে হাজির হন। কিন্তু স্টেডিয়ামে এসে হতাশ হতে হয়েছে তাদের। টিকেট কেনার কোনো ব্যবস্থাই যে নেই! এক কলেজ ছাত্র বলছিলেন, 'শুনেছি টিকেট কেনা যাবে। এ কারণে এসেছি। কিন্তু টিকেট কেনার বুথ পেলাম না। একটু পর দেখি কালোবাজারিরা টিকেট বিক্রি করছে। কিন্তু তারা অনেক দাম চাচ্ছে, এতো টাকা নিয়ে তো আসিনি।'
টিকেটের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে দেখা গেছে শত শত মানুষকে। স্টেডিয়ামের প্রায় প্রতিটি গেটের সামনেই জটলা পেঁকে ছিল। এর মধ্যে এক দর্শক অভিযোগ করেই বললেন, 'আমরা যারা ক্রিকেট খেলা দেখি, তারাই টিকেট পাচ্ছি না। তাহলে কালোবাজারিদের হাতে কীভাবে টিকেট গেল। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নিশ্চয়ই তাদের কাছে টিকেট বিক্রি করেনি। বুঝতে পারছি না কীভাবে টিকেট বিক্রি করা হয়েছে।'
টিকেট কালোবাজারির পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে বেশি দর্শক প্রবেশ করানোরও। চার হাজার টিকেট বিক্রির কথা বলা হলেও গ্যালারিতে এর চেয়ে অনেক বেশি দর্শকের উপস্থিতি দেখা গেছে। ৬টার মধ্যে মাঠে প্রবেশ করা দর্শকের সংখ্যা অন্তত ৮-৯ হাজার হবে। বিষয়টি নিয়ে বিসিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।