করোনাভাইরাসের কালে ঘরে বসেই বিশ্বভ্রমণ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কবলে বন্দী পুরো বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে বিমান সংস্থাগুলো। দেশগুলো তাদের সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে এবং প্রত্যেককে বাড়ির ভিতরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
করোনা ভাইরাসের এই আক্রমণ আমাদের চলাচল সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে, সত্য। তবে এটি আমাদের কল্পনাকে তো আর আটকে রাখতে পারে না। আর তাই তো ঘরে বসেই বিশ্বভ্রমণের উপায় বের করে ফেলেছে মানুষ। বিশ্বের এমন ১০টি স্থান আছে যেগুলো ঘরে বসেই সফর করে আসতে পারবেন আপনি। অবশ্যই ওয়েবক্যাম আর লাইভস্ট্রিমের কল্যাণে। গুগল আই, এক্সপ্লোর.অর্গ এর মতো ওয়েবসাইটগুলো সেই সুযোগ দিচ্ছে আপনাকে।
১। দক্ষিণ আফ্রিকার হাতি
আফ্রিকা-মোজাম্বিক সীমান্তের কাছে টেম্বে এলিফ্যান্ট পার্কে এদের বাস। বিশ্বের মাটিতে চড়ে বেড়ানো বৃহত্তম প্রাণীগুলোর একটি এই আফ্রিকান হাতি। পার্কের কাছেই এক পানির নালা আছে যেখানে পানি পান করতে আসে এরা।
আর শুধু হাতিই নয়, এই পানির নালার কাছে চিতাবাঘ, সিংহ, গণ্ডার এবং মহিষের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন আপনি। আর মাঝে মাঝে যেসব বল্গা হরিণ দেখবেন আপনি, এরা হলো সুনিস।
আর এই বন্যরূপের লাইভস্ট্রিম করছে Explore.org।
২। টাইমস স্কয়ার, নিউইয়র্ক সিটি
ম্যানহ্যাটনের একেবারে বুকের মাঝখানে বসানো এই টাইমস স্কয়ার। অন্যান্য সময়গুলোতে বিশ্বের ব্যস্ততম স্থানগুলোর একটি এই স্কয়ার। কিন্তু এই শহরে ৫৫ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর তারপর থেকেই নীরব এই আলো ঝলমলে শহর।
এত আলো দেখবার কেউ নেই, শোরুমগুলোতে সাজানো হাল নকশার সব কাপড়-জামা, কিন্তু কিনবার কেউ নেই। টাইমস স্কয়ারের বড় আলো ঝলমলে বিলবোর্ডগুলোতে এমন সব অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন যেখানে কেউ যেতে পারবে না।
৩। ল্যাপল্যান্ড
এটি সর্বাধিক দূরবর্তী লাইভ স্ট্রিমের জন্য পুরস্কার জিতে পারে - আর্কটিক সার্কেলের উপরে, উত্তর ফিনল্যান্ডের গভীর তুষার থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ফুটেজ দেখতে পাবেন আপনি।
সাধারণত, উত্তর ফিনল্যান্ডের পৌরাণিক কাহিনী এবং এর রহস্যময় এলফ দেখতে কঙ্গাসের ছোট্ট অরণ্যযুক্ত গ্রামটিতে পর্যটকরা বেড়াতে আসতেন।
তবে আজকাল, স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি শান্তিপূর্ণ গ্রামটি।
৪। থাইল্যান্ডের সমুদ্র সৈকত
আপনি যদি প্রতিদিন একটি অসাধারণ সূর্যাস্তের সঙ্গে দিন শেষ করতে চান তবে এই লাইভস্ট্রিমটি এক্কেবারে আপনার জন্যই।
থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপের নির্জন সাদা সমুদ্র সৈকত থেকে করা এই লাইভফিড। এর সামনে বসে আপনার সামাজিক দূরত্বও শান্তির মনে হবে।
সেখানে সূর্য আজকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অস্ত যায়।
৫। উত্তরের অরোরা
করোনাভাইরাস প্রকৃতির ভয়ানক আক্রমণাত্মক রূপ হতে পারে, কিন্তু উত্তর আকাশের অরোরা দেখে প্রকৃতির সবচেয়ে শান্ত রূপটা দেখেও মুগ্ধ হবেন আপনি।
এই লাইভ ফিডটি কানাডার ম্যানিটোবা প্রদেশ থেকে আসে। আপনি যদি রাত্রিবেলা কখনো সেখানে যান তাহলে এই অপরূপ অরোরা বোরেলিস দেখতে পাবেন। মূলত আমাদের গ্রহের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রটি সূর্যের চার্জযুক্ত কণার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে বলেই এই আলোর প্রবাহ দেখা যায়।
আমরা এখন মূল উত্তরের আলোর মরসুমের বাইরে রয়েছি, তবে এখনও এটি বেশ দর্শনীয়। গত বৃহস্পতিবারও আকাশে সবুজ রঙের ঘূর্ণি দেখা গেছে।
৬। ভেনিস
বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ইতালির জলনগরী ভেনিস। বর্তমান বিশ্বে করোনা ভাইরাসে সবচাইতে ভয়াবহ অবস্থা ইতালির। গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে লকডাউনে আছে দেশটি।
আর এর ফলেই শান্ত স্থির ভেনিসের খাল, রাস্তা-ঘাট সব। আর এতই স্থির যে পানি আগের চাইতে অনেক পরিষ্কার আর নীল।
৭। আফ্রিকার গরিলা
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বে গ্রেস গরিলা সংরক্ষণ কেন্দ্রে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই এই লাইভস্ট্রিম দেখতে পারবেন আপনি।
গরিলারা কি করে, সবচেয়ে কি করতে ভালোবাসে- সবই দেখতে পাবেন আপনি।
এই সংরক্ষণ কেন্দ্রে ৩০০টি পূর্বাঞ্চলের নিম্নভূমির গরিলা বাস করে, যা বিশ্বের প্রায় ৮%। আর ক্যামেরায় এদের কোনো একজনের দেখা আপনি পেয়েই যাবেন। এই লাইভস্ট্রিমটি পরিচালনা করে Explore.org।
৮। টোকিও
নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের মতোই, জাপানের রাজধানী শিবুয়া ক্রসিং বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম মোড়গুলোর একটি। এই মুহূর্তে অনেক শান্ত, কিন্তু নির্জন নয়। মানুষ চলাচল করছে। লাইভফিডে দেখবেন, লোকেরা একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে।
৯। নরওয়ের ট্রেন ভ্রমণ
সত্যি বলতে কি, এটি সরাসরি সম্প্রচার নয়, বরং আগে থেকে রেকর্ড করা ভিডিওর সিরিজ। নরওয়ের বার্গেন আর অসলোর মধ্যে একটি ট্রেন যাত্রা রেকর্ড করা।
সর্পিলাকার রেলপথে যেতে যেতে তুষারাবৃত পথ, অরণ্য, হ্রদ দেখে অবিশ্বাস্যরকম শান্ত মনে হবে আপনার।
১০। মহাশূন্য
এটি সম্ভবত এগুলোর মধ্যে সবচাইতে দর্শনীয় লাইভ স্ট্রিম। এটি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে আসে, যা আমাদের মাথার উপরে ঘন্টায় প্রায় ১৭ হাজার মাইল (২৭,৩০০ কিলোমিটার/ঘন্টা) বেগে ভ্রমণ করছে, পরিষ্কার মেঘমুক্ত আকাশে হয়তো আপনি দেখে থাকতে পারেন।
প্রতি ৪৫ মিনিটে একটি করে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মুখোমুখি হবেন আপনি! তথন মনে হবে 'আমি কোন দেশ থেকে কোন দেশে উড়ে চলেছি?'
যখন স্পেস স্টেশনটি পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, লাইভ ফিডটি কেবল তখনই পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে সিগন্যালে সমস্যা হয়, তবে তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে না।