উচ্ছিষ্ট থেকে রান্নার উপাদান, কলার খোসার বিভিন্ন পদ নিয়ে রন্ধনশিল্পে নতুন উত্তেজনা
গত নভেম্বরে বিবিসির টেলিভিশন পর্দায় নতুন রেসিপির কলাকৌশল নিয়ে হাজির হন ব্রিটিশ রন্ধনশিল্পী এবং লেখিকা নাইজেলা লাউসন। নিজের লেখা রান্নার বই "কুক, ইট, রিপিট" থেকে একই নামের টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি নতুন ধারার একটি রান্না উপস্থাপন করেন। কিন্তু নাইজেলার নতুন এই রেসিপি নিয়ে মুহূর্তেই চারদিকে বেধে যায় হইচই। মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হতে পারে বড় কোনো কেলেঙ্কারির সৃষ্টি করেছেন এই রন্ধনশিল্পী।
তবে, সব কিছুর পেছনে দায়ী আসলে কলার খোসা। কলার খোসার সাথে ফুলকপি মিলিয়ে সুগন্ধি একটি পদ রান্না করেছিলেন নাইজেলা। আর তাতেই যত গণ্ডগোলের সৃষ্টি।
মেইলে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নাইজেলা লিখেন, "আমি এটা নিয়ে মোটেও কোনো পত্রিকার শিরোনাম আশা করিনি। কোন জিনিস খাওয়া যাবে, আর কোন জিনিস খাওয়া যাবে না- এই সাংস্কৃতিক ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে আসা আসলে কঠিন। বিশেষত, আমরা যখন প্রথাগতভাবে কোনোকিছু উচ্ছিষ্ট হিসেবে ধরে নেই।"
কয়েক মাস আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক ব্রিটিশ রন্ধন তারকা নাদিয়া হুসাইন লকডাউনের সময় 'গুড মর্নিং ব্রিটেন' অনুষ্ঠানের রান্না বিষয়ক অংশে হাজির হন। খাদ্য অপচয় রোধ করতে তিনি পরিত্যক্ত অংশ কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, "সবাই কলার রুটি বা বেনানা ব্রেড বানায়। খোসাগুলো আপনারা ফেলে দিবেন না। বারবিকিউ সসের সাথে সামান্য পেঁয়াজ এবং রসুন দিয়ে তা রান্না করুন। ব্যস, এবার বার্গারের মধ্যে নিয়ে সেটা খান। ঝুরা মাংসের মতোই স্বাদ পাবেন।"
লাউসনের অনুষ্ঠান প্রচারিত হওয়ার পরপরই নাদিয়ার বক্তব্য নতুন করে সামনে আসে। সেই সাথে কলার খোসা নিয়ে রন্ধন বিষয়ক এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট তাদের শিরোনামে লিখে- 'কলার খোসার রেসিপি দিয়ে দর্শকদের চমকে দিলেন নাইজেলা লাউসন'। দ্য গার্ডিয়ান শিরোনাম করে- 'কলার খোসা কি তবে আবশ্যক খাদ্য উপাদানে পরিণত হতে চলেছে?"
রন্ধনশিল্পী নাদিয়া হুসাইনের বাবা-মা বাংলাদেশি। নাদিয়ার বাবা একজন প্রাক্তন শেফ এবং রেস্টুরেন্ট মালিক। খোসা রান্নার সাথে নাদিয়াকে পরিচিত করান তার বাবা। বাঙালি রান্নায় কাঁচা খোসা নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করা হয়। পরবর্তীতে, রসুন, কাঁচা মরিচ এবং অন্যান্য মশলা দিয়ে কষানো হয় এই খোসা।
'দ্য কেরালা কিচেনে'র লেখিকা লতিকা জর্জ বলেন, "পুরো ভারতজুড়েই বিভিন্ন ধরনের কলা উৎপাদিত হয়। কলা গাছের ফুল, ফল এমনকি গাছের কাণ্ড দিয়ে পর্যন্ত বিভিন্ন রান্না করা হয়।"
ভারতের কেরালা রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লতিকার জন্ম। কেরালার বিখ্যাত থোরান রান্নায় সাধারণত কলার খোসা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। থোরান এক ধরনের ভাজি। বিভিন্ন সবজি দিয়ে থোরান রান্না করা যায়। কলার খোসার থোরান রান্নার ক্ষেত্রে কাঁচা কলার খোসাগুলোকে প্রথমে গুঁড়া মশলাসহ সামান্য পানিতে সিদ্ধ করে নেওয়া হয়। এরপর কোরা নারকেলের সাথে অন্যান্য মশলা হালকা ভেজে ফোঁড়ন হিসেবে যুক্ত করে রান্না করা হয় থোরান।
লতিকা বলেন, "কাঁচা কলার খোসা এবং ফল সবজির মতো। কাঁচা কলা কোপ্তা, কাটলেট এবং সবজির তরকারি রান্নাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।"
ভারতবর্ষের উত্তরাঞ্চলের দিকে গেলে পাকা কলার খোসার পদ দেখতে পাওয়া যাবে বলে জানান লতিকা। ভারতের উত্তরপূর্ব অংশের আসামে পাকা কলার খোসা দিয়ে রান্না করা একটি জনপ্রিয় পদ হলো খার। কলার স্থানীয় একটি প্রকরণের খোসা রোদে শুকিয়ে এই রান্না করা হয়।
"ব্যক্তিগতভাবে আমার বিষয়টিকে সাময়িক উত্তেজনা বলে মনে হয়। বিশেষত, আপনি যদি নিরামিষাশী হিসেবে ভিন্ন পদের সন্ধান করে থাকেন," বলেন লতিকা।
তবে, নিরামিশাষীদের মধ্যে কলার খোসার পদ আগে থেকেই জনপ্রিয়। ২০১৯ সালে অনলাইনে মাংসের পরিবর্তে কলার খোসা ব্যবহার করে রান্নার একটি রেসিপি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই বিষয়টি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস