ব্যাংকগুলোকে আর টাকা দেব না: অর্থমন্ত্রী
রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে সরকারি কোষাগার থেকে আর কোনো মূলধন দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রোববার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলনকক্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে অর্থমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে এত দিন টাকা দেওয়া হলেও এখন তাদের আয় করতে হবে। দেশের মানুষকে দেখাশোনা করেই বেতন নিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছরে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারি কোষাগার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো নিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন যে, আগামীতে খেলাপি ঋণ এক টাকাও আর বাড়বে না। কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকায়। শুধু, গত ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, এরপরও যে খেলাপি ঋণ বেড়েছে, একে তিনি তাঁর বলে ব্যর্থতা স্বীকার করবেন কি না?
জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “যদি বলেন বেড়েছে, আমি স্বীকার করব না। আমি চাই আপনারাও স্বীকার করেন যে এটা বাড়েনি।”
দেশে খেলাপি ঋণ এখনই কমার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “নন-পারফর্মিং লোন (খেলাপি ঋণ) আমাদের এখানে কমার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, নন-পারফর্মিং লোন কমানোর জন্য যে এক্সিট প্ল্যান দিয়েছিলাম, সেটা এখনও কার্যকর করতে পারি নাই। সরকার সেই এক্সিট প্ল্যানটি দ্রুত কার্যকর করার চেষ্টা করছে। এটি কার্যকর হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমতে থাকবে এবং ব্যবসায়ীরাও এ থেকে উপকৃত হবেন।“
সুদের হার এক অঙ্কে নামানোর বিষয়ে কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। বাজার অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিয়ে এভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করানো যায় কি না, জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “বাজার অর্থনীতির বড় প্রবক্তা হল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? যুক্তরাষ্ট্রও জরুরি প্রয়োজনে ডলার ছাপিয়েছে। এটা তাহলে কোন বাজার অর্থনীতির মধ্যে পড়ে?”
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, জনতা এবং অগ্রণী এই চারটি ব্যাংক চাইলেই দেশের ব্যাংক খাতকে বেগবান রাখতে পারে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা সোনালী, রূপালী, জনতা এবং অগ্রণী ব্যাংককে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা অনেক বড়। তাদের যে এক্সারসাইজ, তাদের যে অবস্থান ব্যাংকিং খাতে; এই চারটি ব্যাংক চাইলেই সার্বিকভাবে আমাদের ব্যাংকিং খাতকে বেগবান রাখতে পারে। তারা আমাদেরকে একটি কর্মপরিকল্পনা দেবেন। কীভাবে এই ব্যাংক খাতকে আরও শক্তিশালী করা যায়। আরও বেগবান করা যায়। এ বিষয়ে আজকে তারা আমাদেরকে অবহিত করবেন। এ জন্য আজ আমরা এখানে বসেছি।”